বাঁকখালীর তীর যেন ধ্বংস স্তুপ!

সীমা নির্ধারণ করেই উচ্ছেদ অভিযানের আবেদন

  বিশেষ প্রতিনিধি    02-03-2023    190
 বাঁকখালীর তীর যেন ধ্বংস স্তুপ!

কক্সবাজারের খরস্রোতা বাঁকখালী নদী থেকে গত দুই দিনে যৌথ বাহিনীর অভিযানে প্রায় চারশ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। পুরোপুরি দখলমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত থাকবে। কোন দখলবাজ রেহায় পাবে না। ক্রমান্বয়ে সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে। তবে তা হবে লজিস্টিক সাপোর্ট পাওয়া সাপেক্ষে।

বুধবার (১ মার্চ) রাতে এ কথা বলেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. আবু সুফিয়ান।

তিনি বলেন, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সবার মালামাল সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে। অন্যথায় সমস্ত সব বাজেয়াপ্ত ঘোষণা ও নিলাম দেওয়া হবে। উচ্ছেদ অভিযানে জেলা প্রশাসনকে সহযোগিতা করেছে কক্সবাজার পৌরসভা, পরিবেশ অধিদপ্তর, বনবিভাগ, বিমান বাহিনী, কোস্ট গার্ড, ফায়ার সার্ভিস, বিদ্যুৎ বিভাগ, আনসার, র‌্যাব ও পুলিশ।

অভিযানের নেতৃত্ব দেন জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু সুফিয়ান।

এদিকে, সর্বশেষ বুধবার (১ মার্চ) দিনব্যাপী অভিযানে শক্তিশালী দখলবাজ আবদুল খালেক চেয়ারম্যানের কবলে থাকা বাঁকখালীর শেষ নিশানাটিও মাটির সাথে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে।

উচ্ছেদ অভিযানের পর বাঁকখালী তীরের চারিদিকে পড়ে আছে ছিন্নভিন্ন ইট, কংকর, লোহার রড়, ছেঁড়াফাঁড়া টিন। নদীর তীর যেন ধ্বংস স্তুপ! স্থানীয়রা মনে করছে, এখন বাঁকখালী নদী ফিরে পাবে তার পুরনো চেহারা। ফিরবে প্রাণপ্রকৃতি।

আর উচ্ছেদকৃত জায়গা বিআইডব্লিউটিএকে বুঝিয়ে দেওয়া হবে। পরে সেখানে বনায়নসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবে সংশ্লিষ্ট সরকারি অফিস। দেরিতে হলেও সাহসি অভিযানের জন্য প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানিয়েছে পরিবেশকর্মীসহ এলাকাবাসী।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কক্সবাজারের সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম বলেন, বাঁকখালী নদীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের মাধ্যমে নদীকে তার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে ২০১৪ সালে রিট করেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

কিন্তু বেপরোয়া দখলবাজদের কারণে বাঁকখালী নদী রক্ষায় উচ্চ আদালতের নির্দেশনা দীর্ঘদিনেও বাস্তবায়ন হচ্ছিল না। এ জন্য সম্প্রতি বেলা সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার আবেদন করে।

অবশেষে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান শুরু হওয়ায় জেলা প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আশা করছি, অভিযান অব্যাহত থাকবে।

দখলবাজদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি তাদের অর্থের অনুসন্ধানের জন্য দুদকসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ করেন পরিবেশকর্মী নজরুল ইসলাম।

এদিকে উচ্ছেদ অভিযানে ক্ষতিগ্রস্ত অনেকের দাবি, অভিযানের আগে তাদের নোটিশ দেয় নি প্রশাসন। সিএস জরিপ মতে উচ্ছেদের নির্দেশ ছিল আদালতের। তা মানা হয় নি। অনেক খনিয়ানভুক্ত জমি থেকে স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে।

আদালতের নির্দেশ মেনে সিএস জরিপ অনুসরণ করেই বাঁকখালীর সীমা নির্ধারণ করেই উচ্ছেদ অভিযানের আবেদন জানিয়েছে স্থানীয় বাসিন্দারা। পরিবেশ সংগঠন বেলা কর্তৃক হাইকোর্টে দায়েরকৃত রীট পিটিশন নং-৮৩২৫/২০১৪ এর সুত্র টেনে পেশকারপাড়ার বাসিন্দা মুহিব্বুল্লাহ, আবদুল মাবুদ, হাজি ফরিদুল আলম, খোরশেদ আলম, কামাল উদ্দিন, মো. জাকের, মো. হাসান, হাজি সিরাজসহ স্থানীয় বাসিন্দারা উচ্ছেদ অভিযান চালানোর আবেদন জানিয়েছেন।

তারা বলেন, আরএস সিট মতে বাঁকখালী নদীর জমি খুরুশকুল মৌজায়। যার আরএস ৯৫৩৬, ৯৫৩৭ নং দাগাদির দক্ষিণ ও পূর্ব সীমানা। কক্সবাজার মৌজার ১ নং তফশীলোক্ত আরএস ১১৬৬ নং খতিয়ানের (আরএস ৬৬৮, ৫৪৮ ও ৫১৬ নং দাগাদির উত্তর ও পশ্চিম সীমানা) মালিক আবদুল বারী পেশকার।

তার মৃত্যুর পরে ৪ পুত্র ফজলুল করিম চৌধুরী, বজলুর রহিম চৌধুরী, আবু তাহের চৌধুরী ও আবু বক্কর চৌধুরী সম্পদপ্রাপ্ত হন। উক্ত আরএস রায়ত আবদুর বারীর ৪পুত্র ফজলুল করিম চৌধুরী গং ওয়ারিশী সূত্রে প্রাপ্ত ১ নং তপশীলোক্ত জমি প্রজাপত্তন ও বিভিন্ন সাফ কবলা দলিলমূলে হস্তান্তর করে দখল অর্পন করেন। পরবর্তীতে এম.আর.আর জরীপ পরিচালিত হলে আবেদনকারীগণের পূর্ববর্তীগণের নামে এম. আর. আর ৭৭৮ নং খতিয়ান প্রচার হয়। সে মতে ১নং তপশীলোক্ত জমি প্রাপ্ত হয়ে দীর্ঘ ৪০ বছর যাবৎ ভোগ দখলে আছেন। তাদের বসতগৃহ নির্মাণকালে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক) গঠিত হয় নি।

বিগত বিএস জরীপে স্বত্ব দখলীয় জমির বিএস খতিয়ান আবেদনকারীগণ ও আবেদনকারীগণের পূর্ববর্তীর নামে প্রচার না হওয়ায় জমির মালিকরা যুগ্ম জেলা জজ ১ম আদালতে মামলা করেন। যার অপর মামলা নং-১৮/২০০৩। মামলা এখনো চলমান।

বাঁকখালী নদীতে অবৈধ দখলকার উচ্ছেদের জন্য হাইকোর্ট বিভাগে রীট পিটিশন ৮৩২৫/২০১৪ ইং দায়ের করেন পরিবেশ বাদী সংগঠন বেলা। উক্ত রীটে/মোকদ্দমায় বাঁকখালী নদীতে অবৈধ দখলদার ও স্থাপনা উচ্ছেদ করে প্রতিবেদন দিতে জেলা প্রশাসককে নির্দেশ প্রদান করেন বিচারক। উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা করিতে মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনার মধ্যে অন্যতম তিনটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা আছে।

তম্মধ্যে (১) সি.এস ম্যাপ মতে বাঁকখালী নদী চিহ্নিত করা অথবা (২) আরএস ম্যাপ মতে বাঁকখালী নদী চিহ্নিত করা অথবা (৩) বর্তমান প্রবাহমান নদীতে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা।

বাঁকখালী নদী ও বর্তমান বসতির মধ্যখানে কোন সীমানা চিহ্নিত নাই।

তাই জনস্বার্থে ও মহামান্য হাইকোর্টের রীট পিটিশন- ৮৩২৫/২০১৪ নং এর নির্দেশনা বা আদেশ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আরএস ম্যাপ মতে ১নং তপশীলোক্ত জমির উত্তর ও পশ্চিম সীমানা ও ২নং তপশীলোক্ত বাঁকখালী নদীর দক্ষিণ ও পূর্ব সীমানা পরিমাপপূর্বক চিহ্নিত করে মহামান্য আদালতের আদেশ বাস্তবায়নের অনুরোধ স্থানীয় বাসিন্দাদের।

সারাদেশ-এর আরও খবর