তুরস্কের ভূমিকম্পে মুছে গেল দুই হাজার বছরের যে ইতিহাস

  বিশেষ প্রতিনিধি    17-02-2023    187
তুরস্কের ভূমিকম্পে মুছে গেল দুই হাজার বছরের যে ইতিহাস

ভূমিকম্পের পর বেশ কয়েকদিন পার হয়ে গেছে। তুরস্ক এবং সিরিয়া পরিণত হয়েছে মৃত্যুপুরীতে। তাসের ঘরের মতো ঝরে পড়েছে বহু ঘরবাড়ি। কংক্রিটের তলায় এখনো আটকে রয়েছে মানুষ। উদ্ধারকাজও চলছে এখনো। এই ভূমিকম্পে ভেঙে পড়েছে তুরস্কের দুই হাজার বছরের পুরনো ইতিহাসও।

গাজিয়ানতেপ কেল্লা। এই দুর্গের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে রয়েছে তুরস্কের ইতিহাস। দুই হাজার বছর ধরে গাজিয়ানতেপ শহরের মাঝে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে ছিল কেল্লাটি। দেশের চিত্র বদল হতে দেখেছে অনবরত। কিন্তু সোমবারের ভয়ানক কম্পন যেন দুর্গের বিনাশ ডেকে আনল।

ভূমিকম্পের ফলে গাজিয়ানতেপ কেল্লার অধিকাংশ ধ্বংস হয়ে গেছে। পূর্ব, দক্ষিণ-পূর্ব এবং দক্ষিণ অংশ সম্পূর্ণ ধসে গিয়েছে। দুর্গের কিছু প্রাচীর ভেঙে পড়েছে। প্রাচীরের অন্যান্য অংশগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত। লোহার তৈরি বেড়াগুলোও ভেঙে পড়েছে। গাজিয়ানতেপ কেল্লা ভেঙে পড়ায় শোকস্তব্ধ তুরস্কের নাগরিকেরা। রাস্তায় নেমে অনেকে এই ধ্বংসাবশেষের ছবি তুলেছেন। ভিডিয়ো তুলে সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেছেন কেউ কেউ।

গাজিয়ানতেপ কেল্লাটি তুরস্কের গাজিয়ানতেপ শহরের মধ্যভাগে অবস্থিত ছিল। ২০০ থেকে ৩০০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ এই কেল্লাটি নির্মাণ করা হয়েছে বলে ইতিহাসবিদদের দাবি। বর্তমান তুরস্কের আনাতোলিয়া অঞ্চলে হিটাইট সাম্রাজ্যের রাজত্ব চলাকালীন এই কেল্লাটি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র হিসাবে ব্যবহৃত হত।

তারপর গাজিয়ানতেপ কেল্লাটি পূর্ব রোমান সাম্রাজ্যের প্রধান কেল্লা হিসাবে পরিচিতি পায়। ৫২৭ থেকে ৫৬৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যবর্তী সময়ে পূর্ব রোমে শাসন করছিলেন সম্রাট প্রথম জাস্টিনিয়ান কেল্লাটিকে আরো বর্ধিত করার নির্দেশ দেন। দুর্গের কিছু অংশ আবার নতুন করে বানানো হয়।

গাজিয়ানতেপ কেল্লার মাঝে একটি গোলাকার অংশ রয়েছে যার পরিধি ১২০০ মিটার। দুর্গের দেওয়ালগুলো পাথর দিয়ে নির্মিত। ১২টি উঁচু দুর্গও রয়েছে গাজিয়ানতেপ কেল্লায়। তৎকালীন রোমের সেনারা এই দুর্গগুলো প্রতিরক্ষার জন্য ব্যবহার করতেন। প্রয়োজনে বার বার পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে গাজিয়ানতেপ কেল্লাটি। ১২ থেকে ১৩ শতকের মাঝামাঝি আয়ুবিদ বংশের শাসনকাল থেকে ২০ শতকের তুরস্কের স্বাধীনতা যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল এই কেল্লার।

‘গাজ়িয়ানতেপ ডিফেন্স অ্যান্ড হিরোইজ়ম প্যানোরামিক মিউজ়িয়াম’ হিসাবে ব্যবহার করা হয় গাজ়িয়ানতেপ কেল্লাটি। ১৫১৬ খ্রিস্টাব্দে অটোমান সাম্রাজ্যের শাসকেরা গাজিয়ানতেপ কেল্লাটি দখল করে। সেই কারণেই গাজিয়ানতেপ শহরের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য পর্যটন কেন্দ্রের তালিকায় এই কেল্লার নাম রয়েছে।

অটোমান সাম্রাজ্যের পতনের পর তুরস্ক আক্রমণ করেছিলেন ফরাসি সেনারা। তাদের আক্রমণ রুখতে গাজ়িয়ানতেপ শহর দুর্দান্ত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় নিজেকে মুড়ে রেখেছিল। তুরস্কের উপর ফরাসি আক্রমণ নিয়ে একটি তথ্যচিত্র তৈরি করা হয়েছিল। ঐ তথ্যচিত্র শুট করার সময় গাজিয়ানতেপ কেল্লাটি ব্যবহার করা হয়েছে।

তুরস্কের এক স্থানীয় বাসিন্দা এই প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘ভূমিকম্পের ফলে আমাদের অনেক ক্ষতি হল। গাজিয়ানতেপ কেল্লা আমাদের কাছে গর্ব করার বিষয়। এত দিন এত আক্রমণ সহ্য করে এসেছে এই কেল্লা। কিন্তু ভূমিকম্পের ফলে সব শেষ হয়ে গেল।’ এই কেল্লাটি কবে সারাই করা হবে সেই অপেক্ষায় রয়েছে তুরস্কবাসী।

এখনো পর্যন্ত তুরস্ক এবং সিরিয়ায় মৃতের সংখ্যা ৪২ হাজার ছুঁইছুঁই। তুরস্ক প্রশাসন জানিয়েছে যে, সে দেশে মারা গিয়েছেন ৩৬ হাজার ১৮৭ জন। সিরিয়ার মৃতের সংখ্যা ৫ হাজার ৮০০।

সূত্র: আনন্দবাজার

আন্তর্জাতিক-এর আরও খবর