মিয়ানমার কি পারমাণবিক অস্ত্র সক্ষমতা অর্জন করতে যাচ্ছে?

  বিশেষ প্রতিনিধি    12-10-2022    154
মিয়ানমার কি পারমাণবিক অস্ত্র সক্ষমতা অর্জন করতে যাচ্ছে?

২০০২ সালের শুরুর দিকে পারমাণবিক প্রযুক্তি অর্জনে কাজ শুরু করে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা। দুই দশক পরে দেশটিতে একটি ছোট আকারের পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই এর কাজ শুরু হবে। সামরিক জান্তার দাবি, মিয়ানমারে পারমাণবিক শক্তি শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হবে। তবে অনেকে বিশ্বাস করেন, পারমাণবিক অস্ত্র উৎপাদনসহ সামরিক উদ্দেশ্যে পারমাণবিক শক্তি ব্যবহার করার পরিকল্পনার প্রথম পদক্ষেপ এটি। মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম ইরাবতি সামরিক জান্তার পারমাণবিক লক্ষ্য অর্জন নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাতে বলা হয়েছে, ২০০০ সালের জুলাই মাসে মিয়ানমারে প্রস্তাবিত পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্র নির্মাণের বিষয়ে রাশিয়া ও মিয়ানমার মস্কোতে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। এর দুই বছর পর অর্থাৎ ২০০৪ সালের এপ্রিলে মার্কিন সিনেটর রিচার্ড লুগারের একজন সহযোগী কিথ লুস প্রশ্ন তোলেন, মিয়ানমারকে উত্তর কোরিয়া পারমাণবিক প্রযুক্তি প্রদান করছে কিনা তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। ওই বছরেরই সেপ্টেম্বরে মিয়ানমার থেকে প্রায় ৪০০ তরুণ সামরিক অফিসার রাশিয়ায় গিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ পারমাণবিক প্রকৌশল নিয়ে পড়াশোনা করবে বলে জানানো হয়েছিল। ২০০৮ সালের নভেম্বরে তৎকালীন জান্তার তিন নম্বর শীর্ষ কর্মকর্তা থুরা শোয়ে মানের নেতৃত্বে একটি ১৭ সদস্যের উচ্চপর্যায়ের সামরিক প্রতিনিধি দল বেইজিং হয়ে পিয়ংইয়ংয়ে সাত দিনের গোপন সফরে যায়। এই সময় উভয় পক্ষ সামরিক সহযোগিতাকে আরও জোরদারের জন্য চুক্তি স্বাক্ষর করে। থুরা শোয়ে মান ও প্রতিনিধিদল উত্তর কোরিয়ার মায়োহায়াং এলাকা পরিদর্শন করেন। ওই পাহাড়ি এলাকাটিতে উত্তর কোরিয়ার যুদ্ধবিমান, ক্ষেপণাস্ত্র, ট্যাংক, এবং পারমাণবিক ও রাসায়নিক অস্ত্র সংরক্ষণের জন্য গোপন সুড়ঙ্গ তৈরি করা হয়েছে। এই সফর মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করে। ২০১০ সালে রাশিয়া থেকে মিয়ানমারের সামরিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কর্মশালার ইঞ্জিনিয়ার মেজর সাই থেইন উইন বেশ কিছু ছবি প্রকাশ করেন। তাতে দেখায় যায়, রাশিয়ায় মিয়ানমারের সেনা কর্মকর্তারা পারমাণবিক প্রযুক্তি নিয়ে পড়াশোনা করছেন। এছাড়া উত্তর কোরিয়ার প্রযুক্তিগত সহায়তায় পারমাণবিক অস্ত্র নিয়েও তারা গবেষণা করছেন বলে কিছু ছবিতে দেখা গেছে। ২০১২ সালে আধা-বেসামরিক সরকারের আমালে শোয়ে মান দাবি করেন, উত্তর কোরিয়ায় যে প্রতিনিধিদলটি গিয়েছিল তারা বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করেছে এবং দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে সহযোগিতার জন্য একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে। পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে কোনো আলোচনা তাদের এজেন্ডায় ছিল না। গত সেপ্টেম্বরে মিয়ানমার জান্তা এবং রাশিয়ার সরকারি মালিকানাধীন পারমাণবিক প্রতিষ্ঠান রোসাটম মিয়ানমারে একটি মডিউলার চুল্লি প্রকল্পের সম্ভাব্য বাস্তবায়ন সহ আরও পারমাণবিক শক্তি সহযোগিতার জন্য একটি রোডম্যাপে স্বাক্ষর করেছে। রাশিয়ার ভ্লাদিভোস্টকে ইস্টার্ন ইকোনমিক ফোরামের বৈঠকের ফাঁকে চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়। সেখানে জান্তা প্রধান মিন অং হ্লাইং উপস্থিত ছিলেন। মিয়ানমার থেকে সরাসরি পারমাণবিক হুমকি দীর্ঘমেয়াদে পুরো অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করে তুলবে। যদি পারমাণবিক প্রতিরোধ কাজ করে, তবে এই অঞ্চলে অস্ত্র প্রতিযোগিতা অবশ্যই আবশ্যক। মিয়ানমারের এই বিপজ্জনক উচ্চাকাঙ্ক্ষা এই অঞ্চলের সকল স্টেকহোল্ডারের কাছ থেকে শিথিলতা নেবে। পশ্চিমাদের উচিত সব আঞ্চলিক দেশ এবং আসিয়ানের সাথে যোগ দিয়ে মিয়ানমারকে তার পারমাণবিক (অস্ত্র) উচ্চাকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করার জন্য চাপ দেওয়া। তাদের ইরানের মামলার মতো পদক্ষেপ নিতে হবে, অন্যথায়, বিশ্ব দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলে আরেকটি পারমাণবিক হুমকি দেখতে চলেছে। বৃহস্পতিবার ইউরোএশিয়া নিউজে প্রকাশিত এক নিবন্ধে বলা হয়েছে, ‘মিয়ানমারের কাছ থেকে সরাসরি পারমাণবিক হুমকি দীর্ঘমেয়াদে পুরো অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করে তুলবে। …পশ্চিমাদের উচিত সব আঞ্চলিক দেশ এবং আসিয়ানের সাথে যোগ দিয়ে মিয়ানমারকে তার পারমাণবিক (অস্ত্র) উচ্চাকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করার জন্য চাপ দেওয়া। তাদের বিরুদ্ধে ইরানের মতো পদক্ষেপ নিতে হবে, আর তা-না হলে বিশ্ব দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলে আরেকটি পারমাণবিক হুমকি দেখতে চলেছে।

আন্তর্জাতিক-এর আরও খবর