বাজেটে ভর্তুকির চাপ কমানোর পথ খোঁজা হচ্ছে

  বিশেষ প্রতিনিধি    25-12-2022    146
বাজেটে ভর্তুকির চাপ কমানোর পথ খোঁজা হচ্ছে

চলতি বাজেটের তুলনায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকির চাপ বাড়ছে। আগামী অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকি খাতে ব্যয় বরাদ্দের প্রাক্কলন করা হয়েছে এক লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের ভর্তুকির মূল বরাদ্দের ৪০ ভাগ এবং সংশোধিত বরাদ্দের ২৫ ভাগ বেশি।

অর্থ বিভাগের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ভর্তুকির চাপ কমাতে বিদ্যুৎ, পানি ও সারের উপর দেওয়া ভর্তুকি কমানোর পথ খোঁজা হচ্ছে।

জানা গেছে, আগামী অর্থবছরের জন্য প্রাথমিকভাবে বাজেট প্রাক্কলন করা হয়েছে সাত লাখ ৫০ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা। এই হিসেবে বাজেটের ১৫ ভাগ অর্থই ব্যয় করতে হবে ভর্তুকি খাতে। ভর্তুকি খাতে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়ের কারণে আগামীতে দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতায় চাপ বাড়বে।

সূত্র জানায়, ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে বাজেটে ভর্তুকি, প্রণোদনা ও নগদ ঋণ খাতে বরাদ্দ দেওয়া রয়েছে ৮১ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। কিন্তু বছর শেষে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে অতিরিক্ত চাহিদার কারণে ভর্তুকির পরিমাণ ২০ হাজার ৫১০ কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে। এর ফলে, সংশোধিত বাজেটে ভর্তুকির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ দুই হাজার কোটি টাকার মতো।

চলতি অর্থবছরের বাজেটে সবচেয়ে বেশি ভর্তুকি বরাদ্দ রয়েছে বিদ্যুৎ খাতে ১৭ হাজার কোটি টাকা। গত অর্থবছরে যা ছিল ১১ হাজার ৯৬৩ কোটি টাকা। এলএনজি (আমদানিকৃত তরল প্রাকৃতিক গ্যাস) খাতে বরাদ্দ রয়েছে ছয় হাজার কোটি টাকা (গত বছর একই পরিমাণ অর্থাৎ ছয় হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল)। খাদ্য খাতে ভর্তুকি রয়েছে পাঁচ হাজার ৯৬৫ কোটি টাকা (গত বছর ৪ হাজার ৬৪১ কোটি টাকা)। কৃষি খাতে ভর্তুকি ১৬ হাজার কোটি টাকা (গত বছর ১৫ হাজার ১৭৩ কোটি টাকা)। টিসিবি ও অন্যান্য খাতে ভর্তুকি বরাদ্দ ১১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। প্রণোদনা (রপ্তানি ও রেমিট্যান্স) ১৫ হাজার ২২৫ কোটি টাকা (গত বছর ছিল ১৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা) এবং নগদ ঋণখাতে এবার ভর্তুকি রয়েছে ১০ হাজার কোটি টাকা।

ভর্তুকির সামগ্রিক বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে বলেন, গত ২০ ডিসেম্বর অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে বাজেট সম্পর্কিত সম্পদ কমিটির একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে, তাতে ভর্তুকি অতিরিক্ত চাপের বিষয় নিয়ে অনেকটা উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। ভর্তুকি কমানোর জন্য দ্রুত বিদ্যুৎ, সার ও পানির দাম বাড়ানোর সুপারিশও করা হয়েছে। বলা হয়েছে, বিদ্যমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে ভর্তুকির এই চাপ অর্থনীতির উপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে বিদ্যুৎ ও পানির দাম বাড়ানোর বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখানো হলেও এই মুহূর্তে সারের দাম বাড়ানো সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

সূত্র আরও জানায়, প্রতি বছরই ভর্তুকির পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ভর্তুকি খাতে বরাদ্দ ছিল ৪৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এর আগে, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ছিল ৪২ হাজার ১০০ কোটি টাকা। ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে ৩৭ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরের (২০১৭-২০১৮) বাজেটে ভর্তুকি, নগদ সহায়তা, প্রণোদনা খাতে বরাদ্দ ছিল ২৮ হাজার ৪৫ কোটি টাকা, যা মোট জিডিপির ১ দশমিক ৩ ভাগ। তার আগের অর্থবছরের বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৭২৯ কোটি টাকা, যা মোট জিডিপির ১ দশমিক ২ ভাগ। যদিও সংশোধিত বাজেটে এ ভর্তুকির পরিমাণ ২৩ হাজার ৮৩০ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। এর আগে, ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকি খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছিল ১৪ হাজার ৪১৮ কোটি টাকা।

আন্তর্জাতিক নানা কারণে রপ্তানি কমেছে, আমদানি খাতে ব্যয় বাড়ছে বিশেষ করে নিত্যপণ্যের দাম আকাশ ছোঁয়া। সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমে গেছে। এছাড়া সামনে জাতীয় নির্বাচন। এ অবস্থায় ভর্তুকি কমানো নিয়ে দ্বিধায় পড়েছে সরকার।

জাতীয়-এর আরও খবর