একদফার আন্দোলন দ্রুত মাঠে নিতে চায় বিএনপি

  বিশেষ প্রতিনিধি    28-05-2023    85
একদফার আন্দোলন দ্রুত মাঠে নিতে চায় বিএনপি

শিগগিরই সরকার পতনের একদফার আন্দোলনে নামতে চায় বিএনপি। এ জন্য ঘোষিত ১০ দফাকে এক দফায় নামিয়ে আনার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে দলটি। এ নিয়ে দফায় দফায় বৈঠকও করছেন দলের শীর্ষ নেতারা। সে ক্ষেত্রে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা সমমনা রাজনৈতিক জোট ও দলের নেতাদের এক মঞ্চে জড়ো করে আগামী মাসেই (জুন) সরকারপতনের ডাক দিতে পারে বিএনপি।

গত শুক্রবার বগুড়া জেলা জনসমাবেশে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘রাজপথে ফয়সালা করার যে আন্দোলন, অতি শিগগির সেই আন্দোলনের ডাক পাবেন। সেই আন্দোলনের জন্য প্রস্তুতি নিন।’

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এক দফায় নামার আগে যৌথ ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত হবে। এ জন্য রাষ্ট্র মেরামতের ২৭ দফাকে ৩১ দফায় উন্নীত করে যৌথ ঘোষণাপত্রের খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে এই খসড়া দেওয়া হয়েছে সমমনা রাজনৈতিক জোট ও দলের হাতে। খসড়ায় কারও কোনো আপত্তি বা পরামর্শ থাকলে তা দুই-এক দিনের মধ্যে জমা দিতে বলা হয়েছে। এরপর সবার মতামত এক করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির পরবর্তী বৈঠকে যৌথ ঘোষণা চূড়ান্ত হবে।’

এদিকে আন্দোলনের মূলশক্তি- ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সক্ষমতা পরখ করতে ‘তরুণ সমাবেশ’ করার চিন্তা করছে বিএনপি। প্রথমে চট্টগ্রাম এবং পরে ঢাকায় এ সমাবেশ হবে।

গত ঈদুল ফিতরের কারণে ১৫ দিনের মতো রাজপথে জোরালো কোনো কর্মসূচি ছিল না বিএনপির। তারপরও নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা, গ্রেপ্তার ও জামিন বাতিলের ঘটনা বেড়ে যায়। এ অবস্থায় করণীয় নিয়ে দলের কমিটির নেতারা বৈঠক করেন। ওই বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত ১৩ মে ঢাকায় জনসমাবেশ করে বিএনপি। ওই সমাবেশ থেকে চার পর্বে ৮২ সাংগঠনিক জেলায় জনসমাবেশে কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এ ছাড়া ঢাকাসহ দেশের সব মহানগরীতে পদযাত্রা কর্মসূচিও দেওয়া হয়। ১৫ দিনব্যাপী ওই কর্মসূচি আজ রবিবার শেষ হচ্ছে।

বিএনপির নীতিনির্ধারকরা বলছেন, এ কর্মসূচি এক দফায় নামার প্রস্তুতির অংশ। তাদের মূল্যায়ন হলো, এবারের কর্মসূচিতে আন্দোলনের গতি বেড়েছে। সভাসমাবেশে জমায়েতও ছিল ভালো। এর মধ্যে গত ২৪ মে রাতে মার্কিন নতুন ভিসানীতি ঘোষণার পর নেতাকর্মীরা আন্দোলনের মাঠে নতুনভাবে উদ্দীপনা পেয়েছে। মাঠের এই চিত্র এক দফার আন্দোলন সফল করার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করেন নেতারা।

দলটির একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, সর্বশেষ স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এক দফার আন্দোলনকে জাতীয় আন্দোলনে রূপ দেওয়ার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। সে অনুযায়ী যৌথ ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সমমনাদের মতামতের ভিত্তিতে আগামীকাল সোমবার স্থায়ী কমিটির পরবর্তী বৈঠকে যৌথ ঘোষণা চূড়ান্ত করা হতে পারে। এর পর যুগপৎ আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী দলগুলো এক মঞ্চ থেকে রাষ্ট্র পরিচালনার যৌথ ঘোষণা দেওয়ার পাশাপাশি এক দফার ভিত্তিতে নতুন কর্মসূচি দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা করছে।

বিএনপির নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীর কর্মসূচি শেষে নতুন কর্মসূচি শুরু হবে। আগামী মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে বিভাগীয় পর্যায়ে তরুণ সমাবেশ করার ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করছে দলের নীতিনির্ধারকেরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের জ্যেষ্ঠ এক নেতা জানান, বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব বিভিন্ন জেলা ও মহানগরের গুরুত্বপূর্ণ নেতা, দলের সাবেক এমপি-মন্ত্রী এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের সঙ্গে বৈঠক করছেন। এ ছাড়া দলের বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এবং অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে কয়েক দফা সমন্বয় বৈঠক করেছেন। সবাইকে দ্রুত এক দফার আন্দোলনে নামার প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

গত ২৩ মে ধানমন্ডিতে এক সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বরচন্দ্র রায় বলেন, ‘অচিরেই বিএনপি সরকার পতনের আন্দোলনের ঘোষণা দেবে।’

স্থায়ী কমিটির সর্বশেষ কয়েকটি বৈঠকে এক দফার আন্দোলনে যাওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে নেতারা বলেন, হঠাৎ বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলার সংখ্যা বেড়ে গেছে। এ অবস্থায় এক দফা আন্দোলনের দিনক্ষণ এগিয়ে আনার প্রস্তাব দেন অনেকে।

বিএনপির এক জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ‘প্রথমে এক দফা আন্দোলনে নামার পরিকল্পনা ছিল সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে। কিন্তু সামনে আগস্ট মাস এবং বর্ষাকাল রয়েছে। সেদিক থেকে আন্দোলনের জন্য জুলাইকে এক দফা আন্দোলনের টার্গেট করা হয়েছিল। হঠাৎ ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিএনপির কর্মসূচিতে হামলা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেপ্তার এবং জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানো সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় দলের শীর্ষ নেতৃত্ব এক দফা আন্দোলন আরও এগিয়ে আনার পরিকল্পনা করেন।’

এ অবস্থায় এক দফা আন্দোলনে নামতে কী ধরনের কর্মসূচি দেওয়া যায়Ñ তা নিয়ে দলের স্থায়ী কমিটির তিনটি বৈঠক হয়। এসব বৈঠকে নীতিনির্ধারকরা তাদের মতামত তুলে ধরেন। তারা মনে করেন, বিএনপিকে অপ্রস্তুত রেখে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তড়িঘড়ি করে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে পারে। যেভাবে দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা দেওয়া হচ্ছে, গ্রেপ্তার করা হচ্ছে এবং জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানো হচ্ছে- এক দফা আন্দোলনের দিনক্ষণ এগিয়ে না আনলে শেষ পর্যন্ত আন্দোলন করার মতো নেতাকর্মী কারাগারের বাইরে থাকবে না। এ অবস্থায় নীতিনির্ধারকরা তাদের মতামত তুলে ধরেন।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল আমাদের সময়কে বলেন, ‘এক দফা আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই। কারণ এ সরকার একটি প্রতারক সরকার। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের আগে নির্বাচন বিষয়ে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তা রাখেনি। ফলে তাদের বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই। খুব দ্রুতই আমরা এক দফা আন্দোলনে নামব। এ জন্য দলীয় নেতাকর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে আমরা কাজ করছি।’

জাতীয়-এর আরও খবর