অফ সিজনেও নামবে কক্সবাজারে পর্যটকের ঢল,কেনা হচ্ছে ৫৪টি ট্যুরিস্ট কোচ

  বিশেষ প্রতিনিধি    26-01-2023    223
অফ সিজনেও নামবে কক্সবাজারে পর্যটকের ঢল,কেনা হচ্ছে ৫৪টি ট্যুরিস্ট কোচ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকার প্রকল্প ১০২ কিলোমিটারের চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথের নির্মাণকাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। স্বপ্ন এখন চূড়ান্ত বাস্তবায়নের পথে। প্রকল্পের অগ্রগতি ৯৫ শতাংশ। আগামী জুনে প্রকল্পের শ্লট-১ (চকরিয়া-কক্সবাজার এবং শ্লট-২ (দোহাজারী-চকরিয়া) এর কাজ শেষ হলে এ পথে সাধারণ ট্রেনের সঙ্গে ‘পর্যটন বিশেষ ট্রেন’ চলবে। এর ফলে পর্যটননগরী কক্সবাজারে আমূল পরিবর্তন আনবে রেল যোগাযোগ। ঢাকা থেকে সরাসরি ট্রেনে যাওয়া যাবে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত দর্শনে। মিটার গেজ লাইনে বসবে বিশেষ সুবিধা সম্বলিত আরামদায়ক ট্যুরিস্ট কোচ।

পর্যটক ট্রেনে সর্বনিম্ন ৭০০ টাকায় ঢাকা থেকে যাওয়া যাবে কক্সবাজার। প্রতিদিন রাজধানী থেকে ছাড়বে ১০ জোড়া ট্রেন। লাইন দিয়ে ১০০ কিলোমিটারের বেশি গতিতে চলতে পারবে ট্রেন। বছরে প্রায় ২ কোটি যাত্রী পরিবহনের সক্ষমতা নিয়ে পর্যটন নগরীতে নতুন বছর চালু হচ্ছে ঝিনুক আকৃতির রেলস্টেশন।এই স্টেশন চালু হলে ঢাকা থেকে মাত্র ৮ ঘন্টায় সমুদ্র নগরীতে পৌঁছানো যাবে। আর চট্টগ্রাম থেকে যেতে লাগবে আড়াই ঘণ্টা। রেল কর্তৃপক্ষ বলছে, ঢাকা থেকে কক্সবাজার চলাচলে সর্বোচ্চ টিকিটের দাম হবে ১৫০০ টাকা।এশিয়ার একমাত্র পর্যটন স্টেশন চালু হলে এটি দেখতে অনেক মানুষ ছুটে আসবেন। আবার যাতায়াত সহজ হওয়ায় সমুদ্র নগরীতে বাড়বে কয়েক গুণ পর্যটক।

দেশের অন্যতম বন্যপ্রাণি বনাঞ্চলসহ কয়েকটি সবুজ বনাঞ্চলের ভেতর দিয়ে এই রেলপথ মিলিয়ে যাবে পাহাড়ি রাজ্যে। উইনডো স্ক্রিনে হয়তো ধরা পড়বে দূরের কোন বন্য হাতি, বানরের ঝাঁক অথবা কানে ভেসে আসবে পাখির মন ভোলানো ডাক। এমনই সব অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে দেখতে কখন দীর্ঘ রেল যাত্রা শেষে পৌঁছে যাবে সমুদ্রতীরে, তা হয়তো টেরই পাবে না। পাশাপাশি দেশের উত্তর-দক্ষিণাঞ্চলের পর্যটকরা ট্রেনে সরাসরি কক্সবাজারে যেতে পারবেন। ট্রেনে পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে ৫৪টি অত্যাধুনিক ট্যুরিস্ট কোচ কেনা হচ্ছে। সুপ্রশস্ত এসব কোচে বসে পর্যটকরা পাহাড়ঘেরা পথের প্রাকৃতিক দৃশ্য অনায়াসে দেখতে পারবেন।

পর্যটন সংশ্লিষ্টরা বলছেন,২০২৩ সালের জুনের পর রেল যোগাযোগ চালু হলে কক্সবাজার অফ সিজনেও পর্যটক টানবে । ঢাকা-কক্সবাজার রুটে নতুন দ্রুতগতির ট্রেন চলাচল শুরু হলে পর্যটনে আসবে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। কক্সবাজারে ঝিনুকের আদলে করা দেশের প্রথম আইকনিক রেলওয়ে স্টেশন হবে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। রেল যোগাযোগ চালু হলে কক্সবাজার অফ সিজনেও দর্শনার্থী টানবে। পর্যটকদের খরচ কমবে। তবে পর্যটকদের সেবার মানের দিকে সরকার ও হোটেল মালিকদের নজর দিতে হবে। পর্যটন শুধু কক্সবাজার কেন্দ্রিক করলে হবে না, সারাদেশের পর্যটন বিকশিত করতে হবে।



কক্সবাজারের ঝিলংঝা ইউনিয়নের চান্দেরপাড়া এলাকায় তৈরি হচ্ছে ঝিনুক আকৃতির আইকনিক ভবন। দেশের একমাত্র আইকনিক রেলস্টেশন এটি। ২৯ একর জমির ওপর গড়ে ওঠা রেলস্টেশন ভবনটি ১ লাখ ৮৭ হাজার ৩৭ বর্গফুটের। ভবনটি হবে ছয়তলা, এর সামনে খোলা মাঠে তৈরি হবে ঝিনুক আকৃতির দৃষ্টিনন্দন একটি ফোয়ারা। দর্শনার্থীরা ঝিনুক ফোয়ারা দিয়ে স্টেশনে প্রবেশ করবেন। স্টেশনটিতে পর্যটকরা লাগেজ রেখে সারাদিন সমুদ্র সৈকত বা দর্শনীয় স্থান ঘুরে রাতের ট্রেনে আবার ফিরতে পারবেন নিজ গন্তব্যে। স্থাপনাটিই একটি পর্যটন স্পটে পরিণত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এজন্য এতে রাখা হয়েছে অভ্যর্থনা কক্ষ, শিশুদের বিনোদনের জায়গা, প্যাসেঞ্জার লাউঞ্জ, শপিংমল, তারকামানের হোটেল ও রেস্তোরাঁ।

স্থানীয়রা বলেন, পর্যটন নগরী কক্সবাজারের জন্য এই রেলপথ আশীর্বাদ। আর রেলপথ চালু হলে এখানকার মানুষের জীবনযাত্রাও সহজ হয়ে যাবে।

কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী বলেন,কক্সবাজারে রেলপথ চালু হলে স্থানীয় অর্থনীতির যোগসূত্র তৈরি হবে। স্টেশন ঘিরে হোটেল-মোটেল ও পরিবহন খাতে তৈরি হবে নতুন উদ্যোক্তা। সমৃদ্ধ হবে আশপাশের কয়েক কিলোমিটারের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। পর্যটন ব্যবসাসহ অন্যান্য বাণিজ্যও প্রসারিত হবে। বিশেষ করে, ব্যবসায়ীদের পরিবহন খরচ অনেক কমে যাবে।ব্যবসায়ী বা শিল্পপতিরা তাদের পণ্য ঢাকা থেকে কম খরচে কক্সবাজারে নিয়ে যেতে পারবেন। কারণ সাধারণ যানবাহনে খরচ দ্বিগুণ।

ট্যুরিজম ব্যবসায়ীরা বলেন,কক্সবাজারে মানুষ সাধারণত শীতকালে যায়। নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত এ স্পটে প্রচুর দর্শনার্থীর ভিড় থাকে। রেল চালু হলে দর্শনার্থীরা নিরাপদে ও কম খরচে কক্সবাজার যেতে পারবেন। এটা আরও বেশি জমজমাট হবে।তিনি আরও বলেন, রেল যোগাযোগের ফলে বিলাসবহুল বাস কোম্পানিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে। প্লেনে আর কতজন যায়, বাসেই বেশিরভাগ মানুষ যায়। বাস অপারেটরদের ব্যবসা কমে যাবে। আবার বেশি লোক গেলে হোটেলগুলো তাদের রেট বাড়িয়ে দেবে। এমনিতে অধিকাংশ হোটেলের সার্ভিস ভালো নয়। দর্শনার্থীদের ভালো সেবা নিশ্চিত করতে হলে হোটেলগুলোর সার্ভিস ভালো করতে হবে, পাশাপাশি সেখানে বিনোদনের উপকরণ বাড়াতে হবে।

হোটল-মোটল ব্যবসায়ীরা বলেন, কক্সবাজারে ট্যুরিস্টের অভাব নেই। এটার যে কেয়ারিং ক্যাপাসিটি আছে সেটা অলরেডি ওভার হয়ে গেছে। রেললাইন হলে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হবে, সহজ হবে। কিন্তু কক্সবাজার এরই মধ্যে ওভারলোডেড বা মাস ট্যুরিজম হয়ে গেছে। দেশীয় পর্যটক সেখানে এমনিই যাচ্ছে। বিদেশি পর্যটক টানতে হবে, সেই মানের কোনো কিছু আমরা করতে পারছি না। ‘পর্যটনের উন্নয়নের জন্য দেশি পর্যটকদের নতুন নতুন ডেস্টিনেশন দিতে হবে। পাশাপাশি কক্সবাজারে বিনোদনের অনুষঙ্গ বাড়াতে হবে। এজন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা প্রয়োজন।’

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথ প্রকল্প নির্মাণ ব্যয় শুরুতে এক হাজার ৮৫২ কোটি ধরা হলেও কাজের পরিধি বৃদ্ধি পাওয়ায় তা ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। পুরো প্রকল্পে ৩৯টি মেজর ব্রিজ এবং ২৪২টি কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। ৯টি স্টেশনের মধ্যে সবচেয়ে বড় কক্সবাজার আইকনিক রেলওয়ে স্টেশনের কাজ প্রায় ৯৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। এ পথে হাতি চলাচলের জন্য আন্ডারপাস ও ওভারপাস নির্মাণ করা হয়েছে

পর্যটন-এর আরও খবর