মানুষের গায়ে হাত দিলে ক্ষমা নেই: প্রধানমন্ত্রী

  বিশেষ প্রতিনিধি    06-11-2022    179
মানুষের গায়ে হাত দিলে ক্ষমা নেই: প্রধানমন্ত্রী

মানুষের গায়ে হাত দিলে ক্ষমা করা হবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, কেউ রাজনীতি করতে চাইলে সুষ্ঠু রাজনীতি করুক। আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু সাধারণ মানুষের গায়ে কেউ হাত দিলে তাদের রক্ষা নেই। এটা সহ্য করা যায় না। কোনও মানুষ সহ্য করতে পারবে না।

আওয়ামী লীগ আয়োজিত ‘অগ্নি সন্ত্রাসের আর্তনাদ: বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের খণ্ডচিত্র’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তনে এই অনুষ্ঠান হয়।

ভবিষ্যতে অগ্নিসন্ত্রাসের মতো ঘটনা যাতে না ঘটে এ জন্য দেশবাসীকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এই ধরনের ঘটনা যাতে ভবিষ্যতে কেউ ঘটাতে না পারে। দলমত নির্বিশেষে যেই হোক।

অগ্নি সন্ত্রাস প্রতিরোধে আওয়ামী লীগ আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাঅগ্নি সন্ত্রাস প্রতিরোধে আওয়ামী লীগ আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

যারা ধ্বংসাত্মক কাজ করতে পারে ও কষ্ট দিতে পারে, তাদের পাশে মানুষ কীভাবে দাঁড়ায় সেই প্রশ্ন করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমি জানি না মানুষ আবার এদের পাশে কীভাবে দাঁড়ায়? কীভাবে সমর্থন করে?

বাংলাদেশে বিশৃঙ্খলা চান না বলে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, আমরা শান্তি চাই। দেশের উন্নতি ও মানুষের কল্যাণ চাই। দেশের প্রত্যেকটা মানুষের স্বাধীনভাবে বাঁচার অধিকার আছে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেই অধিকার সংরক্ষণ করার চেষ্টা আমরা করে যাচ্ছি।

সরকার উৎখাতের নামে ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালে অগ্নিসন্ত্রাস হয়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, কীভাবে মানুষ মারে? একটা গাড়িতে যাচ্ছে জীবন্ত মানুষগুলো। সেখানে আগুন ধরিয়ে মানুষকে হত্যা করা। কীভাবে মানুষ পারে মানুষের ক্ষতি করতে? এটাই নাকি আন্দোলন! এই আন্দোলন তো আমরা কখনও দেখিনি।

অগ্নি সন্ত্রাসের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাঅগ্নি সন্ত্রাসের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

স্কুলজীবন থেকে আন্দোলন করেছেন বলে জানান শেখ হাসিনা। সামরিক শাসক আইয়ুব খান, ইয়াহিয়া খান ও জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে আন্দোলনের রাজপথে থাকার কথা তুলে ধরেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা তো এই কথা কখনও স্বপ্নেও ভাবিনি। পেট্রোলবোমা দিয়ে অথবা অগ্নিসন্ত্রাস করে সাধারণ মানুষকে হত্যা করে। সেটা আন্দোলন!

সরকারপ্রধান বলেন, বিএনপি ঘোষণা দিলো অবরোধ এবং হরতাল। কিন্তু কাজ হলো মানুষকে হত্যা করা। আজ এখানে যারা উপস্থিত তারা তো সামান্য কয়েকজন। ২০১৩ সালের তিন হাজার ৬০০ জমের মতো মানুষকে পেট্রোলবোমা মেরে আহত করেছে। ২০১৪ ও ১৫ সালেও করেছে। একইভাবে গাড়ি পুড়িয়ে মানুষের জীবন-জীবিকা শেষ করে দিয়েছিল। এটা কী রকম আন্দোলন। সেটাও জানি না।

আন্দোলন, মানুষের অধিকার ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে মানুষকে নিয়েই তো আন্দোলন করতে হয় বলে জানান আওয়ামী লীগ সভাপতি। তিনি বলেন, কিন্তু তারা আক্রমণ চালিয়েছে।

অগ্নি সন্ত্রাসের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাঅগ্নি সন্ত্রাসের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

২০১৩ সালে আন্দোলনের নাম বিএনপি মানুষ খুন করা শুরু করেছিল বলে দাবি করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। প্রায় ৫শ’ জন মানুষ আগুনে পুড়ে মারা গেছে এবং সাড়ে তিন হাজার মানুষ আহত হয়েছিল বলে জানান তিনি।

অগ্নিসন্ত্রাসে নিহতদের স্বজন ও আহতদের বক্তব্য দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষের কান্না, যন্ত্রণা ও বেদনা আজ দেখেছেন। আমি স্বজনহারা, একদিনে বাবা, মা, ভাই সব হারিয়েছিলাম। এদের কষ্টটা আমি উপলব্ধি করতে পারি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি তাদের পাশে দাঁড়াতে। চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা যতটুকু পারি করেছি। কিন্তু যে মানুষগুলো আপনজন হারিয়েছে, তাদের ব্যথা, কষ্ট ও বেদনা তো দূর করা সম্ভব না। আগুনে পুড়ে অনেকের স্বপ্ন-আকাঙ্ক্ষা শেষ হয়ে গিয়েছিল বলে জানান তিনি।

দেশবাসীর উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওই দুঃসময়ের কথা যেন কেউ ভুলে না যায়।

আওয়ামী লীগ সরকার পরিচালনার পর থেকে দেশে স্থিতিশীলতা এসেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নতি যতটুকু সম্ভব আমরা করে যাচ্ছি। যেটুকু কাজ করে যাচ্ছি মানবকল্যাণে। কিন্তু তারই মাঝে এই ধরনের আঘাত চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন করা।

অগ্নিসন্ত্রাসী ও তার মদতদাতাদের বিচার এমনিই হচ্ছে দাবি করে তিনি বলেন, বিচার বোধহয় আল্লাহর তরফ থেকেই হবে। হয়তো প্রত্যেক মামলার বিচার চলছে না। কিন্তু যারা অগ্নিসন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে মামলা আছে। বিচারের কাজ চলছে। অনেকই শাস্তি পাচ্ছে। ভবিষ্যতেও পাবে। কিন্তু যারা হুকুমদাত্রী বা হুকুমদাতা তাদের কথাও আপনারা ভেবে দেখেন।

অগ্নি সন্ত্রাস প্রতিরোধে আওয়ামী লীগ আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাঅগ্নি সন্ত্রাস প্রতিরোধে আওয়ামী লীগ আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

অগ্নিসন্ত্রাসে নিহতদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর পাশাপাশি আহতদের জন্য সাধ্যমতো কাজ করে যাবেন বলেও জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, এটাই আমার দায়িত্ব। কত যে লাশ টানতে হয়েছে। কত মানুষকে সহযোগিতা করতে হয়েছে। কত মানুষের যে চিকিৎসা দিতে হয়েছে তার শেষ নাই।

অনুষ্ঠানের শুরুতে ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট কর্মসূচির নামে আগুন-সন্ত্রাস করেছিল দাবি করে সেসব ঘটনার ভিডিওচিত্র তুলে ধরা হয়। পরে শেখ হাসিনা ওইসব ঘটনায় অগ্নিদগ্ধ ও মারা যাওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেন। অনেক তাদের কষ্টের কথা বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন। এসময় তাদের সমবেদনা জানান তিনি।

সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন আহত ও মৃত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্য এবং পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে সামরিক আদালতে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত বিমান বাহিনীর সদস্যের স্বজনরা।

অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা, মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা ছাড়াও বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন কূটনৈতিক মিশনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

জাতীয়-এর আরও খবর