রাজনৈতিক ঝড় ধেয়ে আসছে: ফখরুল

  বিশেষ প্রতিনিধি    13-05-2023    70
রাজনৈতিক ঝড় ধেয়ে আসছে: ফখরুল

সরকারবিরোধী আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ নিতে ঢাকাসহ সারা দেশের জেলা ও মহানগরে ৪ দিনের বিক্ষোভ সমাবেশের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। শনিবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক সমাবেশ থেকে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

এ সময় সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, ‘ঝড় আসছে, উত্তাল সমুদ্র থেকে ধেয়ে আসছে এই বাংলাদেশের বুকে। আজকে ঝড় শুধু প্রাকৃতিক ঝড় আসছে সেটা মনে করার কারণ নেই। আজকে রাজনৈতিক ঝড়ও আসছে। সরকারকে পদত্যাগ করতেই হবে- এটাই এক দফা এক দাবি। নাহলে এই রাজনৈতিক ঝড় সব মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়বে’।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেশে-বিদেশে আজ এটা প্রতিষ্ঠিত সত্য যে, শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না। বিএনপি আগামীতে তত্ত্বাবধায়কবিহীন নির্বাচনের যেকোনো প্রচেষ্টা রুখে দেবে।

বিএনপির ৮২টি সাংগঠনিক জেলা রয়েছে। এসব জেলাগুলোকে চারভাগে ভাগ করে কর্মসূচি প্রণয়ন করা হয়। ‘গায়েবি মামলায় গ্রেফতার, সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা’ দাবিতে এ কর্মসূচি পালন করা হবে।

সরকারের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের এই আন্দোলন বিএনপিকে ক্ষমতায় নেওয়ার জন্য নয়। আমরা খুব পরিষ্কার করে বলতে চাই, যারা সরকারে আছেন, যারা সরকার চালাচ্ছেন... এখনো সময় আছে আপনারা মানুষের ভাষা বুঝতে শিখুন, চোখের ভাষা বুঝার চেষ্টা করুন। আপনারা অবিলম্বে পদত্যাগ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা দিন। একথা আমরা বারবার বলেছি, আবারো বলছি- পদত্যাগ চাই। যদি সেইফ এক্সিট চান তাহলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা দিয়ে একটা সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন।’

তিনি বলেন, ‘আজকে সব রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে যে, আমরা এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাব না। কথা খুব পরিষ্কার। এটা দেশে-বিদেশে আজকে প্রতিষ্ঠিত সত্য যে, শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হতে পারে না, হতে দেব না। সাফ কথা।’

এ সময়ে বিএনপির মহাসচিব নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা কি এই সরকারের অধীনে নির্বাচন দেখতে চান। তখন নেতাকর্মীরা ‘না’ সূচক জবাব দিলে তিনি বলেন, তাহলে কিন্তু নির্বাচন রুখে দিতে হবে। শুধু দেখতে চাই না বললে হবে না।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘নির্বাচন এদেশের মানুষ রুখে দেবে- এই কথা বললে সরকার বলে আমরা নাকি নির্বাচনের বিরুদ্ধে আছি। কখনোই না। আমরা নির্বাচন চাই। বিএনপি যতবার ক্ষমতায় এসেছে, নির্বাচনের মধ্য দিয়ে এসেছে। কিন্তু আমরা সত্যিকার অর্থেই জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার দেখতে চাই।’

দলটির প্রতিষ্ঠাতা জিযাউর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘জনগণ যে আন্দোলন করছে এই আন্দোলনকে ডাইভার্ট করার জন্য, বিভক্ত করার জন্য এই সমস্ত নতুন ফন্দি-ফিকির তারা শুরু করেছে। এ বানোয়াট মামলায় জনগণ বিভ্রান্ত হবে না।’

তিনি বলেন, ‘এই সমস্ত ধানাই-পানাই করে কোনো লাভ হবে না। ফুটবল খেলায় ক্যারিকাটা বল নিয়ে এদিক-ওদিক করে গোল দেওয়া হয়, ওই বল দিয়ে ক্যারিকাটা করে কোনো লাভ হবে না, গোল দেওয়া যাবে না। গোল দেবে এবার জনগণ। সেই সময়ের জন্য আমরা তৈরি হচ্ছি। ইনশাআল্লাহ, আগামী দিনে জনগণের বিজয় নিশ্চিত হবে।’

স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘সরকার গায়ের জোরে ক্ষমতায় থেকে লুটপাট করে, দুর্নীতি করে, অর্থপাচার করে দেশকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। এ অবস্থা থেকে দেশকে রক্ষা করতে হলে সরকারকে ক্ষমতা থেকে বিদায় করতে হবে। এ ছাড়া জনগণের কাছে কোনো বিকল্প নাই।’

মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব আমিনুল হক ও দক্ষিণের রফিকুল আলম মজনুর সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও ড. আব্দুল মঈন খান, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, আবদুল মালেক রতন, মীর সরাফত আলী সপু, আজিজুল বারী হেলাল, রকিবুল ইসলাম বকুল, যুবদলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানি, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, মহিলা দলের সুলতানা আহমেদ, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান, মহানগর দক্ষিণের তানভীর আহমেদ রবিন, উত্তরের আবদুর রাজ্জাক, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, জাসাসের জাকির হোসেন রোকন, ছাত্রদলের কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ প্রমুখ।

সমাবেশে বিএনপির আবদুল আউয়াল মিন্টু, আহমেদ আজম খান, হাবিবুর রহমান হাবিব, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, ফজলুল হক মিলন, শামা ওবায়েদ, শিরিন সুলতানা, তাবিথ আউয়ালসহ কেন্দ্রীয় ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

জাতীয়-এর আরও খবর