সম্পদের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের করের টাকায় গবেষণা অনুদান ও ফেলোশিপ প্রদান করে যাচ্ছে জানিয়ে জনগণের কল্যাণে কাজ করতে ফেলোদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রোববার (৯ জুলাই) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলে প্রধানমন্ত্রী ফেলোশিপ ২০২৩-২৪ এর নির্বাচিত ফেলোদের ফেলোশিপ প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘নির্বাচিত ফেলোদের প্রতি আমার অনুরোধ, জনগণের কষ্টার্জিত টাকায় আপনারা যে জ্ঞানার্জন করবেন তা যেন জনগণের কল্যাণে কাজে লাগানো হয়।’
তিনি বলেন, আগে মেধাবীদের দেশে ধরে রাখার কোনো উদ্যোগ ছিল না। তেমন কোনো প্রতিষ্ঠানও ছিল না। আমরা কিন্তু এখন অনেক সুযোগ-সুবিধা তৈরি করে দিয়েছি।
‘শুধু মৌলিক গবেষণা নয়, প্রায়োগিক গবেষণার ওপর আমরা জোর দিয়েছি। কৃষি, শিল্প স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কর্মসংস্থানসহ অর্থনৈতিক উন্নয়নের সব ক্ষেত্রে গবেষকদের কাজের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।’
সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোক্তাদের গবেষণায় আরও বেশি এগিয়ে আসার আহ্বান জানান সরকারপ্রধান।
তিনি বলেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর সব প্রতিষ্ঠান ও শিল্প কারখানায় ‘গবেষণা ও উন্নয়ন’ কর্মসূচির মাধ্যমে প্রচলিত প্রযুক্তির উন্নয়ন ও নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবনে দক্ষ জনশক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। অধ্যয়ন ও গবেষণা হতে হবে দেশের আর্থ-সামাজিক বাস্তবতার আলোকে।
জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়া জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন ছিলো উল্লেখ করে তার কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে প্রথম বাজেটে জাতির পিতা যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে প্রশাসনিক বিন্যাসের পাশাপাশি শিক্ষা ও গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগত উন্নয়ন কার্যক্রম গ্রহণ করেন।
ঐ অর্থবছরে শিক্ষা খাতে এদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ২১.১৬ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়। তিনি সব স্কুল-কলেজ পুনর্গঠন করেন এবং নতুন বিদ্যালয়-কলেজ ভবন নির্মাণ করেন। তিনি ১ লাখ ৬৫ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি এবং ৩৬ হাজার ১৬৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করেন। ১৯৭২ সালে ড. কুদরাত-ই-খুদার নেতৃত্বে তিনি জাতীয় শিক্ষা কমিশন গঠন করেন। কিন্তু, ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যার পর ড. কুদরাত-ই-খুদা কমিশনের সেই রিপোর্ট আর বাস্তবায়ন করা হয়নি।
এ সময় শিক্ষার উন্নয়নের বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাস, বিশ্ববিদ্যালয়সমূহকে স্বায়ত্তশাসন প্রদান, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন গঠন, বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (BCSIR) প্রতিষ্ঠা, ‘শিক্ষা ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়’ গঠনসহ বঙ্গবন্ধুর সরকারের সময়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ১৯৭৫-এর পর রাষ্ট্র ক্ষমতায় পালাক্রমে বসে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি এবং স্বৈরাচারী সামরিক শাসকেরা। শিক্ষাঙ্গণে চরম নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়। সামরিক শাসক জিয়া ছাত্রদের হাতে তুলে দেয় অবৈধ অস্ত্র ও কালো টাকা। তাদের রাজনীতির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করে। লাশের পর লাশ পরতে থাকে ক্যাম্পাসগুলোতে।
‘গবেষণা তো দূরের কথা, শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হয়। সেশনজট অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায়। জাতির পিতা হাজিদের জন্য হিজবুল বাহার নামে একটি জাহাজ ক্রয় করেছিলেন। দুঃখের বিষয় জিয়াউর রহমান এই হিজবুল বাহার জাহাজকে প্রমোদতরি বানিয়েছিলেন যেখানে বিশ্বদ্যিালয়ের তরুণদের নিয়ে যাওয়া হয়।’
আওয়ামী লীগ যখনই সরকার গঠন করেছে তখনই জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে শিক্ষাসহ প্রতিটি সেক্টরের উন্নয়নে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে আমরা ক্যাম্পাসগুলোতে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনি।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে শিক্ষা এবং গবেষণায় গুরুত্ব দেই। ১৯৯৭-৯৮ অর্থবছরে প্রথম ১২ কোটি টাকা গবেষণা অনুদান প্রদান করি। পরবর্তীকালে গবেষণা ও প্রযুক্তির জন্য এই অনুদান ১০০ কোটিতে উন্নীত করি। আমরা ১২টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, চিকিৎসা বিশ্ববিদ্যালয়, ১৬টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, সমুদ্র বিজ্ঞান গবেষণা ইনস্টিটিউট, বায়োটেকনোলজি ইনস্টিটিউট, নভো থিয়েটার প্রতিষ্ঠা করি।
‘বিদেশে উচ্চ শিক্ষার জন্য বঙ্গবন্ধু বৃত্তি চালু করি। জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপের আওতায় ৯৮৬ জন শিক্ষার্থী/গবেষককে ১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা বৃত্তি/অনুদান প্রদান করি। ‘জাতীয় শিক্ষানীতি-২০০০’ প্রণয়ন করি, যা বিএনপি/জামায়াত জোট সরকার বাতিল করে দেয়।”
২০০৯ সাল থেকে শিক্ষা-গবেষণা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ২০১০ সাল থেকে বছরের প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেওয়া হচ্ছে। ২০১০ সালে একটি সমন্বিত শিক্ষানীতি প্রণয়ন করেছি। আমরা ব্যান্সডক আইন-২০১০, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উন্নয়ন ট্রাস্ট আইন-২০১১, সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউট আইন-২০১৫, বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ আইন (সংশোধিত)-২০১৮, ‘বাংলাদেশে উচ্চ-শিক্ষার কৌশলী পরিকল্পনা: ২০১৮-২০৩০’ সহ প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রণয়ন করেছি।’
‘আমরা ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ২৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং ৫৪টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছি। এর মধ্যে রয়েছে কৃষি, ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিম্যাল সাইন্সেস, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, চিকিৎসা, ডিজিটাল, ইসলামি-আরবি, টেক্সটাইল, মেরিটাইম, এভিয়েশন ও এরোস্পেস, বেসরকারি ফ্যাশন ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মত বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিটি উপজেলায় কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করছি।”
আওয়ামী লীগ সরকার শিক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ২০২৩-২০২৪ অর্থ-বছরের বাজেটে শিক্ষা খাতে ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষা প্রসারের মাধ্যমে দেশপ্রেমে উজ্জীবিত ও চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সুবিধা আহরণে সক্ষম প্রজন্ম গড়ার লক্ষ্যে কাজ করছি।
রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নের পর টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য-২০৩০ বাস্তবায়নে বিভিন্নমুখী পদক্ষেপ গ্রহণের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। এজন্য প্রয়োজন দক্ষ, প্রশিক্ষিত ও সক্ষম জনবল। এ লক্ষ্যে আমরা উচ্চশিক্ষা, গবেষণা ও প্রশিক্ষণের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছি।’
এই বাস্তবতা থেকেই দক্ষ ও প্রশিক্ষিত মানবসম্পদ গড়ার লক্ষ্যে ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী ফেলোশিপ প্রবর্তন করা হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এর আওতায় বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে/শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নির্ধারিত বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষা অর্থাৎ মাস্টার্স ও পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।’
ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী ফেলোশিপ এর আওতায় ৯৮ জনকে পিএইচডি এবং ২৩৯ জনকে মাষ্টার্স ডিগ্রি অর্জনের জন্য ফেলোশিপ প্রদান করা হয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। ২০১৮-১৯ অর্থবছর থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী ফেলোশিপের আওতায় ২৬৬ কোটি টাকা ফেলোশিপ প্রদান করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের ফলে বিগত সাড়ে ১৪ বছরে বাংলাদেশ বদলে গেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এ সময়ে মাথাপিছু আয় প্রায় ৫ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। জিডিপি ৭.৭৫ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৪৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। মানুষের গড় আয়ু ৫৫ বছর থেকে বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৭৩ বছর।
নারীর ক্ষমতায়ন, জেন্ডার সমতা, শিশু ও মাতৃ মৃত্যুর হার ইত্যাদি নানা আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষে অবস্থান করছে। এসব সম্ভব হয়েছে অব্যাহত গণতান্ত্রিক পরিবেশ এবং স্থিতিশীলতা বজায় থাকার কারণে। এ সময়ে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে।
জ্ঞানার্জন যেন জনগণের কল্যাণে আসে: প্রধানমন্ত্রী
সম্পদের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের করের টাকায় গবেষণা অনুদান ও ফেলোশিপ প্রদান করে যাচ্ছে জানিয়ে জনগণের কল্যাণে কাজ করতে ফেলোদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রোববার (৯ জুলাই) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলে প্রধানমন্ত্রী ফেলোশিপ ২০২৩-২৪ এর নির্বাচিত ফেলোদের ফেলোশিপ প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘নির্বাচিত ফেলোদের প্রতি আমার অনুরোধ, জনগণের কষ্টার্জিত টাকায় আপনারা যে জ্ঞানার্জন করবেন তা যেন জনগণের কল্যাণে কাজে লাগানো হয়।’
তিনি বলেন, আগে মেধাবীদের দেশে ধরে রাখার কোনো উদ্যোগ ছিল না। তেমন কোনো প্রতিষ্ঠানও ছিল না। আমরা কিন্তু এখন অনেক সুযোগ-সুবিধা তৈরি করে দিয়েছি।
‘শুধু মৌলিক গবেষণা নয়, প্রায়োগিক গবেষণার ওপর আমরা জোর দিয়েছি। কৃষি, শিল্প স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কর্মসংস্থানসহ অর্থনৈতিক উন্নয়নের সব ক্ষেত্রে গবেষকদের কাজের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।’
সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোক্তাদের গবেষণায় আরও বেশি এগিয়ে আসার আহ্বান জানান সরকারপ্রধান।
তিনি বলেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর সব প্রতিষ্ঠান ও শিল্প কারখানায় ‘গবেষণা ও উন্নয়ন’ কর্মসূচির মাধ্যমে প্রচলিত প্রযুক্তির উন্নয়ন ও নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবনে দক্ষ জনশক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। অধ্যয়ন ও গবেষণা হতে হবে দেশের আর্থ-সামাজিক বাস্তবতার আলোকে।
জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়া জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন ছিলো উল্লেখ করে তার কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে প্রথম বাজেটে জাতির পিতা যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে প্রশাসনিক বিন্যাসের পাশাপাশি শিক্ষা ও গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগত উন্নয়ন কার্যক্রম গ্রহণ করেন।
ঐ অর্থবছরে শিক্ষা খাতে এদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ২১.১৬ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়। তিনি সব স্কুল-কলেজ পুনর্গঠন করেন এবং নতুন বিদ্যালয়-কলেজ ভবন নির্মাণ করেন। তিনি ১ লাখ ৬৫ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি এবং ৩৬ হাজার ১৬৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করেন। ১৯৭২ সালে ড. কুদরাত-ই-খুদার নেতৃত্বে তিনি জাতীয় শিক্ষা কমিশন গঠন করেন। কিন্তু, ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যার পর ড. কুদরাত-ই-খুদা কমিশনের সেই রিপোর্ট আর বাস্তবায়ন করা হয়নি।
এ সময় শিক্ষার উন্নয়নের বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাস, বিশ্ববিদ্যালয়সমূহকে স্বায়ত্তশাসন প্রদান, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন গঠন, বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (BCSIR) প্রতিষ্ঠা, ‘শিক্ষা ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়’ গঠনসহ বঙ্গবন্ধুর সরকারের সময়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ১৯৭৫-এর পর রাষ্ট্র ক্ষমতায় পালাক্রমে বসে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি এবং স্বৈরাচারী সামরিক শাসকেরা। শিক্ষাঙ্গণে চরম নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়। সামরিক শাসক জিয়া ছাত্রদের হাতে তুলে দেয় অবৈধ অস্ত্র ও কালো টাকা। তাদের রাজনীতির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করে। লাশের পর লাশ পরতে থাকে ক্যাম্পাসগুলোতে।
‘গবেষণা তো দূরের কথা, শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হয়। সেশনজট অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায়। জাতির পিতা হাজিদের জন্য হিজবুল বাহার নামে একটি জাহাজ ক্রয় করেছিলেন। দুঃখের বিষয় জিয়াউর রহমান এই হিজবুল বাহার জাহাজকে প্রমোদতরি বানিয়েছিলেন যেখানে বিশ্বদ্যিালয়ের তরুণদের নিয়ে যাওয়া হয়।’
আওয়ামী লীগ যখনই সরকার গঠন করেছে তখনই জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে শিক্ষাসহ প্রতিটি সেক্টরের উন্নয়নে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে আমরা ক্যাম্পাসগুলোতে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনি।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে শিক্ষা এবং গবেষণায় গুরুত্ব দেই। ১৯৯৭-৯৮ অর্থবছরে প্রথম ১২ কোটি টাকা গবেষণা অনুদান প্রদান করি। পরবর্তীকালে গবেষণা ও প্রযুক্তির জন্য এই অনুদান ১০০ কোটিতে উন্নীত করি। আমরা ১২টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, চিকিৎসা বিশ্ববিদ্যালয়, ১৬টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, সমুদ্র বিজ্ঞান গবেষণা ইনস্টিটিউট, বায়োটেকনোলজি ইনস্টিটিউট, নভো থিয়েটার প্রতিষ্ঠা করি।
‘বিদেশে উচ্চ শিক্ষার জন্য বঙ্গবন্ধু বৃত্তি চালু করি। জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপের আওতায় ৯৮৬ জন শিক্ষার্থী/গবেষককে ১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা বৃত্তি/অনুদান প্রদান করি। ‘জাতীয় শিক্ষানীতি-২০০০’ প্রণয়ন করি, যা বিএনপি/জামায়াত জোট সরকার বাতিল করে দেয়।”
২০০৯ সাল থেকে শিক্ষা-গবেষণা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ২০১০ সাল থেকে বছরের প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেওয়া হচ্ছে। ২০১০ সালে একটি সমন্বিত শিক্ষানীতি প্রণয়ন করেছি। আমরা ব্যান্সডক আইন-২০১০, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উন্নয়ন ট্রাস্ট আইন-২০১১, সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউট আইন-২০১৫, বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ আইন (সংশোধিত)-২০১৮, ‘বাংলাদেশে উচ্চ-শিক্ষার কৌশলী পরিকল্পনা: ২০১৮-২০৩০’ সহ প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রণয়ন করেছি।’
‘আমরা ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ২৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং ৫৪টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছি। এর মধ্যে রয়েছে কৃষি, ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিম্যাল সাইন্সেস, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, চিকিৎসা, ডিজিটাল, ইসলামি-আরবি, টেক্সটাইল, মেরিটাইম, এভিয়েশন ও এরোস্পেস, বেসরকারি ফ্যাশন ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মত বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিটি উপজেলায় কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করছি।”
আওয়ামী লীগ সরকার শিক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ২০২৩-২০২৪ অর্থ-বছরের বাজেটে শিক্ষা খাতে ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষা প্রসারের মাধ্যমে দেশপ্রেমে উজ্জীবিত ও চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সুবিধা আহরণে সক্ষম প্রজন্ম গড়ার লক্ষ্যে কাজ করছি।
রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নের পর টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য-২০৩০ বাস্তবায়নে বিভিন্নমুখী পদক্ষেপ গ্রহণের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। এজন্য প্রয়োজন দক্ষ, প্রশিক্ষিত ও সক্ষম জনবল। এ লক্ষ্যে আমরা উচ্চশিক্ষা, গবেষণা ও প্রশিক্ষণের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছি।’
এই বাস্তবতা থেকেই দক্ষ ও প্রশিক্ষিত মানবসম্পদ গড়ার লক্ষ্যে ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী ফেলোশিপ প্রবর্তন করা হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এর আওতায় বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে/শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নির্ধারিত বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষা অর্থাৎ মাস্টার্স ও পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।’
ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী ফেলোশিপ এর আওতায় ৯৮ জনকে পিএইচডি এবং ২৩৯ জনকে মাষ্টার্স ডিগ্রি অর্জনের জন্য ফেলোশিপ প্রদান করা হয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। ২০১৮-১৯ অর্থবছর থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী ফেলোশিপের আওতায় ২৬৬ কোটি টাকা ফেলোশিপ প্রদান করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের ফলে বিগত সাড়ে ১৪ বছরে বাংলাদেশ বদলে গেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এ সময়ে মাথাপিছু আয় প্রায় ৫ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। জিডিপি ৭.৭৫ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৪৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। মানুষের গড় আয়ু ৫৫ বছর থেকে বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৭৩ বছর।
নারীর ক্ষমতায়ন, জেন্ডার সমতা, শিশু ও মাতৃ মৃত্যুর হার ইত্যাদি নানা আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষে অবস্থান করছে। এসব সম্ভব হয়েছে অব্যাহত গণতান্ত্রিক পরিবেশ এবং স্থিতিশীলতা বজায় থাকার কারণে। এ সময়ে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে।
সম্পাদক ও প্রকাশক
এ এম জি ফেরদৌস
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক
নাহিদুল ফাহিম
প্রযুক্তি ব্যবস্থাপনা
ইঞ্জি. মেহেদী হাসান |
প্রধান কার্যালয়
পূর্ব লিংক রোড, ঝিরংঝা, কক্সবাজার
মোবাইল
০১৮১৯-৫০২-৩২২
ই-মেইল beachnews24@gmail.com |
প্রিন্টের তারিখ ও সময়: May 19, 2024, 5:43 am
