জয়ে মান বাঁচালো বাংলাদেশ

  বিশেষ প্রতিনিধি    07-03-2023    315
জয়ে মান বাঁচালো বাংলাদেশ

বেশ চমকে যাওয়ার মতোই ঘটনা। ঘরের মাঠে বাংলাদেশ খেলছে অথচ সব মিলিয়ে হাজার দর্শকও নেই গ্যালারিতে! সাগর পাড়ের স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ যখনই পা রেখেছে স্বাগতিক দর্শকরা দুহাত ভরে দিয়েছে। কিন্তু ইংল্যান্ডের কাছে দুই ম্যাচ হেরে তৃতীয় ম্যাচ খেলতে এসে উল্টোচিত্র দেখল।

দর্শকশূন্য গ্যালারিতে টস জিতে ব্যাটিং করতে নেমে শুরুতেই হোঁচট। এরপর ধীরে ধীরে লড়াই। প্রথমে শান্তর ফিফটি (৫৩) । পরে মুশফিকের (৭০)। এরপর সাকিবের ঝকঝকে ফিফটিতে (৭৫) বাংলাদেশের রান ২৪৬। বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা যেখানে গড়ে প্রতি পাঁচ ম্যাচে তিনটিতে তিন’শ রান করে সেখানে তাদের জন্য ২৪৭ রান মামুলী হওয়ার কথা। কিন্তু ব্যাটিংয়ের পর বোলিংয়ে সাকিবের ঝলকে (৪ উইকেট) ম্যাচটা নিজেদের বানিয়ে নেয় বাংলাদেশ।

১৯৬ রানে অতিথিদের অলআউট করে ৫০ রানের জয়ে ধবলধোলাই এড়িয়েছে বাংলাদেশ। ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতে ইংল্যান্ড চওড়া হাসি দিলেও শেষ ম্যাচ জিতে বাংলাদেশ ভালোভাবে নিজেদের মান রেখেছে।

ওয়ানডে ক্রিকেটে ঘরের মাঠে দীর্ঘদিন ধরেই ভালো করছে বাংলাদেশ। ইংল্যান্ডের আগে সর্বশেষ সাত সিরিজের সাতটিই জিতেছিল। ২০১৫ সালের পর কেবল হেরেছিল এই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। সেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আবার ধাক্কা খায় মিরপুরে। প্রথম দুই ওয়ানডেতে তেমন লড়াই করতে পারেনি। তাতে সিরিজে ২-০ ব্যবধানে পিছিয়ে যায় এবং শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিপক্ষে নিজেদের সামর্থ নিয়ে বড় প্রশ্ন উঠে।

কিন্তু পয়মন্ত চট্টগ্রামে শেষ ম্যাচে লড়াই করলো বাংলাদেশ। ব্যাটিংয়ে বিপর্যয় পড়েও ঘুরে দাঁড়াল। বোলিংয়ে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অদম্য। ফিল্ডিংয়েও রাতারাতি উন্নতি চোখে পড়ল। তাতে প্রতীক্ষিত জয়টা হয়ে উঠে আনন্দের। সিরিজ হারের দুঃখ ভুলে ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের চিত্র আঁকা হলো চট্টগ্রামের ২২ গজে।

ব্যাটিংয়ে নেমে স্যাম কারানের ধাক্কায় লিটন আবারও ডাক। সিরিজের দ্বিতীয়। তামিম ১১ রানে বাঁহাতি পেসারের দ্বিতীয় শিকার। সেখান থেকে মুশফিক ও শান্তর টিকে থাকার লড়াই শুরু হয়। শুরুতে বেশ ধীরগতির হলেও ফিফটির দেখা পান দুজনই।

তাদের লড়াইয়ে ছন্দে ফিরেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু তারাই আবার দলকে ডুবিয়ে আসেন। মুশফিকের সঙ্গে শান্তর ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউটে ভাঙে জুটি। শান্ত ৫৩ রানে ফেরেন ড্রেসিংরুমে। মুশফিক ৭০ রানে সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হন আদীল রশিদের বলে। মাহমুদউল্লাহকেও টিকতে দেননি এ লেগ স্পিনার। ৮ রানে বোল্ড হন মাহমুদউল্লাহ।

আরেকপ্রান্তে ব্যাটিংয়ে নেমে সাকিব সাবলীল ব্যাটিংয়ে দলকে এগিয়ে নেন। কোনো জড়তা ছাড়াই খেলছিলেন শুরু থেকে। উইকেটের চারিপাশে সিঙ্গেল-ডাবলসের সঙ্গে বাউন্ডারিও মারছিলেন নিয়মিত। কিন্তু তাকে সঙ্গ দেওয়ার মতো ছিল না কেউ। তাতেই আসে বিপদ। ছয়জনের সঙ্গে জুটি গড়লেও আফিফসের সঙ্গে ৪৯ রানই ছিল সর্বোচ্চ। শেষ দিকে একা ব্যাটিং করে দলের রান ২৪৬ নিয়ে যান। তার ৭৫ রানের ইনিংসটি ছিল ৭১ বলে, ৭ চারে সাজানো।

লক্ষ্য তাড়ায় ইংল্যান্ডের ব্যাটিং দেখে মনে হচ্ছিল ৩০ ওভারেই খেলা শেষ করে দেবে। সল্ট একাই উড়ছিলেন। রয় ছিলেন রয়েসয়ে। সাকিবের বল কভারে ক্যাচ দেয়ার আগে সল্ট ২৫ বলে ৩৫ রান করেন। তখন দলীয় রান ছিল ৫৪। সেখান থেকে ১ রান যোগ করতে ইংল্যান্ড আরও দুই উইকেট হারায়। সাকিবের বলে রয় বোল্ড হন। তাসকিনের পরিবর্তে সুযোগ পাওয়া ইবাদত আউট করেন মালানকে।

দ্রুত ৩ উইকেট তুলে নিয়ে ইংল্যান্ডকে চাপে রাখে বাংলাদেশ। সেখান থেকে ৪৯ রানের জুটি গড়েন স্যাম কারান ও ভিঞ্চ। কিন্তু ২৬ রানের ব্যবধানে আবারও ৩ উইকেট হারায় ইংলিশরা। কারানকে আউট করেন মিরাজ। সাকিবের বলে ভিঞ্চ উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন। ইবাদত বোল্ড করেন মঈন আলীকে।

বাটলার টিকে থাকায় ভয় ছিল বাংলাদেশের। তবে সেই ভয় দূর করেন তাইজুল। বাঁহাতি স্পিনারকে মারতে গিয়ে রিভার্স সুইপ করেন ইংলিশ অধিনায়ক। বল মিস করে এলবিডব্লিউ। এরপর নিজের শেষ ওভারে তাইজুল তুলে নেন আলীদ রশিদের উইকেট।

সাকিব তখন নিজের কীর্তির সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। ২৯৬ উইকেট নিয়ে আজ মাঠে নেমেছিলেন। প্রথম দুই স্পেলে তার পকেটে গেছে ৩ উইকেট। শেষ স্পেলে বাঁহাতি স্পিনার ছুঁয়ে ফেলেন মাইলফলক। অভিষিক্ত রেহান আহমেদকে আউট হয়ে পেয়ে যান ওয়ানডে ক্রিকেটে ৩০০তম উইকেট। ষষ্ঠ স্পিনার হিসেবে বিশ্ব ক্রিকেটে অনন্য কীর্তি গড়েছেন বাংলাদেশের সুপারস্টার।

মোস্তাফিজ গোটা সিরিজে ছিলেন বিবর্ণ। সাফল্য তো পাননিই উল্টো রান দিয়েছেন অনায়েসে। তবে তার হাত ধরেই আসলো জয়। সিরিজের শেষ ম্যাচে শেষ উইকেট ক্রিস ওকসকে ফিরিয়ে পেয়েছেন প্রথম সাফল্য। তাতে নিশ্চিত হয় দলের জয়।

২০১৬ সালের পর আবার ইংল্যান্ডকে হারালো বাংলাদেশ। তবে ঘরের মাঠে নিজেদের প্রভাব দেখাতে পারত টাইগাররা। যদি ব্যাটিংটা ভালো হতো। প্রথম ম্যাচে ২০৯ রানে অলআউট হয়েছিল। দ্বিতীয় ম্যাচে করেছিল কেবল ১৯৪। আজ ২৪৬। ২০০৮ সালের পর প্রথমবার ঘরের মাঠে দ্বিপাক্ষিক সিরিজের সব ম্যাচে অলআউট হলো বাংলাদেশ। কোনোবারই খেলতে পারেনি নির্ধারিত ৫০ ওভার। শেষ ম্যাচেও ব্যাটিং ভালো হয়নি। তবে বোলাররা ঠিকই জয় বের করে এনেছে। সবটাই যেন সাকিবের ম্যাজিকে। সাকিব আবার হাসলেন, হাসালেন বাংলাদেশকে। তাতে অন্তত মান বাঁচলো লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের।

খেলাধুলা-এর আরও খবর