অনাবৃষ্টির কারণে পেকুয়ায় আমনের ফলন বিপর্যয়ের শংকা : মারা যাচ্ছে ধানের চারা

  বিশেষ প্রতিনিধি    03-09-2022    112
অনাবৃষ্টির কারণে পেকুয়ায় আমনের ফলন বিপর্যয়ের শংকা : মারা যাচ্ছে ধানের চারা

অনাবৃষ্টির কারণে কক্সবাজারের পেকুয়ায় আমন চাষের ফলন বিপর্যয়ের শংকা দেখা দিয়েছে। বৃষ্টির পানির অভাবে জমিতে রোপিত আমন ধানের চারা মারা পড়ছে। প্রচন্ড তাপদাহ ও উষ্ণ আবহাওয়ার কারণে ফসলী জমি ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। এতে করে উপজেলার পেকুয়ায় আমন চাষের আবাদ নিয়ে দেখা দিয়েছে চরম অনিশ্চয়তা। ফলে কৃষকরা জমিতে সম্পূরক সেচের মাধ্যমে আমন ধানের চারা রোপন করেছে। আকাশে বৃষ্টি না থাকায় এসব চারা রোদে শুকিয়ে মারা পড়ছে। ধানের চারাগুলো এখন ফসলী বিলে হলদে রং ধারণ করেছে। আবার কিছু কিছু জায়গায় কৃত্রিম পানীয়ও সেঁচ দ্বারা জমিতে ফসল ফলানো হয়েছে। অতিরিক্ত তাপদাহের কারণে এসব ফসলগুলিও লালচে ও মরিচা রং ধারণ হয়েছে। ফসলগুলোতে মড়ক ও ছত্রাকের মত জটিল রোগ আক্রান্ত হচ্ছে। কিছু কিছু জমিতে দেখা গেছে, ধানের চারায় গুচি এসেছে। চারাগুলি স্ট্যাবিলিস্ট সময় পার করেছে। এসব ফসলগুলোতেও আবার ছত্রাক ছড়িয়ে পড়েছে। উপজেলার টইটং ইউনিয়নের জালিয়ারচাং, বড়বিল, টৈইট্যাখালি বিল, কাচারীঘোনা ও নিত্যান্ত ঘোনাসহ অনেক স্থানের ফসলী জমিতে লবণাক্ততা গ্রাস করেছে। সমুদ্রের লোনা পানি নিন্মাঞ্চলে প্রবেশ করে। এতে করে ওই ইউনিয়নের ৫ থেকে ৬ টি ফসলী বিলে আমন ধানের চারা মারা পড়ছে। সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে দেখা গেছে, টইটংয়ের নিত্যান্ত ঘোনায় বিলে মারা পড়ছে আমন ধানের চারা। একই ইউনিয়নের কাচারীঘোনায়ও জমির সদ্য রোপিত আমন চারা বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। ৩ নং ওয়ার্ডের টেইট্যাখালি বিলেও বিশাল অংশে ধানের চারা হলদে হয়ে গেছে। ওই বিল এখন ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। জালিয়ারচাং বড় বিলেরও একই অবস্থা। টইটং ইউপি ভবনের পূর্ব পাশে বড়পাড়া বিলে ধানের চারা মারা পড়ছে। স্থানীয়রা জানান, টইটং খালের জোয়ারের পানি লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। জোয়ার-ভাটায় এসব বিলে লোনা পানি প্রবেশ করায় জমিতে মাটির ভারসাম্য নষ্ট হয়েছে। অতিরিক্ত লবণাক্ততার কারণে মাটির রাসায়নিক ভৌত নষ্ট হয়ে গেছে। এতে করে ধানের চারাগুলি মারা পড়ছে। টইটং কাচারীঘোনার কৃষকরা জানান, এরশাদ আলী ওয়াকফ থেকে জমি লাগিয়ত নিয়েছেন। একসনা চাষ করতে প্রতি কানি জমির ওয়াসিলা ধার্য্য আছে ৬ হাজার টাকা। কার্যকার করা ওই টাকা চাষীদের কাছ থেকে কয়েক দফায় উত্তোলন করেন। চলতি বর্ষা মৌসুমে ওয়াকফর জমিতে তারা চাষ করছিলেন। তবে ধানের চারা রোপণের ১ সপ্তাহের মধ্যে জমিতে আমন রোপা মরে যাচ্ছে। এখন তারা এ ক্ষতি কিভাবে পোষাবে। চাষী নুরুল হক জানান, প্রাকৃতিক সমস্যার কারণে এ বছর জমি থেকে ফসল তোলা প্রায় অনিশ্চিত। পাওয়ার টিলার বাবদ প্রতি কানিতে আড়াই হাজার টাকা, আগামসহ আনুসাংগিক ব্যয় প্রতি ৪০ শতকে প্রায় ১৫ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। চাষী আক্তার আহমদ জানান, আমরা চরম সংকটে মধ্যে রয়েছি। চাষী নুরুল আলম সর্দার জানান, মানুষ এ বছর ধান পাবেনা জমিতে। নিত্যান্ত ঘোনার চাষী জসিম উদ্দিন, হুমায়ুন কবির, নুর হোসেন,জিয়াবুল হকসহ আরো অনেকে জানান, ছনুয়া নদীর জোয়ারের পানি ডাকাত্যাঘোনা নাশি দিয়ে বিলে ঢুকেছে। বৃষ্টি হচ্ছে না তাই এখন রোপা মারা পড়ছে। এরশাদ আলী ওয়াকফের কার্যকারক নুরুন্নবী জানান, চাষীরা তাদের অসুবিধাগুলি আমাদেরকে বলেছেন। তবে আমার মনে হচ্ছে এ মুহুর্তে করার কিছুই নেই। ইউএনও স্যার ওয়াকফর অফিসিয়াল মোতোওয়াল্লী। তিনি মানবিক। মওকুফ তিনি করলেও মালিকরা হয়তো সেটি সমর্থন নাও করতে পারেন। টইটংয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোকাদ্দেস মোহাম্মদ রাসেল জানান, আসলে বিষয়টি প্রাকৃতিক। এ মুহুর্তে সম্পূরক সেচের বিকল্প আমরা দেখছি না। জোয়ার যাতে ফসলী জমিতে প্রবেশ না করতে পারে সে ব্যবস্থা নিচ্ছি আমরা। এদিকে পেকুয়ার ৭ ইউনিয়নে আমনের ফলন বিপর্যয়ের আশংকা দেখা দিয়েছে। উঁচু স্থানের অনেক জমি এখনো অনাবাদি থেকে গেছে। আকাশ থেকে বৃষ্টি না হওয়ায় এসব জমি ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। সদরের জালিয়াখালী, বকসুচৌকিদারপাড়া, বটতলীয়াপাড়াসহ দক্ষিণ ও পশ্চিম অংশের অনেক জমিতে এখনো ফসল ফলানো যায়নি। মগনামা, উজানটিয়া ইউনিয়নেও একই অবস্থা। রাজাখালীসহ উপকুলবর্তী ৩ টি ইউনিয়নে প্রতি বছর বর্ষার সময় লবণ মাঠের জমিতে প্রচুর ধান চাষ হতো। অনাবৃষ্টির কারণে এ বছর এ সব জমিতে চাষাবাদ করা যায়নি। বারবাকিয়া ইউনিয়নেও আংশিক জায়গায় অনাবাদি থেকে গেছে চাষাবাদ। কাদিমাকাটা, বারাইয়াকাটা অংশে জমির ফসল হলদে রং ধারণ করেছে। পেকুয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তপন কুমার রায় জানান, যে সব জায়গায় লবণাক্ততা বেড়ে গেছে সেখানে বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত এর সমাধান আসবে না। বৃষ্টি হতে হবে। আমরা সম্পূরক সেচের পরামর্শ দিচ্ছি। পেকুয়ার ইউএনও পূর্বিতা চাকমা জানান, রাবার ড্যাম সচল করা হয়েছে। মিষ্টি পানির উৎস সমুহে যাতে লোনা পানি প্রবেশ না করতে পারে সে ব্যবস্থা করা হয়েছে। এরশাদ আলী ওয়াকফের অফিসিয়াল মোতোওয়াল্লী হিসেবে বলছি যারা আমাদের জমি চাষ করছে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকলে আমাদেরকে লিখিতভাবে আবেদন করতে হবে।

সারাদেশ-এর আরও খবর