শবে বরাত পালনে করণীয় ও বর্জনীয়

  বিশেষ প্রতিনিধি    07-03-2023    232
শবে বরাত পালনে করণীয় ও বর্জনীয়

শবে বরাত। আরবি ভাষায় ‘শব’ অর্থ রাত, আর ‘বরাত’ শব্দের অর্থ ভাগ্য। এই দুইটি শব্দ মিলিয়ে গঠিত শবে বরাত এর অর্থ ‘ভাগ্য রজনী’ বা ‘ভাগ্যের রাত’ বা ‘ভাগ্য নির্ধারণের রাত’।

ইসলাম ধর্ম মতে মহান আল্লাহ তার বান্দার জন্য আরবি শাবান মাসের মাঝামাঝি সময়ে (শাবানের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত) পরবর্তী এক বছরের জন্য রিজিক নির্ধারন করার রাত্রিই হলো শবে বরাত নামে পরিচিত। তবে এই নাম শুধু উপমহাদেশে প্রযোজ্য। কেননা পবিত্র কোরআনুল কারিমে সরাসরি এই রাত নিয়ে কিছু বলা না থাকলেও হাদিসে একে ‘লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান’ বা ‘মধ্য শাবানের রজনী’ বলা হয়েছে।

মহান আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে ও তাদের গুনাহ মাপের উদ্দেশ্যে এ রাতে মুসলমানগণ এবাদত বন্দেগী করে থাকে। তবে বর্তমানে সমাজে শবে বরাত নিয়ে কিছু সামাজিক কুসংস্কার রয়েছে। যে কাজগুলো করা একদমই উচিত নয়। তাই পবিত্র শবে বরাত পালনের নিয়ম সম্পর্কে সব মুমিন মুসলমানদেরকে জানতে হবে।

শবে বরাত পালনের নিয়ম

শবে বরাত পালনের নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। যেমন শাবান মাসে প্রিয় নবী বেশি বেশি নফল নামাজ ও রোজা রাখার তাগিদ দিয়েছেন। এজন্য ধর্মপ্রাণ মুসল্লীগণ সাবান মাসের মাঝামাঝি সময়ে সারারাত ইবাদত বন্দুকের মাধ্যমে কাটিয়ে থাকেন। পরের দিন অনেকেই নফল রোজা রাখে।

মহান আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে এবং আপনার গুনাহ মাফের উদ্দেশ্যে আপনি সারারাত ইবাদত বন্দেগী করতে পারেন। তবে আপনার ইবাদত যাতে এরকম না হয় সারারাত নামাজ পড়লেন; কিন্তু ফজরের ফরজ নামাজ আদায় করলেন না। শবে বরাত পালনের নিয়ম সম্পর্কে জানতে হলে নিচের দেখানো নিয়ম গুলো দেখতে পারেন।

শবে বরাতে করণীয়

বিভিন্ন হাদিস থেকে শাবান মাসের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে। শাবান মাসের মধ্য সময়ে শবে বরাত পালন করা হয়। এ রাতে গোসল করা মুস্তাহাব, গোসলের পর দুই রাকাত তাহিয়াতুল ওজুর নামাজ, তারপর দুই রাকাতের নিয়তে প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতিহা ও সূরা ইখলাছ সহকারে ৮ রাকাত নামাজ আদায় করা অত্যন্ত সওয়াবের কাজ। নফল নামাজের পাশাপাশি আপনি চাইলে পরের দিন নফল রোজা রাখতে পারেন। কারণ রোজা রেখে ইবাদত করা অবশ্যই উত্তম। শবে বরাত উপলক্ষে মহান আল্লাহর নিকট ক্ষমাপ্রার্থনা করতে হবে। বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত ও জিকির করতে হবে। এছাড়াও আমাদেরকে আমাদের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হতে হবে এবং আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে।

শবে বরাতে বর্জনীয় কাজ

শবেবরাতকে ঘিরে অনেক মুসল্লিগঞ্জ যেমন এবাদত বন্দেগি করে থাকেন তেমনি আমাদের সমাজে এক শ্রেণির লোক আছে যারা এই রাতে বিভিন্ন বিধর্মীদের মতো আচরণ করে থাকে। পবিত্র শবে বরাতের যেরকম নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলতে হয় ঠিক তেমনি কিছু কাজ থেকে আমাদেরকে দূরে থাকতে হবে। আতশবাজি, পটকা ফোটানো, ইবাদত-বন্দেগি বাদ দিয়ে খামাখা ঘোরাঘুরি করা, অযাচিত আনন্দ-উল্লাস করা, বেহুদা কথাবার্তা ও বেপরোয়া আচরণ করা, অন্য কারো ইবাদতের বা ঘুমের বিঘ্ন ঘটানো, হালুয়া-রুটি বা খাবারদাবারের পেছনে বেশি সময় নষ্ট করা, ইবাদতে উদাসীনতা সমীচীন নয়। সুতরাং শবে বরাতের বর্জনীয় কাজ থেকে দূরে থেকে মহান আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য আমাদেরকে এবাদত বন্দেগী করতে হবে।

শবে বরাতে যেসব কাজ করা যাবে না

শবে বরাতে নফল আমলের জন্য দলে দলে মসজিদে এসে সমবেত হওয়া। এই ধরনের কোনো আমলের প্রমাণ হাদিস শরিফে নেই। আর সাহাবায়ে কেরামের যুগেও এর রেওয়াজ ছিল না। তবে কোনো প্রকার ঘোষণা বা আহ্বান ছাড়া মানুষজন যদি মসজিদে একত্র হয়ে যায়, তাহলে তারা একাকী ইবাদত করতে পারে। এতে কোনো সমস্য নেই।

লক্ষণীয় যে, এক শ্রেণির যুবক আছে- তারা এ রাতে বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে রাস্তায় সময় কাটায়, উচ্চ স্বরে জিকির করে; অথচ ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে এগুলো সম্পূর্ণ বর্জনীয়। কারণ এতে কোনো রোগাক্রান্ত ব্যক্তির কষ্ট হতে পারে। আর অন্যকে কষ্ট দিয়ে নফল ইবাদত করার কোনো বিধান শরিয়তে নেই।

পটকা বাজানো, খিচুড়ি পাকিয়ে বণ্টন করা; মিষ্টি, হালুয়া ও শিরনি বিতরণ; মসজিদে একত্র হয়ে ইবাদত, জিকির, আতশবাজি, চেরাগপ্রথা ও কবরস্থানে মেলার মতো গমনাগমন ইত্যাদি সুস্পষ্ট বিদআত ও কুসংস্কার।

সর্বশেষ কথা

সঠিকভাবে ইবাদত বন্দেগীর মাধ্যমে মহান আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়। ঠিক তেমনি আমরা যদি ভুল পথে এবাদত বন্দেগী করে থাকি তাহলে গুনাহের শেষ নেই।

ধর্ম ও জীবন-এর আরও খবর