তারেক-মোশাররফ দ্বন্দ্বে অস্থির বিএনপি

  বিশেষ প্রতিনিধি    10-01-2023    167
তারেক-মোশাররফ দ্বন্দ্বে অস্থির বিএনপি

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একমাস কারাগারে থাকার পর ৯ জানুয়ারি জামিনে মুক্ত হয়েছেন। তার কারাগারে থাকার কারণে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং জেষ্ঠ্য নেতা ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন দলের হাল ধরেছিলেন। কিন্তু তার এই দলের হাল ধরা নিয়ে এখন দলের মধ্যে শুরু হয়েছে নানা অস্থিরতা।

ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বিএনপির নেতৃত্ব নেয়ার পর সবচেয়ে বেশি অস্বস্তিতে আছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান লন্ডনে পলাতক তারেক জিয়া।

বিএনপির একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, তারেক জিয়া মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে অত্যন্ত স্বাচ্ছন্দ্যে থাকতেন। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে যেকোনো নির্দেশনা দিলে বিনা বাধায় এবং বিনা বাক্য ব্যয়ে সেই পরামর্শ তিনি শুনতেন এবং সেই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করার জন্য চেষ্টা করতেন। অনেক ক্ষেত্রে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলতেনও না যে, এটা তারেক জিয়ার নির্দেশনা। তিনি সব দায়িত্ব নিজের কাধে তুলে নিয়ে সেই নির্দেশনা বাস্তবায়নের চেষ্টা করতেন। আর এ কারণেই দলের মধ্যে তিনি সমালোচিত হতেন।

বিএনপির অনেক নেতাই বলেছেন, তারেক জিয়া একেক সময় একেক ধরনের নির্দেশনা দেন এবং নির্দেশনাগুলোর বেশির ভাগই হঠকারী, স্ববিরোধী। কিন্তু মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কোনো জিজ্ঞাসা ছাড়াই এবং কোনো রকম যুক্তি-তর্ক আরোপ না করেই এই সিদ্ধান্তগুলোকে মেনে নিতেন। সিদ্ধান্তগুলোকে বাস্তবায়নের চেষ্টা করতেন। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গ্রেফতার হওয়ার পর, সেক্ষেত্রে একটি শূন্যতা তৈরি হয়েছিল। বিএনপির দ্বিতীয় নেতা ছিলেন রুহুল কবির রিজভী। রুহুল কবির রিজভীর সঙ্গেও তারেক জিয়ার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। কিন্তু রুহুল কবির রিজভীও গ্রেফতার হওয়ার পর তারেক জিয়া দ্বিতীয় কোনো মাধ্যমও পাননি, যার মাধ্যমে তিনি তার সিদ্ধান্তগুলো দলের নেতাদের জানাবেন।

এছাড়া দলের আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের সঙ্গেও তারেক জিয়ার নিয়মিত কথাবার্তা হতো। দল পরিচালনার বিভিন্ন বিষয়ে তিনি নির্দেশনা দিতেন। সে পথও এখন বন্ধ। এখন বিএনপিতে যারা জেলের বাইরে আছেন, তাদের কারো সঙ্গেই তারেক জিয়ার অতো গভীর এবং মধুর সম্পর্ক নয়। বিশেষ করে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের আলাদা ব্যক্তিত্ব এবং বিএনপিতে তার দীর্ঘদিনের অবস্থান ইত্যাদি কারণে যা খুশি নির্দেশনা দিতে পারছেন না।

বিএনপির বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, তারেক জিয়ার অনেক নির্দেশনাই ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন উপেক্ষা করছেন বা এটিকে ভেবে দেখবেন বলে বলছেন। গত কয়েকদিনে তারেক জিয়া একাধিক বিষয়ে খন্দকার মোশাররফকে নির্দেশনা দিয়েছেন, যেসব নির্দেশনাগুলো তিনি শোনেননি।

বিএনপির বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, তারেক জিয়ার পক্ষ থেকে জামায়াতকে নাশকতা করার জন্য বলা হয়েছিল। এই ব্যাপারে জামায়াত ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। কিন্তু মোশাররফ হোসেন তাদের নিরুৎসাহিত করেন এবং এই ধরনের ঘটনা এখন না ঘটানোর জন্য নির্দেশনা দেন। তারেক জিয়া ১১ জানুয়ারি বিএনপির গণঅবস্থান কর্মসূচি নিয়েও একটা অস্থির পরিস্থিতি তৈরি করার জন্য পরামর্শ দিচ্ছেন। কিন্তু ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন এখন শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে এগিয়ে নেয়ার পক্ষে বলে জানা গেছে।

ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন তারেক জিয়াকে জানিয়েছেন, বাংলাদেশের বাস্তবতা এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়েই কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। হঠকারী কোনো কিছুই এখন করা যাবে না। হঠকারী কর্মসূচিই কেউ পছন্দ করে না। ফলে তারেক জিয়া বিএনপিকে নিয়ে যে এক্সপেরিমেন্ট করতেন, সেটি অনেকটাই বন্ধ হয়ে গেছে। আর এই দুই নেতার দ্বন্দ্বের কারণেই বিএনপির মধ্যে এক ধরনের সিদ্ধান্তহীনতা চলছে।

জাতীয়-এর আরও খবর