বাইডেন সরে দাঁড়ালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদে লড়তে পারেন যারা

  বিশেষ প্রতিনিধি    09-04-2023    106
বাইডেন সরে দাঁড়ালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদে লড়তে পারেন যারা

প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন (৮০)। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে তিনিই সবচেয়ে বয়স্ক প্রেসিডেন্ট। শুরুর দিকের কয়েক মাস জনপ্রিয়তা থাকলেও এখন তা ৪০ শতাংশেরও নিচে। এমন অনাহূত পরিবেশে প্রেসিডেন্ট পদে পুনঃনির্বাচনে শেষ পর্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন কিনা তা নিয়ে সংশয় জন্মেছে।

বাইডেনের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠজনেরা অবশ্য জোর দিয়ে বলছেন, নির্বাচনি প্রচারণা শুরু হবে শিগগিরই। কিন্তু বাইডেন নিজে এ বিষয়ে কোনো চূড়ান্ত ঘোষণা দিচ্ছেন বলে দৃশ্যত মনে হচ্ছে না।

জনমত জরিপগুলো বলছে, বাইডেনে অনীহা বাড়ছে ভোটারদের। কিন্তু সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজেরাই বলছেন, বাইডেন যদি শেষ পর্যন্ত প্রতিযোগিতায় অংশ নেন, তাহলে তারা প্রতিদ্বন্দ্বী হবেন না। বাইডেন যদি সত্যি সত্যিই না দাঁড়ান তা হলে কী হবে পরিস্থিতি। ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেট প্রার্থীদের সেই হাঁড়ির খবরই তুলে ধরা হয়েছে বিবিসির এই প্রতিবেদনে।

ম্যারিয়েন উইলিয়ামসন আত্মোন্নয়নবিষয়ক শিক্ষাগুরু ম্যারিয়েন উইলিয়ামসন হলেন প্রথম ডেমোক্র্যাট যিনি ২০২৪ সালের নির্বাচনের লড়তে দলের মনোনয়ন চেয়েছেন এবং মার্চ মাস থেকে আনুষ্ঠানিক প্রচারণাও শুরু করেছেন। সত্তর-বছর বয়সি মিসেস উইলিয়ামসন দীর্ঘদিন ধরে সামাজিক ন্যায়বিচারের পক্ষে আন্দোলন করছেন। তার লেখা বই বেস্ট-সেলার হয়েছে। তিনি রাজনীতিতে পা রাখেন ২০২০ সালে।

তিনি ২০২৪ সালের নির্বাচনের জন্য যে জোট গড়ে তুলেছেন সেটি সর্বজনীন সরকারি স্বাস্থ্যসেবা, বিনামূল্যে চাইল্ড কেয়ার, দাসপ্রথার ক্ষতিপূরণ হিসাবে কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকানদের অন্তত এক ট্রিলিয়ন অর্থ প্রদান এবং শান্তি মন্ত্রণালয় নামে একটি ফেডারেল সংস্থা তৈরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়র ভ্যাকসিন-বিরোধী আন্দোলনকর্মী রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়র হোয়াইট হাউসের জন্য লড়াইয়ের জন্য তার কাগজপত্র জমা দিয়েছেন। এপ্রিলের পর থেকে প্রচারাভিযান শুরু করবেন বলে ঘোষণা করেছেন। প্রয়াত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির ভাতিজা। প্রয়াত অ্যাটর্নি জেনারেল ববি কেনেডির ছেলে। রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়র বংশের ১২তম সদস্য যিনি রাজনৈতিক পদে নির্বাচনের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে পরিবেশ আইনজীবী হিসেবে কাজ করছেন। নিউইয়র্কের হাডসন নদীর সংস্কারসহ পানীয় জলের মতো বিষয়গুলোতে প্রচারণার জন্য অতীতে তিনি প্রশংসা অর্জন করেছেন।

কমলা হ্যারিস একজন বয়স্ক প্রেসিডেন্ট নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালে যিনি সম্ভবত সবচেয়ে বেশি লাভবান হবেন তিনি হলেন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস। তিনি একজন সাবেক পাবলিক প্রসিকিউটর যিনি ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে এবং মার্কিন সিনেটর হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। ৫৮ বছর বয়সি কমলা হ্যারিস যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট, প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং প্রথম এশীয়-আমেরিকান ভাইস-প্রেসিডেন্ট হিসাবে ২০২০ সালে নারী নেতৃত্বের বিরুদ্ধে অদৃশ্য বাধার পাঁচিলটি ভেঙে ফেলতে সক্ষম হন।

দুই হাজার একুশ সালের নভেম্বর মাসে তিনি ৮৫ মিনিটের জন্য ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসাবে সংক্ষিপ্ত দায়িত্ব পালন করেছিলেন। কারণ সে সময় কোলনোস্কোপি করাতে বাইডেন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। ওভাল অফিসের সবচেয়ে কাছাকাছি যেতে সেটিই হয়তো মিসেস হ্যারিসের জন্য একমাত্র সুযোগ ছিল।

গ্যাভিন নিউসম প্রেসিডেন্ট বাইডেনের উত্তরসূরি পদে ভিপি হ্যারিস এক সময় নিশ্চিতভাবেই একমাত্র প্রার্থী ছিলেন। কিন্তু ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের আরেকজন রাজনীতিবিদ গভর্নর গ্যাভিন নিউসমকে নিয়েই এখন সবচেয়ে বেশি গুঞ্জন চলছে। ৫৫ বছর বয়সি নিউসম জাতীয় পর্যায়ের প্রথমবারের মতো সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন ২০০৪ সালে, যখন স্যান ফ্রান্সিসকো শহরের মেয়র হিসাবে তিনি রাজ্যের আইন ভঙ্গ করে সমকামী বিয়ের বৈধতা দিয়েছিলেন। পেশায় মদ ব্যবসায়ী নিউসম ২০১৮ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর নির্বাচিত হন। গত বছর রিপাবলিকান-নেতৃত্বাধীন প্রার্থীকে পরাজিত করে গভর্নর নিউসম সহজেই দ্বিতীয় মেয়াদে পুনঃনির্বাচিত হন। নির্বাচনি প্রচারণা চালানোর জন্য নিউসমের হাতে রয়েছে বিশাল তহবিল। ডেমোক্র্যাটিক পার্টির বড় বড় অর্থদাতাদের সমর্থনও রয়েছে তার পেছনে।

বার্নি স্যান্ডার্স প্রার্থিতার ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বয়স বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ালে ৮১ বছর বয়সি বার্নি স্যান্ডার্সকে মনোনয়ন দেওয়ার যুক্তি অনেকের কাছে অর্থবোধক নাও হতে পারে। ভারমন্ট অঙ্গরাজ্যের এই সিনেটর রাজনীতির মাঠে আছেন অনেক দিন। বেশির ভাগ ভোটারই তাকে বামশক্তির একজন আদর্শ বাহক হিসাবে দেখে থাকেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও স্যান্ডার্স ভোটের সময় ডেমোক্র্যাটদের সাথেই থাকেন। কিন্তু প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী মনোনয়নের প্রতিযোগিতায় ২০১৬ সালে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির হেভিওয়েট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের বিরুদ্ধে তিনি প্রায় জিতে গিয়েছিলেন। দুই হাজার বিশ সালের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী মনোনয়নের প্রতিযোগিতায় স্যান্ডার্স ছিলেন বাইডেনের ঠিক পেছনে, দ্বিতীয় স্থানে। হোয়াইট হাউজ দখলের তৃতীয়বারের লড়াইয়ে এবার সফল হবেন বলেই আশায় আছেন তার সমর্থকরা।

আন্তর্জাতিক-এর আরও খবর