সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ট্রাম্পকার্ড আরিফকে নিয়ে আগ্রহীদের ঘুম নেই

  বিশেষ প্রতিনিধি    12-05-2023    68
সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ট্রাম্পকার্ড আরিফকে নিয়ে আগ্রহীদের ঘুম নেই

সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) আসন্ন নির্বাচনে বর্তমান মেয়র, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আরিফুল হক চৌধুরী প্রার্থী হচ্ছেন কি না তা নিয়ে আলোচনা চলছে দেশে-বিদেশে। গত কয়েক দিন ধরে প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন স্থান এবং বিদেশ থেকে সিলেটে আত্মীয়-স্বজন, সাংবাদিক ও দলীয় নেতা-কর্মীদের কাছে ফোন করে এ ব্যাপারে জানতে চাচ্ছেন আগ্রহীরা।

বর্তমান সরকারের অধীনে বিএনপি সব নির্বাচন বর্জন করে আসছে। সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা। তিনি নির্বাচন না করলে নির্বাচন হবে একপেশে। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ছাড়া নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এ অবস্থায় আরিফুল হক চৌধুরী এখন হয়ে উঠেছেন এ নির্বাচনের ‘ট্রাম্পকার্ড’। তিনি নির্বাচনে আসবেন কি না তা নিয়ে কয়েক পক্ষের ঘুম হারাম হয়ে গেছে।

এক কথায় ‘যার বিয়ে তার খবর নাই, পাড়া-পড়শির ঘুম নাই’ সেই প্রবাদের মতো। সিলেট সিটি করপোরেশনের টানা দুইবারের জনপ্রিয় মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরানকে হারিয়ে টানা দুইবার মেয়র নির্বাচিত হন আরিফুল হক চৌধুরী। সাধারণ মানুষের কাছে রয়েছে জনপ্রিয়তাও। কিন্তু বিএনপি নির্বাচন বর্জন করায় বিপাকে রয়েছেন আরিফুল হক চৌধুরী। যার জন্য বৃহস্পতিবার পর্যন্ত নির্বাচনে প্রার্থী হবেন কি না তা পরিষ্কার করেননি। আগামী ২০ মে স্থানীয় রেজিস্টারি মাঠে ডাকা সমাবেশে নির্বাচনের ব্যাপারে তার সিদ্ধান্ত জানাবেন মেয়র আরিফ। তার সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে এবারের সিসিক নির্বাচনের গতিপ্রকৃতি। তিনি নির্বাচনে প্রার্থী হলে বদলে যাবে প্রচারণার দৃশ্যপট। গণমাধ্যম কর্মীসহ দেশের নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা আছেন সিসিক মেয়রের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায়।

তার অনুসারীরা মনে করেন, প্রার্থী হলে টানা তিনবার মেয়র হয়ে হ্যাটট্রিক করবেন আরিফ। এ জন্য বিএনপির একাংশের পাশাপাশি স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাংশও আরিফকে নির্বাচনে প্রার্থী হিসাবে দেখতে চান। এ ছাড়াও নগরীর বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজনের একাংশও আরিফকে প্রার্থী হওয়ার জন্য বলছেন। বিএনপির আরেক পক্ষ মনে করেন আরিফ অংশ নিলে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে কিন্তু ফলাফল যেকোনো মূল্যে ক্ষমতাসীন দল তাদের অনুকূলে নিয়ে যাবে। এমনটা হলে আরিফ ‘আম-ছালা’ উভয়ই হারাবেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বিএনপি নেতা যুগান্তরকে বলেন, তারা মনে করেন নির্বাচনে অংশ নিলে এবং নির্বাচন নিরপেক্ষ হলে আরিফের কাছে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বিপুল ভোটে হারবেন। কিন্তু নির্বাচন যখন প্রশাসননির্ভর তখনই এর নিরপেক্ষতা নিয়ে সংশয় থেকে যায়। তাদের এমন ধারণা জোরালো হচ্ছে স্বরাষ্ট্র সচিবসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের শীর্ষ নেতাদের সাম্প্রতিক সিলেট সফরে।

নির্বাচনে অংশ না নিতে বিএনপির কড়া বার্তা : এদিকে আসন্ন সিলেট সিটি নির্বাচনে বিএনপির সব পর্যায়ের নেতাকর্মীকে অংশগ্রহণ না করার ব্যাপারে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন দলটির শীর্ষ নেতারা। বুধবার মহানগর বিএনপির সাথে মতবিনিময়কালে এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন।

রাত ৯টায় অনুষ্ঠিত সভায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির উপস্থিত ছিলেন। এ সময় সিলেট মহানগর বিএনপির নেতাদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকে যোগ দেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সভায় মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন, সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী ও সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ সাফেক মাহবুব উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে মহানগরের ২৭টি ওয়ার্ডসহ নতুন ১৫টি ওয়ার্ডে সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদারের ব্যাপারে আলোচনা হয়। সিটি নির্বাচনে কোনো নেতাকর্মী যাতে অংশ গ্রহণ না করেন সে ব্যাপারে কঠোর নির্দেশনা দিয়ে প্রয়োজনে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে মহানগর নেতাদের প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এদিকে সিলেট সিটির ২৪নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন মহানগর ছাত্রদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক হোসেন আহমদ চৌধুরী রনি। বুধবার রাতে এলাকায় মতবিনিময় করে তিনি এ সিদ্ধান্ত জানান।

৫ মেয়র প্রার্থীসহ ৩৯১ জনের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ : সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন উপলক্ষ্যে এ পর্যন্ত মেয়র পদে পাঁচজনসহ ৩৯১ জন মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। এর মধ্যে কাউন্সিলর পদে ৩৮১ জন মনোনয়নপত্র কিনেছেন।

সারাদেশ-এর আরও খবর