রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আবারও পুরোনো ফন্দি মিয়ানমারের

  বিশেষ প্রতিনিধি    16-03-2023    193
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আবারও পুরোনো ফন্দি মিয়ানমারের

আগামী ২৪ এপ্রিল আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালত বা ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে (আইসিজে) মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা নির্যাতনে গাম্বিয়ার করা মামলার শুনানি হবে। আর এর আগে আদালতের মনোভাব নিজেদের পক্ষে রাখতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করতে চায় নেপিদো। তড়িঘড়ি করে রোহিঙ্গা যাচাই-বাছাইয়ে কারিগরি দল পাঠিয়েছে দেশটি। এর আগেও দেশটি একই কৌশল নিয়েছিল।

গতকাল বুধবার বাংলাদেশে এসেছে মিয়ানমারের ১৭ সদস্যের কারিগরি দল। বর্তমানে চারটি দলে ভাগ হয়ে রোহিঙ্গা যাচাই-বাছাই করছে প্রতিনিধি দলটি। আগে থেকে যাচাই-বাছাই হওয়া রোহিঙ্গাদের শেষ মুহূর্তের যাচাই চালাচ্ছে তারা। এ যাচাই-বাছাই চলবে ৪-৫ দিন।

নাম না প্রকাশের শর্তে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা। সমকালকে তিনি বলেন, এপ্রিলে আইসিজের শুনানিতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগের কাউন্টার মেমোরিয়াল বা জবাব দিতে হবে। ফলে তার আগেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন করতে চাইছে নেপিদো। এতে আদালতে তারা অগ্রগতি দেখাতে পারবে।

তিনি বলেন, মিয়ানমারের কার্যক্রমকে সরল চোখে দেখছে না বাংলাদেশ। ঢাকা বহু দিন ধরেই মিয়ানমারকে প্রত্যাবাসন শুরু করার জন্য চাপ দিয়ে আসছিল। তবে তাতে কখনোই পাত্তা দেয়নি দেশটি। এখন আদালতের শুনানি আসায় তাদের গরজ বেড়েছে। প্রথম ব্যাচ নেওয়ার প্রস্তুতি রাখলেও দ্বিতীয় ব্যাচ কবে নেবে, কাদের নেবে বা কবে যাচাই-বাছাই শেষ করবে তার কোনো দিকনির্দেশনা নেই মিয়ানমারের পক্ষ থেকে। ফলে আদালতকে দেখাতে প্রত্যাবাসন শুরু হলেও এটি নিয়মিত হচ্ছে না।

চীনের সম্পৃক্ততায় ত্রিপক্ষীয় উদ্যোগের আওতায় প্রত্যাবাসন শুরুর জন্য পাইলট প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল ২০২১ সালের অক্টোবরে। সে সময়ে ৭১১ মুসলিম ও ৩১৭ জন হিন্দু রোহিঙ্গার দুটি তালিকা দেয় মিয়ানমার। এতে দেখা যায়, মুসলিম রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন করলে অনেকে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। তাতে আপত্তি জানায় বাংলদেশ। কারণ পুরো পরিবার একত্রে না গেলে কোনো রোহিঙ্গা ফেরত যাবে না। এ সময় মিয়ানমারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে অবস্থান করা ৪৪০ হিন্দু রোহিঙ্গাকে প্রথমে ফেরত নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করা হয়। তবে এতে রাজি নয় ঢাকা।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, নেপিদো ধর্মীয় কার্ড খেলছে। সব হিন্দু রোহিঙ্গাকে একত্রে ফেরত নিতে চাওয়া এর একটি উদাহরণ। এ ক্ষেত্রে মিয়ানমার মুসলিমবিরোধী অপপ্রচার চালাতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে। হিন্দু রোহিঙ্গা যাবে, তবে ক্রমান্বয়ে। হিন্দু রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার বিষয়ে প্রতিবেশী একটি রাষ্ট্র থেকে চাপ রয়েছে বলে মিয়ানমার জানিয়েছে। হিন্দু রোহিঙ্গাদের জন্য বিশাল অর্থ খরচ করে প্রতিবেশী দেশ ঘরবাড়ি বানিয়ে দিয়েছে। সেই ভাগ যাতে হিন্দু রোহিঙ্গারা আগে পায়, তা নিশ্চিত করতে চায় তারা।

গত জুলাইয়ে নেপিদোর করা চারটি আপত্তি খারিজ করে দেয় আইসিজে। মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা চলমান রাখার রায় দেন আদালত। তারা সে বিষয়টি মাথায় রেখে প্রত্যাবাসন করতে চায়, যাতে তারা আদালতে ইতিবাচক কিছু উপস্থাপন করতে পারে। যেমনটি করেছিল ২০২২ সালের আদালতে শুনানির আগে। সে বছর ফেব্রুয়ারিতে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে বসেছিল নেপিদো। আর আদালতে তা উপস্থাপনও করেছিল।

কূটনীতিকরা বলছেন, মিয়ানমারের হঠাৎ করে প্রত্যাবাসনে তৎপর হয়ে ওঠাকে সরল চোখে দেখার সুযোগ নেই। আসলেই প্রত্যাবাসন চাইলে শুরুতে একত্রে কয়েক হাজার রোহিঙ্গার বাছাই সম্পন্ন করে রাখত দেশটি। যাতে করে সুনির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধান ১-২ মাস অন্তর রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন করা যায়।

প্রত্যাবাসন নিয়মিত হলে রোহিঙ্গাদের আস্থা ফিরবে। তাঁরা যেতে উৎসাহিত হবেন। আর সেটি যদি না হয় তবে প্রথমে যাঁরা যাবেন সেটি কতটা টেকসই হবে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।

প্রথম ব্যাচ রাখাইনে গেলে তাদের দেখভাল কে করবে জানতে চাইলে এক কর্মকর্তা বলেন, রাখাইনে আসিয়ানের একটি পর্যবেক্ষণের কার্যালয় রয়েছে। তারাই রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে। সেই সঙ্গে জাতিসংঘ রোহিঙ্গাদের দেখভাল করবে। তবে যাতায়াত ব্যবস্থা সুগম না হওয়ায় জাতিসংঘের এ কাজ করতে বেগ পেতে হবে।

এখন পর্যন্ত প্রায় ৮ লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গার পূর্ণাঙ্গ তথ্য মিয়ানমারকে দিয়েছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে মাত্র ৭-৮ শতাংশ, প্রায় ৭০ হাজার রোহিঙ্গা তথ্য যাচাই-বাছাই করেছে দেশটি। এ ৭০ হাজারের মধ্যে ৫২ শতাংশ রোহিঙ্গার বিষয়ে সবুজ সংকেত দিয়েছে নেপিদো। সুত্র: সমকাল

আন্তর্জাতিক-এর আরও খবর