ক্ষুরের ক্ষত না শুকাতেই এসিড সন্ত্রাসের শিকার রামুর দুই যুবক, চমেকে ভর্তি

  বিশেষ প্রতিনিধি    27-10-2022    168
ক্ষুরের ক্ষত না শুকাতেই এসিড সন্ত্রাসের শিকার রামুর দুই যুবক, চমেকে ভর্তি

ধারালো ছুরি ক্ষুরের আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত হওয়ার সেই ক্ষত না শুকানোর আগেই মাত্র ৩৮ দিনের মাথায় এবার এবার এসিড সন্ত্রাসের শিকার হলেন কক্সবাজারের রামুর সেই টিপু বড়ুযা ( ৩৪) ও দিপক বড়ুয়া (৩৩) নামের দুই বৌদ্ধ যুবক।

মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) রাত ১০ টার দিকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে ঘরে ফেরার পথে রামুর প্রধান বানিজ্যিক কেন্দ্র চৌমুহনী স্টেশনের ভিক্টর প্লাজার সামনে প্রকাশ্যে এ ঘটনা ঘটে ।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, আহতদের ভগ্নিপতি পুলিশ সদস্য (বর্তমানে চট্টগ্রাম সিআইডিতে কর্মরত) নিকেল বড়ুয়া পারিবারিক কলহের জের ধরে এ ঘটনা ঘটান। নিকেল বড়ুয়া বর্তমানে সিআইডি চট্টগ্রাম বিশেষ পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে কনস্টেবল হিসেবে কর্মরত আছেন।

এসিড সন্ত্রাসের শিকার টিপু বড়ুয়া রামুর ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের দ্বীপ শ্রীকুল গ্রামের নিরধন বড়ুয়া আর দিপক একই গ্রামের শুভধন বড়ুয়ার ছেলে।

উল্লেখ্য এর আগে ১৭ সেপ্টেম্বর রাতে বাড়ি ফেরার পথে রামু শ্রীকুল মৈত্রী বিহারের সামনে এই দুই যুবককে ছুরি ও ক্ষুর দিয়ে গুরতর আঘাত করে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনার ৩৮ দিনের মাথায় এবার এসিড সন্ত্রাসের শিকার হলেন তারা।

এ ঘটনায় ভুক্তভোগী দিপক বড়ুয়া জানান, রাতে রামু উপজেলা গেইটের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে হেঁটে হেঁটে বাড়ি ফিরছিলেন তারা। এসময় রামু বালিকা বিদ্যালয় সংলগ্ন ভিক্টর প্লাজার সামনে পৌঁছালে চলমান একটি সিএনজি অটো রিকসা থেকে কি যেন ছুঁড়ে মারে। এতে মুহুর্তেই তাদের শরীর ঝলসে যায়। তাৎক্ষনিকভাবে আমরা ধারনা করেছি, এসিড ছুঁড়ে মেরেছে। বর্তমানে গুরুতর আহত অবস্থায় তারা দুইজন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩৬ নম্বর বার্ণ ইউনিটে চিকিৎসাধীন আছেন বলে জানান দীপক।

চমেক হাপসাতাল বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের প্রধান ডা. রফিক উদ্দিন আহমেদ বলেন, টিটু বড়ুয়া ও দিপক বড়ুয়া নামে দুই জন ক্যামিক্যাল বার্ণ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে টিটু বড়ুয়ার ২০ শতাংশ ও দিপক বড়ুয়া ১৫ শতাংশ বার্ণ রয়েছে। তাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। যেহেতু পোড়া রোগী ৪৮ ঘণ্টার আগে শঙ্কা মুক্ত বলার সুযোগ নেই। আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। বলেন, ডা. রফিক। ঘটনার তীর ভগ্নিপতি পুলিশ সদস্যর দিকে।

এসিড সন্ত্রাসের শিকার গুরুতর আহত টিপু বড়ুয়া জানান, তার ছোট বোন ইমু বড়ুয়ার সঙ্গে ২০১৬ সালে হাজারীকুল গ্রামের মৃত প্রদীপ বড়ুয়ার ছেলে পুলিশের কনেস্টেবল নিকেল বড়ুয়া বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে তার বোনের সাথে পারিবারিক কলহ লেগে আছে। এক পর্যায়ে সে ২০১৯ সালে আরেকটি মেয়ের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে এবং তাকে বিয়ে করে। পরে আমরা তার বিরুদ্ধে মামলা করলে ওই মেয়েকে আপোষ মিমাংসা করে ছেড়ে দেয়। বর্তমানে আমার বোন তার সঙ্গে আছে।

টিপু বলেন, মামলার পর থেকে প্রতিশোধ পরায়ন হয়ে ওঠে নিকেল। আমাকে হত্যার জন্য একের পর এক হামলা করছে। ছুরিকাঘাতের ঘটনার মাসখানেক আগে তার গ্রামের রিপন ও কলঘর বাজারের বেলাল নামের দুই বখাটে আমার ঘরে এসে আমাকে হত্যার হুমকি দিয়ে যায়। এর একমাস পর ছুরিকাঘাতের ঘটনা ঘটে।

তিনি বলেন, ছুরিকাঘাতের সেই ক্ষত এখনো পুরোপুরি শুকোয়নি, এর মাত্র ৩৮ দিনের মাথায় আবার আমরা দুজনকে এসিড নিক্ষেপ করা হলো। আমার সঙ্গে কারো কোনো ধরনের শত্রুতা নেই, নিকেলই আমাকে হত্যার টার্গেট করে হামলা চালাচ্ছে।

তবে অভিযুক্ত নিকেল বড়ুয়া ঘটনার পুরোটাই অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, আমি কেন এ ধরনের ঘটনা ঘটাতে যাব। আমার মা মারা গেছে, আজ সাপ্তাহিত সংঘদান ছিল। আমি এসব নিয়ে ব্যস্ত।

এদিকে ১৭ সেপ্টেম্বরের ছুরিকাঘাতের ঘটনায় রামু থানায় মামলা হলেও এখনও পর্যন্ত অভিযুক্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এ বিষয়ে রামু থানার ওসি (তদন্ত) অরূপ কুমার চৌধুরী বলেন, ঘটনাটি আমরা শুনেছি। এ বিষয়ে জানার জন্য আমি এখন ভিকটিমের বাড়িতে অবস্থান করছি। এ ঘটনায় ভিকটিমদের ভগ্নিপতি পুলিশ সদস্য জড়িত কিনা এ বিষয়ে তিনি বলেন, এ ধরনের কথা আমরাও শুনেছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

অভিযুক্ত নিকেল বড়ুয়া বর্তমানে সিআইডি চট্টগ্রাম বিশেষ পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে কনস্টেবল হিসেবে কর্মরত আছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিআইড’র বিশেষ পুলিশ সুপার মো. শাহনেওয়াজ খালেদ জানান, নিকেল বড়ুয়ার মায়ের মৃত্যুর কারণে বর্তমানে ছুটিতে আছে। তবে ছেলেটি একটু অন্যরকম। তার ব্যাপারে এ রকম আরও অভিযোগ আছে। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখবো। এছাড়াও এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকলে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারকে আইনী ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

সারাদেশ-এর আরও খবর