বিশ্ব কূটনীতি এখন চীনমুখী

  বিশেষ প্রতিনিধি    27-03-2023    139
বিশ্ব কূটনীতি এখন চীনমুখী

এই সপ্তাহেই চীন সফরে যাচ্ছেন স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ। প্রায় কাছাকাছি সময়ে বেইজিং সফর করবেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন। আর ম্যাক্রনের সঙ্গে যাচ্ছেন ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রধান উরসুলা ভোন ডের লিয়েন। এই দুই সফরের আগে বেইজিং সফরের পরিকল্পনা ছিল ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা দি সিলভার। কিন্তু অসুস্থতার কারণে একেবারে শেষ মুহূর্তে সফর স্থগিত করেছেন লুলা। খবর রয়টার্স, আল জাজিরা ও এবিসি নিউজ।

গুরুত্বপূর্ণ এসব সফর এমন সময় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে যখন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং মাত্র কয়েকদিন আগে মস্কো সফর সমাপ্ত করেছেন। এই সফরগুলো পৃথক সময়ে এবং পৃথক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে অনুষ্ঠিত হলেও একটি নির্দিষ্ট একটি লক্ষ্য রয়েছে- তা হলো ইউক্রেন যুদ্ধ। বেইজিংয়ের মধ্যস্থতায় সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে সমঝোতা হওয়ার পর বিশ্ব অঙ্গনে চীনের গুরুত্ব বেড়েছে। এরপরই শান্তি প্রস্তাব নিয়ে মস্কো সফর করেন চীনের প্রেসিডেন্ট। চীনের শান্তির রূপরেখা ইতিবাচক হিসেবে নিয়েছে মস্কো। এমন প্রেক্ষাপটে তিন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান চীন সফরে যাচ্ছেন।

আল জাজিরার খবরে বলা হয়, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা দি সিলভা চলতি সপ্তাহেই ৫ দিনের চীন সফরের পরিকল্পনা করেছিলেন। আগামীকাল ২৮ মার্চ চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে তার বৈঠকের কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট দপ্তর জানিয়েছে, ৭৭ বছর বয়সী বামপন্থি প্রেসিডেন্ট লুলা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসজনিত কারণে তিনি জ্বরে ভুগছেন। তার মধ্যে নিউমোনিয়ারও লক্ষণ দেখা গেছে। এ অবস্থায় তার চীন সফর স্থগিত করা হয়েছে। তবে অতিসত্বর তার চীন সফরসূচি পুনর্নির্ধারণ করা হবে।

এদিকে দুই মাসের কম সময় আগে লুলা মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে হোয়াইট হাউসে দেখা করেছেন। ওই বৈঠকে ওয়াশিংটনকে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্কে ভারসাম্য বজায় রাখার অনুরোধ করেছেন। ব্রাজিলের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও জ্যেষ্ঠ সিনেটর হ্যামিলটন মোরাও বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের বৈরী সম্পর্ক সত্ত্বেও ব্রাজিল চীনের সঙ্গে নমনীয় সম্পর্ক বজায় রাখতে চায়।

এদিকে স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজকে চীন সফরের আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ জানিয়েছেন শি জিনপিং। সংবাদমাধ্যম এল পেইস গত বুধবার সর্বপ্রথম সেই আমন্ত্রণের খবর প্রকাশ করে। পরে স্পেনের প্রেসিডেন্সি মন্ত্রী ফেলিক্স বোলাওস একটি সাক্ষাৎকারে তা নিশ্চিত করেন। বোলাওস বলেন, আগামী সপ্তাহে (৩০-৩১ মার্চ) সফরটি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, (ইউক্রেন) যুদ্ধ মধ্যস্থতায় চীনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তার কথায়- সফরটি বাণিজ্য ও অর্থনীতির দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ হতে যাচ্ছে। চীনের বাজারে স্পেনের ব্যবসায়ীরা যেন সফলভাবে কাজ করতে পারে তা নিয়ে আলোচনা হবে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সভায় যোগ দিয়েছিলেন সানচেজ। সেখানে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ইউক্রেনে শান্তি প্রতিষ্ঠায় চীনের অবস্থান কী তা আগে আমরা খুঁজে বের করব এবং পরে সেই বার্তা আমরা ইউক্রেনের জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছাব।

রয়টার্সের খবরে বলা হয়, স্পেন ন্যাটোর সদস্য এবং দেশটির পররাষ্ট্রনীতি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে অনুসরণ করা হয়। এ ছাড়া স্পেন ইউক্রেনের অন্যতম মিত্র। এ বছর ফেব্রুয়ারি মাসে ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে কিয়েভে প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে স্পেনের প্রধানমন্ত্রী সানচেজ ‘শর্তহীন সহায়তার আশ্বাস দেন। পরে শান্তি প্রস্তাবে সমর্থন দেন, যেখানে ইউক্রেনের সব দখলকৃত ভূখ-কে ফিরিয়ে দেওয়ার শর্তারোপ করা হয়েছে।

ব্রাজিল ও স্পেনের রাষ্ট্রপ্রধানের চীন সফরের পরপরই বেইজিং যাচ্ছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন। আর ম্যাক্রনের সফরসঙ্গী হচ্ছেন ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রধান উরসুলা ভোন ডের লিয়েন। ইউরোপের দুই গুরুত্বপূর্ণ নেতা ৪ এপ্রিল চীন যাবেন। ইইউ নেতৃবৃন্দের শীর্ষ সম্মেলনের পর গত বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে ম্যাক্রন বলেন, আমরা যেন ঐক্যের সুরে কথা বলতে পারি, এই জন্য আমি ভোন ডের লিয়েনকে আমার সঙ্গে সফরের পরামর্শ দিয়েছি।’

এদিকে গতকাল প্যারিসে কৃষিমেলায় সাংবাদিকদের ম্যাক্রন বলেন, সবকিছুর পর ইউক্রেনের শান্তি প্রক্রিয়ায় চীন যুক্ত হয়েছে- এটি ইতিবাচক ব্যাপার। রাশিয়া যেন কখনই রাসায়নিক বা পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার না করে- এ বিষয়ে রাশিয়ার ওপর চাপ প্রয়োগ করতে চীনকে অবশ্যই আমাদের সহয়তা করতে হবে।

প্রসঙ্গত, ইউক্রেন যুদ্ধের শুরু থেকেই একটি কূটনীতিক সমাধান খোঁজার চেষ্টা চলছিল। সেখানে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন বেশ চেষ্টা করেছেন। তিনি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। তবে চীনা প্রেসিডেন্টের মস্কো সফরের পর ইউক্রেন যুদ্ধের কূটনীতিক সমাধানের সম্ভাবনা কিছুটা বেড়েছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও চীনকে শান্তি আলোচনায় স্বাগত জানিয়েছেন।

আন্তর্জাতিক-এর আরও খবর