বরিশাল সিটি নির্বাচন মহানগর আওয়ামী লীগ নিয়ে চিন্তায় খোকন সমর্থকরা

  বিশেষ প্রতিনিধি    27-04-2023    92
বরিশাল সিটি নির্বাচন মহানগর আওয়ামী লীগ নিয়ে চিন্তায় খোকন সমর্থকরা

মেয়র সাদিকের অনুসারী বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন নৌকার মেয়র প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাতের সমর্থকরা। ভোটের মাঠে এরা খোকনের পক্ষে থাকবেন কিনা সেটাই এর কারণ। এ উদ্বেগ থেকে এরই মধ্যে কমিটি বাতিলের দাবি উঠেছে খোকন সমর্থকদের ভেতরে। তবে খোকন বলছেন, ‘যেহেতু বরিশালের সর্বস্তরের মানুষ আমার সঙ্গে আছে তাই এ নিয়ে কোনোরকম টেনশন করছি না।’

এদিকে ১২ জুনের নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা না করার ঘোষণা দিয়েছেন বাসদের মেয়র প্রার্থী ডা. মনীষা চক্রবর্তী। বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে না যাওয়ার দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বুধবার এ ঘোষণা দেন তিনি। এতে লড়াই আরও সহজ হলো বর্তমান মেয়র প্রার্থীদের। যদিও ভোট কতটা সুষ্ঠু হবে তা নিয়ে সন্দিহান দুই প্রার্থী। বিগত সময়ের মতো এবারও শুরুর আগেই ভোট শেষ হয়ে যাবে কিনা সেই প্রশ্নও তুলেছেন তারা। ইভিএমের ওপরও রয়েছে অবিশ্বাস-সন্দেহ। ব্যালটে ভোট নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস। একই দাবি জানিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপির সাবেক মেয়র আহসান হাবিব কামালের ছেলে কামরুল আহসান রুপনও।

দলীয় মনোনয়ন পেয়েই ভোটের মাঠে নেমেছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগ্নে ও শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের সন্তান খোকন সেরনিয়াবাত। প্রতিদিনই তার আলেকান্দা এলাকার বাসায় ভিড় করছেন কর্মী-সমর্থকরা। তবে এ তালিকায় নেই মহানগর বা ৩০ ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের উলে­খযোগ্য কেউ। যদিও বরিশালে তার প্রথম সংবর্ধনায় উপস্থিত ছিলেন জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের প্রায় সব শীর্ষ নেতা। মনোনয়নবঞ্চিত মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল­াহও দিয়েছেন ভোটের মাঠে চাচা খোকন সেরনিয়াবাতের পক্ষে কাজ করার ঘোষণা। কিন্তু তারপরও খোকনের কাছে ভিড়ছেন না সাদিক অনুসারীরা। মহানগর আওয়ামী লীগের সিংহভাগও রয়েছেন চুপচাপ অবস্থায়।

খোকন সমর্থকদের দাবি, মনোনয়ন না পাওয়ার বিষয়টি এখনো মানতে পারেননি মহানগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বর্তমান মেয়র সাদিক আব্দুল­াহ। এ কারণেই খোকন সেরনিয়াবাতের পক্ষে কাজ করছেন না তার অনুসারীরা। এ অবস্থায় মহানগর ও ৩০ ওয়ার্ডের কমিটি বহাল রেখে নির্বাচন করাকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছেন তারা।

বিষয়টি সম্পর্কে আলাপকালে খোকনের পক্ষে মাঠে থাকা মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহমুদুল হক খান মামুন বলেন, ‘২০১৩-এর নির্বাচনে কি হয়েছিল তা সবার জানা। পরিকল্পিতভাবে হারানো হয়েছিল মেয়র প্রার্থী শওকত হোসেন হিরনকে। তখনকার সেই পরাজয়ের নেপথ্যে যারা ছিলেন তারাই এখনো আছেন দলের নেতৃত্বে। এদের ওপর ভরসা করা যায় না। তবে মহানগর আওয়ামী লীগের কেউ-ই যে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন না তা নয়। ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাদের অনেকেই যোগাযোগ রাখছেন গোপনে। এসব বিষয় নিয়ে এরইমধ্যে জননেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলেছেন আমাদের প্রার্থী। দেখা করে সবকিছু তাকে জানিয়েছেন তিনি। এখন সভানেত্রী যেটা ভালো বুঝবেন সেটাই করবেন।’

এ নিয়ে মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট একেএম জাহাঙ্গীর বলেন, ‘জননেত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া মনোনয়ন মাথা পেতে নিয়েছি। এখানে বিষয় হচ্ছে নৌকা আর আওয়ামী লীগের সম্মান। দল আর দলীয় প্রতীকের মর্যাদা রক্ষায় এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছি আমরা। খুব শিগগিরই জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা ডেকে সেখানে নির্বাচন পরিচালনা বিষয়ক কর্মপরিকল্পনা ঠিক করা হবে। এ মুহূর্তে মহানগর বা ৩০ ওয়ার্ডের নেতৃত্ব নিয়ে যারা প্রশ্ন তুলছেন তারা দল তথা নৌকার ভালো চান না। খোকন সেরনিয়াবাতের ভালো চান না।

মহানগর আর ৩০ নম্বর ওয়ার্ড মিলিয়ে ২ থেকে আড়াই হাজার নেতা আছেন। কমিটি ভেঙে দেওয়া হলে এসব নেতা, তাদের কর্মী-সমর্থক এবং পরিবারের সদস্যদের কাছে কি বার্তা যাবে? কমিটি ভেঙে দেওয়ার কথা বলা মানে শুধু দলকে বিভক্ত করাই নয়, নৌকার প্রার্থীকে ঝুঁকির মুখে ফেলা। তাছাড়া কমিটি ভাঙার কোনো সুযোগ নেই। কারণ মহানগর আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হবে ৩ জানুয়ারি।’

মেয়র প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাত বলেন, ‘গত সাড়ে ৪ বছর বরিশালের মানুষ অত্যাচারিত হয়েছে। এখানে কোনো উন্নয়ন হয়নি। সবকিছু বিবেচনা করেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে মনোনয়ন দিয়েছেন। সর্বস্তরের মানুষ যেখানে আমার সঙ্গে আছে সেখানে আর কোনো কিছু নিয়ে টেনশন করছি না।’

এদিকে নির্বাচন না করার ঘোষণা দিয়েছেন হেভিওয়েট প্রার্থী হিসাবে বিবেচিত বাসদ নেতা ডা. মনীষা চক্রবর্তী। বুধবার নগরের ফকির বাড়ি রোডে জেলা বাসদ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘বিগত সিটি নির্বাচনসহ সব নির্বাচনেই ভোট ডাকাতি আর ফলাফল ছিনতাইয়ের ইতিহাস গড়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। এই সরকার এবং তাদের আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবে না আমার দল।’ সংবাদ সম্মেলনে ভোটারদেরও কেন্দ্রে না যাওয়ার আহ্বান জানান মনীষা।

নির্বাচন থেকে সরে না দাঁড়ালেও ভোট কতটা সুষ্ঠু হবে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের উপদেষ্টা ইকবাল হোসেন তাপস। মঙ্গলবার রাতে দলীয় কর্মিসভায় এ প্রশ্ন তোলেন তিনি। বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি দাবি করে তাপস বলেন, ‘গেলবার ভোট শুরু হওয়ার ১ ঘণ্টার মধ্যে তা শেষ করেছে নৌকার প্রার্থী। এবার কতক্ষণে ভোট শেষ করার টার্গেট সেটাই দেখার বিষয়। তাছাড়া ইভিএমে ভোট নিয়ে আগাগোড়া অভিযোগ আমাদের। জাদুর এই বাক্সে যে যে প্রতীকেই ভোট দেন না কেন তা নাকি নৌকায় চলে যায়।’ তিনি বরিশালে ইভিএম বাদ দিয়ে ব্যালটে ভোট নেওয়ার দাবি জানান।

একই দাবি জানিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল আহসান রুপন বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচন যেখানে ব্যালটে করার ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন সেখানে সিটি নির্বাচনে ইভিএম কেন? জাতীয় নির্বাচনের আগে মডেল হিসাবে তারা সিটি নির্বাচনও ব্যালটে করতে পারত। তা যখন করছে না তখন ইভিএম আর নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।’

সারাদেশ-এর আরও খবর