টানা ছুটিতে কক্সবাজারে পর্যটকের ভীড়

সেবার মান নিয়ে প্রশ্ন :

  বিশেষ প্রতিনিধি    09-10-2022    172
 টানা ছুটিতে কক্সবাজারে পর্যটকের ভীড়

শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা মৌসুম যাই হোক। অবকাশ যাপনের জন্য পর্যটকদের প্রধান আকর্ষন কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত। তবে সবচেয়ে বেশি পর্যটকদের আনাগোনা থাকে শীতে। তার উপর যদি পড়ে যায় টানা সরকারি ছুটি তাহলে তো কথাই নেই। বেড়ে যায় পর্যটকদের বাড়তি চাপ। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। টানা তিন দিন ছুটি থাকায় বৃহস্পতিবার থেকে পর্যটক আসতে শুরু করেছে সমুদ্র নগরী কক্সবাজারে। সমুদ্র সৈকতে গিয়ে দেখা গেছে, সৈকতের কলাতলী পয়েন্ট থেকে লাবণী পয়েন্ট পর্যন্তু সৈকত জুড়ে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের ভিড়। বেশি ভিড় লক্ষ্য করা গেছে সুগন্ধা পয়েন্টে। এদিকে লাবণী পয়েন্ট থেকে পশ্চিম দিকে কবিতা চত্বরের দিকেও স্থানীয়দের পদচারণা দেখা যায়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে— দুর্গাপুজো, প্রবারণা পূর্ণিমা, ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষ্যে টানা ৩ দিনের সরকারি বন্ধ। এছাড়াও ১লা অক্টোবর থেকে ১০ অক্টোবর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি দেয়া হয়েছে। এই ফাঁকে পরিবার পরিজন নিয়ে কক্সবাজারে ঘুরতে আসছেন পর্যটকরা। টানা ছুটিতে প্রায় ৩ লাখ পর্যটকের আগমণ ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সৈকতের কলাতলী পয়েন্টে কথা হয় ঢাকা থেকে আগত রোমান আহমেদ দম্পতির সাথে। তারা বলেন- ‘বাচ্চাদের স্কুল ছুটি থাকায় ঘুরতে এসেছেন। কিন্তু গাড়ি থেকে নামতেই রুম লাগবে কিনা জিজ্ঞেস করে একদল। নানান সুবিধার কথা বলে একজন একটি হোটেল রুম ঠিক করে দেন। কিন্তু সুবিধাতো নেই ই উল্টো ভাড়াও রাখা হচ্ছে বেশি। পর্যটন শহরে প্রশাসনের উচিত হোটেল ভিত্তিক রুমের ভাড়া ও খাবারের দাম ঠিক করে দেয়া।’ অপরদিকে কক্সবাজারে আগত পর্যটকদের অনেকেই ঘুরতে যান ইনানী, পাটুয়ার টেক, হিমছড়ি, রামু বৌদ্ধ মন্দির, দুলাহাজেরা সাফারি পার্ক ও মহেশখালী দ্বীপ দেখতে। মহেশখালী থেকে অনেকে ছুটে যান নির্জন দ্বীপ সোনাদিয়ায় রাত্রি যাপন করতে। আবার কেউ ছুটে যান একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে। কক্সবাজার বিএমডব্লিউ ঘাট থেকে এই মৌসুমে প্রথমবারের মত সেন্টমার্টিনের উদ্দেশ্যে সাড়ে ৭’শ যাত্রী নিয়ে এমবি কর্ণফুলী এক্সপ্রেস জাহাজটি ছেড়ে যায় ৬ অক্টোবর। কিন্তু জাহাজে দুর্গন্ধ ছড়ানো এবং অব্যবস্থাপনার কারণে পর্যটকরা বমি করতে শুরু করে। যার কারণে জাহাজটি ফেরার সময় মাত্র ৩০ জন যাত্রী কক্সবাজার ফিরে আসে। অপরদিকে সৈকতের লাবণী পয়েন্টে কথা হয় আহসান, রিফাত, আজিজ সহ কয়েকজন পর্যটকের সাথে। তারা জানান, পর্যটক বুঝতে পেরে এখানকার গাড়ি চালকরা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে। তার উপর খাবারের দামও চড়া। বীচে নামলে পড়তে হয় ফটোগ্রাফারদের হয়রানির মুখে। তারা জানান- পুরো সৈকত জুড়ে ময়লা আবর্জনায় ভরপুর। এছাড়াও লাবনী বীচ ভেঙ্গে যাওয়ায় সৈকতের সৌন্দর্য বিনষ্ট হয়েছে। এদিকে ইতিমধ্যে হোটেল অগ্রিম বুকিং হওয়ায় নতুন পর্যটকদের নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন হোটেল মালিকরা। এই বিষয়ে হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার জানান- কক্সবাজারে প্রায় সাড়ে ৫শ হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট ও কটেজ রয়েছে। এই ছুটিতে আরো পর্যটক আসবে। তাদের রাত্রিযাপনের বিষয়ে চিন্তা করতে হবে। কক্সবাজার নাগরিক আন্দোলনের সদস্য সচিব এইচ এম নজরুল ইসলাম বলেন, ‘কক্সবাজারে এক দেড় বছর ধরে ছিনতাই বেড়েছে। ছিনতাইকারীদের হাতে শুধু পর্যটক নয় প্রতিনিয়ত ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছে স্থানীয়রাও। মাঝেমধ্যে পুলিশের কিছু অভিযান দেখা গেলেও সেখানে প্রকৃত ছিনতাইকারীরা থাকে ধরাছোঁয়ার বাইরে। পর্যটন মৌসুমে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গুলোর টহল জোরদার করতে হবে। প্রয়োজনে অপরাধপ্রবন স্থান গুলো চিহ্নিত করে সেখানে পুলিশের অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে।’ ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার অঞ্চলের সহকারী পুলিশ সুপার চৌধুরী মিজানুজ্জামান জানিয়েছেন- পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে ট্যুরিস্ট পুলিশ সার্বক্ষণিক কাজ করছে। এছাড়াও পর্যটক বাড়ায় পুলিশের অতিরিক্ত টহল বাড়ানো হয়েছে। এদিকে জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ জানান- পর্যটকদের নিরাপত্তায় সার্বক্ষণিক অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে রয়েছে। পর্যটকদের অভিযোগ পেলে সাথে সাথে ব্যবস্থা নেয়া হবে।সিভয়েস

পর্যটন-এর আরও খবর