(ষষ্ঠদশ অংশ)
দুই বছর পরের কথা। একটু একটু করে রবিনের ব্যাবসা অনেক বড় হলো। আজ সে গার্মেন্টস মালিক, বড় ধরনের রেস্টুরেন্ট ব্যবসাও আছে তার। নিজের আলিশান অফিসে বসে রবিন মনে মনে বলে, হায়রে টাকা! সময়কালে এলি না। এমন সময় এসেছিস যখন আমার টাকা খরচ করার কোন পথ নেই। এই টাকার জন্যে আমার মায়ের চিকিৎসা করাতে পারিনি। আমার মা চলে গেল পৃথিবী ছেড়ে আমায় একা করে। মানুষের টাকা হলেও পিছনের দুঃখের কথা ঠিকই মনে পড়ে যায়। ছিলাম বাবার কাছে অবহেলার পাত্র, করলেন বাবা তার স্নেহ থেকে বঞ্চিত। মা গো, মা তুমি কি আমায় দেখতে পাচ্ছো? দেখো আজ তোমার ছেলের কত টাকা! ফিরে এসো মা, তুমি ফিরে এসো। হাসি আনন্দে আর কি তোমার সাথে কাটাতে পারব না? সে ভাগ্য আর তো হবে না এ জনমে, না হোক পরজনমে হবে মা। এ টাকা ছিল না বলে আমার ভালোবাসার মানুষকে হারাতে হয়েছে। তার বাবা দিলো না আমার সাথে মেয়ের বিয়ে। এত টাকা দিয়ে আমি কী করবো, রাখবো কোথায়? মানুষ মানুষের মন দেখে না, দেখে শুধু টাকা আছে কিনা। টাকা তো হলো সবকিছু হারিয়ে। আজ আমার কত কী হয়েছে— রবিন গার্মেন্টস, রবিন রেস্টুরেন্ট। রেমা, তোমার বাবা যে সুখ দেখে তোমায় বিয়ে দিয়েছে সেখানে নিশ্চয় তুমি অনেক সুখে আছো। সুখ, শান্তি আর সমৃদ্ধিতে ভরে থাক তোমার জীবন এই আমার প্রিয়তমার জন্যে শুভকামনা। তোমার জন্যে নিরন্তর ভালোবাসা।
দীর্ঘদিন যাবত রেমা হাসপাতালে। অনা মাঝে মাঝে রাতে এসে রেমার কাছে থাকে। একদিন অনার বাসায় তার বিয়ের কথা ওঠে। খুব তাড়াতাড়ি অনার বিয়ে হয়ে যাবে। বিষয়টি রেমার মাকে জানায়। অনা বলল, খালাম্মা— আপনার এই অবস্থা, অথচ আমি আর এখন রেমার কাছে থাকতে পারব না। আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে। অহনা অনার মাথায় হাত বুলিয়ে দোয়া করে। বলে, মা তুমি রেমার জন্যে অনেক করেছো, কোন বোনও বোনের জন্যে এত করে না।
খালাম্মা, আপনি একথা বলছেন কেন? রেমা তো আমার বান্ধবী। আমি ওদের দুজনকে কথা দিয়েছিলাম, বন্ধু হয়ে থাকব পাশে।
মারে কথার দাম কজনেই বা রাখে? রেমার কথার দাম তো আমরা দিতে পারিনি। তাই তো আজ আমরা এ পরিস্থিতির শিকার। ওর কথার দাম দিলে তো আজ এমন হতো না। তুমি যখন আর আসতে পারবে না এখন আমি আমার বোনকে খবর দিয়ে দেখি।
খালাম্মা, আমি সময় সুযোগ বুঝে আপনাকে আর রেমাকে দেখে যাবো।
এসো মা, দোয়া করি তোমার নতুন জীবন নিয়ে তুমি সুখী হও।
আজ রেমা সুস্থ থাকলে আমার বিয়েতে কত আনন্দ করতো!
মারে এসব কথা বলো না আমার কাছে।
খালাম্মা আমি তাহলে আসি, রেমার সাথেও একটু দেখা করবো।
এসো মা, শুভকামনা রইল তোমার জন্যে।
অনা রেমার কাছে গিয়ে দু হাত দিয়ে রেমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদল। বলল, আমি আর আসতে পারব না তোকে দেখতে যখন তখন। হবে না তোর আর আমার দেখা আগের মতো। কী বলবো আমি তোকে, কোন কথার উত্তরই তো দিতে পারছিস না তুই।
রেমা তাকিয়ে থাকে। কোন সারা শব্দ নেই। তারপর অনা চোখ মুছতে মুছতে চলে গেল।
অনার বিয়ের কথা অহনা বলল আনানকে। আনান বলল, এখন উপায়?
তুমি আমার বোন তাহানাকে খবর দাও। আমার কথা বলে ওকে আসতে বলো।
আনান তাহানার সাথে ফোনে যোগাযোগ করলো। সবকিছু শুনে তাহানা বলে, এতদিনে এ ব্যাপারে আমাকে জানাননি কেন?
বলা হয়ে উঠেনি। কি আর করা।
আমি আজ তো আসতে পারছি না। আগামীকাল আসছি?
চলে এসো তাহলে। আনান অহনাকে জানাল, আগামীকাল আসছে তাহানা।
বোন তো, এসব কথা শুনলে কি থাকতে পারে? আজ আমাকে একটু কষ্ট করে আমার মেয়ের কাছে নিয়ে যাও।
বেলা তো শেষ। আজ থাক, কাল তোমাকে আর তাহানাকে নিয়ে যাবো। এ অবস্থায় তোমার না যাওয়া ভালো। বরং আমি এখন মেয়ের কাছে যাই।
হাসপাতালে পৌঁছে আনান দেখল, সাব্বির, ছায়মা ও অর্পণ রেমার কাছে। তাদের দেখে আনানের মনে আনন্দ লাগল। ছায়মা বলল, বিয়াই সাহেব, আপনার সাথে আমার কিছু কথা ছিল।
জ্বি আপা বলুন।
দেখুন, প্রায় দু বছর দেখলাম, বউমার তো কোন পরিবর্তন হলো না। আমি আপনার ভাইয়ের সাথে বলেছিলাম অর্পণকে বিয়ে করানোর কথা। কিন্তু কোনমতেই রাজি করাতে পারছি না। বেয়াইনের কথা শুনে আনানের মনটা খারাপ হয়ে গেল, মনে হলো মাথার উপর দুনিয়া ভেঙ্গে পড়েছে। মনে মনে ভাবল, এখানে মেয়ের বিয়ে দিয়ে আজ তার এ অবস্থা।
কী ভাই কিছু বলছেন না যে?
কোন বাবা কি পারে তার মেয়ের অমঙ্গল চাইতে? তাহলে আমি কী করে পারব বলুন।
দেখুন, আমি তো আপনার মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করছি না, সে ভালো হলে সে আমার ছেলের সাথে সংসার করবে। আমরা তো না বলেও ছেলেকে বিয়ে করাতে পারতাম তাতো করিনি। দেখুন, বিয়ের পর থেকে এ পর্যন্ত আমরা অপেক্ষা করেছি, আর কত বলুন?
বেয়াইন ছায়মার কথা শুনে আনান আহত হয়। ছায়মা তার কথায় অনড়। হাসপাতালে উচ্চস্বরে কথা বলে সে অস্থির হয়ে ওঠে। তারপর স্বামীকে আর ছেলেকে বলল, এই চল চল দেরি হয়ে যাচ্ছে।
অর্পণ বলল, মা আমি রেমার এখানে থাকি না?
বাবা বউমাকে দেখার জন্যে এখানে বহু ডাক্তার আর নার্স আছে, তারা দেখবে। ছায়মা ছেলেকে আর স্বামীকে নিয়ে একসাথে বের হলো। আনান মেয়েকে ধরে কাঁদতে থাকল, মারে আমি তোর জীবনটা নষ্ট করে দিলাম।
সবাইকে অবাক করে দিয়ে রেমা বলে উঠল, বাবা তুমি কাঁদছো? কাঁদো বাবা।
আনান বলে, মা তুই কথা বলছিস, কতদিন তোর মুখের কথা শুনি না, কথা বল মা কথা বল।
কিন্তু রেমা আর কোন কথাই বলছে না। তারপর নার্স রেমাকে ওষুধ খাওয়ালো। রেমা ঘুমিয়ে পড়লো। আনান ফিরে এলো বাসায়। চুপ করে নিজের রুমে শুয়ে কাঁদতে লাগল। অহনাকে কিছু বলল না।
তাহানা এলো। আপা তোর এই অবস্থা! আমাকে বলিসনি কেন? মানুষ কি মানুষ ছাড়া চলতে পারে? আল্লাহ কেন তাহলে আপনজন দিলো, একজন আরেক জনের সুখে দুঃখে পাশে থাকবে বলেই তো। দুপুরে সবাই রেমার কাছে গেল।
চট্টগ্রামের রিয়াজুদ্দিন বাজারে রায়হান এলো অফিসের কাজে। দুপুরের খাবার খাওয়ার জন্য বের হলো। দেখতে পেল একটা রেস্টুরেন্ট। নাম তার ‘রবিন রেস্টুরেন্ট’। রায়হানের বুকটা মোচড় দিয়ে উঠল— রবিন তো আমার ছেলের নাম। ও এখানে আসবে কী করে, রেস্টুরেন্ট ওর হবে কী করে, রেস্টুরেন্টের ভিতরে গেল। দেখল এটি একটি ভিআইপি রেস্টুরেন্ট। একজন ওয়েটার এলো, জ্বি স্যার, কী খাবেন বলুন। রায়হান খাবারের মেনু দেখে অর্ডার দিলো। খাবার খেয়ে পরম শান্তি পেল। মনে হয় এমন খাবার কতদিন খায়নি সে। এখানকার খাবার এত ভালো লাগবে তা তার জানা ছিল না। একজন ওয়েটার কাউকে বলল, স্যার আপনার গাড়ি বের করা হয়েছে। রায়হান তাকাতেই দেখল রবিনকে। রবিনকে সবাই স্যার বলছে। রায়হান রবিনের সামনে গেল। বলল, রবিন বাবা তুমি!
রবিন অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে, আমাকে কিছু বলছেন?
রবিন, আমি তোমার বাবা।
রবিন হাতের আঙ্গুলে ইঙ্গিত করে বলে, আপনি আমার বাবা? না তো!
তুমি চেনো না আমাকে? তোমাদের সাথে কত বছর যোগাযোগ ছিল না, দেখা সাক্ষাৎ ছিল না, তারপরও বাবার অফিসে গিয়ে বাবাকে চিনতে পারলে। আর আজ কয়েক বছরের ব্যবধানে আমাকে চিনলে না।
রবিন না বলল। সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। ওয়েটার একজন আরেকজনকে বলল, স্যার একজন ভালো মানুষ সবার বিপদের সময় পাশে থাকেন। যখন যার যা টাকা লাগে সেই টাকা দিয়ে তাকে সহযোগিতা করেন। আর একজন বিস্মিত হয়ে বলল, স্যারের বাবাকে স্যার চেনেন না? অন্য একজন ওয়েটার বলছে, মনে হয় ওই লোকটা ভালো না। তাই স্যার তার সাথে এমন আচরণ করছেন। স্যারের তো অনেক ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, তাই অনেক ধরনের মানুষ আসে। কত ধরনের ফন্দি আঁটবে, এ লোক তেমনি একজন হবে। থাক, আমাদের এসবে কান দিয়ে লাভ নেই। রায়হান কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে অসহায় বোধ করে। সে ভাবছে, আমার ছেলে আমাকে চিনল না? মাথা নিচু করে রায়হান চলে গেল।
রবিন নিজের অফিস রুমে গিয়ে বসে। কিছুক্ষণ নীরব থেকে চেয়ারে বসে মাথা নাড়তে লাগল আর বাবা রায়হানকে নিয়ে ভাবে, আজ তুমি এসেছ ছেলের কাছে পিতৃ পরিচয় দিতে! বিগত দিনগুলোতে কোথায় ছিলে? সে দিনগুলোতে তুমি আমাদের পরিচয় দাওনি তাহলে আজ আমাকে আমার মাকে হারাতে হতো না। হারাতে হতো না আমার ভালোবাসার মানুষকে। সে দিনগুলোর কথা আমি ভুলিনি বাবা, দূরে আছো দূরেই থাকো, কাছে এসো না।
রবিনের হৃদয়ে আগুন জ্বলে ওঠে।
ফিরে এসো
সুলেখা আক্তার শান্তা
(ষষ্ঠদশ অংশ)
দুই বছর পরের কথা। একটু একটু করে রবিনের ব্যাবসা অনেক বড় হলো। আজ সে গার্মেন্টস মালিক, বড় ধরনের রেস্টুরেন্ট ব্যবসাও আছে তার। নিজের আলিশান অফিসে বসে রবিন মনে মনে বলে, হায়রে টাকা! সময়কালে এলি না। এমন সময় এসেছিস যখন আমার টাকা খরচ করার কোন পথ নেই। এই টাকার জন্যে আমার মায়ের চিকিৎসা করাতে পারিনি। আমার মা চলে গেল পৃথিবী ছেড়ে আমায় একা করে। মানুষের টাকা হলেও পিছনের দুঃখের কথা ঠিকই মনে পড়ে যায়। ছিলাম বাবার কাছে অবহেলার পাত্র, করলেন বাবা তার স্নেহ থেকে বঞ্চিত। মা গো, মা তুমি কি আমায় দেখতে পাচ্ছো? দেখো আজ তোমার ছেলের কত টাকা! ফিরে এসো মা, তুমি ফিরে এসো। হাসি আনন্দে আর কি তোমার সাথে কাটাতে পারব না? সে ভাগ্য আর তো হবে না এ জনমে, না হোক পরজনমে হবে মা। এ টাকা ছিল না বলে আমার ভালোবাসার মানুষকে হারাতে হয়েছে। তার বাবা দিলো না আমার সাথে মেয়ের বিয়ে। এত টাকা দিয়ে আমি কী করবো, রাখবো কোথায়? মানুষ মানুষের মন দেখে না, দেখে শুধু টাকা আছে কিনা। টাকা তো হলো সবকিছু হারিয়ে। আজ আমার কত কী হয়েছে— রবিন গার্মেন্টস, রবিন রেস্টুরেন্ট। রেমা, তোমার বাবা যে সুখ দেখে তোমায় বিয়ে দিয়েছে সেখানে নিশ্চয় তুমি অনেক সুখে আছো। সুখ, শান্তি আর সমৃদ্ধিতে ভরে থাক তোমার জীবন এই আমার প্রিয়তমার জন্যে শুভকামনা। তোমার জন্যে নিরন্তর ভালোবাসা।
দীর্ঘদিন যাবত রেমা হাসপাতালে। অনা মাঝে মাঝে রাতে এসে রেমার কাছে থাকে। একদিন অনার বাসায় তার বিয়ের কথা ওঠে। খুব তাড়াতাড়ি অনার বিয়ে হয়ে যাবে। বিষয়টি রেমার মাকে জানায়। অনা বলল, খালাম্মা— আপনার এই অবস্থা, অথচ আমি আর এখন রেমার কাছে থাকতে পারব না। আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে। অহনা অনার মাথায় হাত বুলিয়ে দোয়া করে। বলে, মা তুমি রেমার জন্যে অনেক করেছো, কোন বোনও বোনের জন্যে এত করে না।
খালাম্মা, আপনি একথা বলছেন কেন? রেমা তো আমার বান্ধবী। আমি ওদের দুজনকে কথা দিয়েছিলাম, বন্ধু হয়ে থাকব পাশে।
মারে কথার দাম কজনেই বা রাখে? রেমার কথার দাম তো আমরা দিতে পারিনি। তাই তো আজ আমরা এ পরিস্থিতির শিকার। ওর কথার দাম দিলে তো আজ এমন হতো না। তুমি যখন আর আসতে পারবে না এখন আমি আমার বোনকে খবর দিয়ে দেখি।
খালাম্মা, আমি সময় সুযোগ বুঝে আপনাকে আর রেমাকে দেখে যাবো।
এসো মা, দোয়া করি তোমার নতুন জীবন নিয়ে তুমি সুখী হও।
আজ রেমা সুস্থ থাকলে আমার বিয়েতে কত আনন্দ করতো!
মারে এসব কথা বলো না আমার কাছে।
খালাম্মা আমি তাহলে আসি, রেমার সাথেও একটু দেখা করবো।
এসো মা, শুভকামনা রইল তোমার জন্যে।
অনা রেমার কাছে গিয়ে দু হাত দিয়ে রেমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদল। বলল, আমি আর আসতে পারব না তোকে দেখতে যখন তখন। হবে না তোর আর আমার দেখা আগের মতো। কী বলবো আমি তোকে, কোন কথার উত্তরই তো দিতে পারছিস না তুই।
রেমা তাকিয়ে থাকে। কোন সারা শব্দ নেই। তারপর অনা চোখ মুছতে মুছতে চলে গেল।
অনার বিয়ের কথা অহনা বলল আনানকে। আনান বলল, এখন উপায়?
তুমি আমার বোন তাহানাকে খবর দাও। আমার কথা বলে ওকে আসতে বলো।
আনান তাহানার সাথে ফোনে যোগাযোগ করলো। সবকিছু শুনে তাহানা বলে, এতদিনে এ ব্যাপারে আমাকে জানাননি কেন?
বলা হয়ে উঠেনি। কি আর করা।
আমি আজ তো আসতে পারছি না। আগামীকাল আসছি?
চলে এসো তাহলে। আনান অহনাকে জানাল, আগামীকাল আসছে তাহানা।
বোন তো, এসব কথা শুনলে কি থাকতে পারে? আজ আমাকে একটু কষ্ট করে আমার মেয়ের কাছে নিয়ে যাও।
বেলা তো শেষ। আজ থাক, কাল তোমাকে আর তাহানাকে নিয়ে যাবো। এ অবস্থায় তোমার না যাওয়া ভালো। বরং আমি এখন মেয়ের কাছে যাই।
হাসপাতালে পৌঁছে আনান দেখল, সাব্বির, ছায়মা ও অর্পণ রেমার কাছে। তাদের দেখে আনানের মনে আনন্দ লাগল। ছায়মা বলল, বিয়াই সাহেব, আপনার সাথে আমার কিছু কথা ছিল।
জ্বি আপা বলুন।
দেখুন, প্রায় দু বছর দেখলাম, বউমার তো কোন পরিবর্তন হলো না। আমি আপনার ভাইয়ের সাথে বলেছিলাম অর্পণকে বিয়ে করানোর কথা। কিন্তু কোনমতেই রাজি করাতে পারছি না। বেয়াইনের কথা শুনে আনানের মনটা খারাপ হয়ে গেল, মনে হলো মাথার উপর দুনিয়া ভেঙ্গে পড়েছে। মনে মনে ভাবল, এখানে মেয়ের বিয়ে দিয়ে আজ তার এ অবস্থা।
কী ভাই কিছু বলছেন না যে?
কোন বাবা কি পারে তার মেয়ের অমঙ্গল চাইতে? তাহলে আমি কী করে পারব বলুন।
দেখুন, আমি তো আপনার মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করছি না, সে ভালো হলে সে আমার ছেলের সাথে সংসার করবে। আমরা তো না বলেও ছেলেকে বিয়ে করাতে পারতাম তাতো করিনি। দেখুন, বিয়ের পর থেকে এ পর্যন্ত আমরা অপেক্ষা করেছি, আর কত বলুন?
বেয়াইন ছায়মার কথা শুনে আনান আহত হয়। ছায়মা তার কথায় অনড়। হাসপাতালে উচ্চস্বরে কথা বলে সে অস্থির হয়ে ওঠে। তারপর স্বামীকে আর ছেলেকে বলল, এই চল চল দেরি হয়ে যাচ্ছে।
অর্পণ বলল, মা আমি রেমার এখানে থাকি না?
বাবা বউমাকে দেখার জন্যে এখানে বহু ডাক্তার আর নার্স আছে, তারা দেখবে। ছায়মা ছেলেকে আর স্বামীকে নিয়ে একসাথে বের হলো। আনান মেয়েকে ধরে কাঁদতে থাকল, মারে আমি তোর জীবনটা নষ্ট করে দিলাম।
সবাইকে অবাক করে দিয়ে রেমা বলে উঠল, বাবা তুমি কাঁদছো? কাঁদো বাবা।
আনান বলে, মা তুই কথা বলছিস, কতদিন তোর মুখের কথা শুনি না, কথা বল মা কথা বল।
কিন্তু রেমা আর কোন কথাই বলছে না। তারপর নার্স রেমাকে ওষুধ খাওয়ালো। রেমা ঘুমিয়ে পড়লো। আনান ফিরে এলো বাসায়। চুপ করে নিজের রুমে শুয়ে কাঁদতে লাগল। অহনাকে কিছু বলল না।
তাহানা এলো। আপা তোর এই অবস্থা! আমাকে বলিসনি কেন? মানুষ কি মানুষ ছাড়া চলতে পারে? আল্লাহ কেন তাহলে আপনজন দিলো, একজন আরেক জনের সুখে দুঃখে পাশে থাকবে বলেই তো। দুপুরে সবাই রেমার কাছে গেল।
চট্টগ্রামের রিয়াজুদ্দিন বাজারে রায়হান এলো অফিসের কাজে। দুপুরের খাবার খাওয়ার জন্য বের হলো। দেখতে পেল একটা রেস্টুরেন্ট। নাম তার ‘রবিন রেস্টুরেন্ট’। রায়হানের বুকটা মোচড় দিয়ে উঠল— রবিন তো আমার ছেলের নাম। ও এখানে আসবে কী করে, রেস্টুরেন্ট ওর হবে কী করে, রেস্টুরেন্টের ভিতরে গেল। দেখল এটি একটি ভিআইপি রেস্টুরেন্ট। একজন ওয়েটার এলো, জ্বি স্যার, কী খাবেন বলুন। রায়হান খাবারের মেনু দেখে অর্ডার দিলো। খাবার খেয়ে পরম শান্তি পেল। মনে হয় এমন খাবার কতদিন খায়নি সে। এখানকার খাবার এত ভালো লাগবে তা তার জানা ছিল না। একজন ওয়েটার কাউকে বলল, স্যার আপনার গাড়ি বের করা হয়েছে। রায়হান তাকাতেই দেখল রবিনকে। রবিনকে সবাই স্যার বলছে। রায়হান রবিনের সামনে গেল। বলল, রবিন বাবা তুমি!
রবিন অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে, আমাকে কিছু বলছেন?
রবিন, আমি তোমার বাবা।
রবিন হাতের আঙ্গুলে ইঙ্গিত করে বলে, আপনি আমার বাবা? না তো!
তুমি চেনো না আমাকে? তোমাদের সাথে কত বছর যোগাযোগ ছিল না, দেখা সাক্ষাৎ ছিল না, তারপরও বাবার অফিসে গিয়ে বাবাকে চিনতে পারলে। আর আজ কয়েক বছরের ব্যবধানে আমাকে চিনলে না।
রবিন না বলল। সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। ওয়েটার একজন আরেকজনকে বলল, স্যার একজন ভালো মানুষ সবার বিপদের সময় পাশে থাকেন। যখন যার যা টাকা লাগে সেই টাকা দিয়ে তাকে সহযোগিতা করেন। আর একজন বিস্মিত হয়ে বলল, স্যারের বাবাকে স্যার চেনেন না? অন্য একজন ওয়েটার বলছে, মনে হয় ওই লোকটা ভালো না। তাই স্যার তার সাথে এমন আচরণ করছেন। স্যারের তো অনেক ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, তাই অনেক ধরনের মানুষ আসে। কত ধরনের ফন্দি আঁটবে, এ লোক তেমনি একজন হবে। থাক, আমাদের এসবে কান দিয়ে লাভ নেই। রায়হান কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে অসহায় বোধ করে। সে ভাবছে, আমার ছেলে আমাকে চিনল না? মাথা নিচু করে রায়হান চলে গেল।
রবিন নিজের অফিস রুমে গিয়ে বসে। কিছুক্ষণ নীরব থেকে চেয়ারে বসে মাথা নাড়তে লাগল আর বাবা রায়হানকে নিয়ে ভাবে, আজ তুমি এসেছ ছেলের কাছে পিতৃ পরিচয় দিতে! বিগত দিনগুলোতে কোথায় ছিলে? সে দিনগুলোতে তুমি আমাদের পরিচয় দাওনি তাহলে আজ আমাকে আমার মাকে হারাতে হতো না। হারাতে হতো না আমার ভালোবাসার মানুষকে। সে দিনগুলোর কথা আমি ভুলিনি বাবা, দূরে আছো দূরেই থাকো, কাছে এসো না।
রবিনের হৃদয়ে আগুন জ্বলে ওঠে।
সম্পাদক ও প্রকাশক
এ এম জি ফেরদৌস
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক
নাহিদুল ফাহিম
প্রযুক্তি ব্যবস্থাপনা
ইঞ্জি. মেহেদী হাসান |
প্রধান কার্যালয়
পূর্ব লিংক রোড, ঝিরংঝা, কক্সবাজার
মোবাইল
০১৮১৯-৫০২-৩২২
ই-মেইল beachnews24@gmail.com |
প্রিন্টের তারিখ ও সময়: March 29, 2024, 6:31 pm