নিজেদের জনগণের খাদেম বলে বিবেচনা করতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

  বিশেষ প্রতিনিধি    02-11-2022    139
নিজেদের জনগণের খাদেম বলে বিবেচনা করতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

‘সরকারি কর্মচারী ভাইয়েরা, আপনাদের জনগণের সেবায় নিজেদের উৎসর্গ করতে হবে। এবং জাতীয় স্বার্থকে সবকিছুর ঊর্ধ্বে স্থান দিতে হবে। এখন থেকে অতীতে আমলাতান্ত্রিক মনোভাব পরিবর্তন করে নিজেদের জনগণের খাদেম বলে বিবেচনা করতে হবে।’

১৯৭২ সালে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের উদ্দেশ করে দেওয়া বঙ্গবন্ধুর ভাষণকে উদ্ধৃতি করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘অর্থাৎ জনগণের সেবক হিসেবেই নিজেদের বলতে হবে। আমি এটাই চাই যে জনগণের সেবা করে এ দেশকে এগিয়ে নিতে হবে।’

বুধবার (২ নভেম্বর) বিসিএস প্রশাসন একাডেমিতে ১২৪, ১২৫ ও ১২৬তম আইন ও প্রশাসন কোর্সগুলোর সমাপনী ও প্রশিক্ষণার্থীদের সনদ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

এসময় জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন একই বিভাগের সিনিয়র সচিব কে এম আলী আজম।

নবীন কর্মকর্তাদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‌‘বাঙালি সব থেকে মেধাবী। পাকিস্তান আমলে তারা একটু সুযোগও পেত না। একজন বাঙালিও কোনোদিন সেক্রেটারি হওয়ার সুযোগ পায়নি। অথচ জ্ঞানে সবচেয়ে উৎকর্ষ বাঙালিদের বেশি ছিল। তারপরও তারা স্থান পায়নি। এ কথা মনে রাখতে হবে। একজন সচিব বাঙালি ছিল না। কোনও জেনারেল, মেজর জেনারেল, ব্রিগেডিয়ার কেউই বাঙালি ছিল না। একজন মাত্র কর্নেল হতে পেরেছিল। তার নিচে সব পদ। সব পদ তারাই দখল করেছিল। আজ আমরা সবকিছুই হতে পারছি সেটা দেশ স্বাধীন হয়েছে বলেই। এ কথা মাথায় রেখে সবাইকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্যবদলে কাজ করে যাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০০৮-এর নির্বাচনে আমরা ঘোষণা দিয়েছিলাম রূপকল্প ২০২১। তারই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা করে আমরা আমাদের নির্দিষ্ট কাজগুলো করি। পাশাপাশি জাতিসংঘ ঘোষিত এমডিজি (সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা) সফলভাবে বাস্তবায়ন করি। এখন এসডিজি ২০৩০ (টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা), এটাও আমাদের বাস্তবায়ন করতে হবে। এ জন্য সমন্বয় করে সব পরিকল্পনা আমরা নিচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘পরিকল্পনা গ্রহণের ক্ষেত্রে আমাদের নীতিমালা হচ্ছে, যে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করলে দ্রুত ফল আসবে, মানুষের কল্যাণে কাজে লাগবে সেটিই নেওয়া হবে। একটা বিরাট অঙ্কের টাকা পেলাম আর একটা পরিকল্পনা নিলাম, সেটা আমরা নেব না।’

বৈশ্বিক পরিস্থিতির চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘করোনার পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, নিষেধাজ্ঞার কারণে প্রতিটি দেশে জ্বালানি সংকট দেখা দিয়েছে। এ কারণে জ্বালানির দাম বাড়ায় অস্থিরতা বেড়েছে। সে জন্য এই মুহূর্তে করণীয় কী, তা আমাদের ঠিক করতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জুডিশিয়াল সার্ভিসে কখনো আবেদন করতে পারত না পাকিস্তান আমলে। জাতির পিতা সেই পথ খুলে দেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার পরপরই পাকিস্তানি আমলের পদ্ধতি পরিবর্তন করে অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস রিঅরগানাইজেশন কমিটি গঠন করে দিয়ে স্বাধীন রাষ্ট্রের উপযোগী প্রশাসনব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।

সরকারি কর্মকর্তাদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি মনে করি, যারা এই নবীন অফিসার, তাদের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে। এজন অফিসার একটা এলাকায় যখন কাজ করে, ওই এলাকার সার্বিক উন্নয়নে বিশাল ভূমিকা রাখার একটা সুযোগ আছে। অনেকে এসে বলবে, এটা-ওটা চাই, এখানে এটা করতে হবে, ওটা করতে হবে। ওভাবে হবে না। সঠিক পরিকল্প নিয়ে এগোতে হবে। তাহলে আমরা সঠিকভাবে উন্নতি করতে পারব। আমি মনে করি আমাদের নবী অফিসাররা সেভাব ব্যবস্থা নেবেন।’

তিনি বলেন, ‘আপনাদের সামনের দিনগুলো আরও সম্ভাবনাময় হোক, সুন্দর হোক, উজ্জ্বল হোক, সফল হোক, সেই কামনা করি।’

প্রধানমন্ত্রী এ সময় ‘১২৪, ১২৫ ও ১২৬তম আইন ও প্রশাসন কোর্স সূচারুরূপে সম্পন্ন করার জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, বিসিএস প্রশাসন একাডেমিসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে নিয়োজিত সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।

জাতীয়-এর আরও খবর