সব দলেই সম্ভাব্য প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ

  বিশেষ প্রতিনিধি    28-03-2023    139
সব দলেই সম্ভাব্য প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ

কক্সবাজার জেলায় চারটি সংসদীয় আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য একাধিক প্রার্থীর দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে। বিএনপি আন্দোলনে থাকলেও অনেক প্রার্থী নির্বাচনেরও প্রস্তুতি নিচ্ছে। জাতীয় পার্টির প্রার্থীদেরও চাঙাভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীরা স্বতন্ত্র লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীরা সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকায় নিজের ও দলীয় প্রধানের ছবিসহ পোস্টার-ব্যানার রাস্তার মোড়ে ঝুলিয়ে বিভিন্ন দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়ে দোয়া কামনা করছেন। অনেক প্রার্থী দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে এলাকায় পথসভা ও বৈঠক করছেন। অনেকে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে লবিংও শুরু করে দিয়েছেন।

চারটি সংসদীয় আসনে সংসদ সদস্য প্রার্থী রয়েছেন ২০ জনের অধিক। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে প্রার্থী থাকলেও বিগত দিনের ভোটের চিত্র বলছে, জেলার চারটি আসনেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে। কক্সবাজার জেলার চারটি আসনে ১৯৯১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত বেশির ভাগ ছিল বিএনপি-জামায়াতের দখলে। তবে ১৯৯১ সালে কক্সবাজার ২ ও ৩ আসন এবং ১৯৯৬ ও ২০০৮ সালে কক্সবাজার-৪ আসনে জয়ী হয় আওয়ামী লীগ। ২০১৮ সালের নির্বাচনে চারটি আসনেই আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জয়ী হয়।

কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) : এ আসনটি জেলার সবচেয়ে বড় আসন। ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সালাউদ্দিন আহমদ সিআইপিকে পরাজিত করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ (ভারতের শিলং অবস্থানরত) দুবার নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালের কারাগারে থাকায় তিনি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারেননি। তবে বিএনপি থেকে তার স্ত্রী হাসিনা আহমেদ সে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সালাউদ্দিন আহমদ সিআইপিকে আবারও পরাজিত করে বিজয়ী হন। ২০১৪ সালে জাতীয় পার্টির মোহাম্মদ ইলিয়াস বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালে হাসিনা আহমেদকে পরাজিত করে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জাফর আলম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি। জাফর আলম উপজেলা চেয়ারম্যান এবং চকরিয়া পৌরসভার মেয়র ছিলেন। আসন্ন সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে এ আসনে তৎপরতা চালাচ্ছেন আওয়ামী লীগ থেকে বর্তমান সংসদ সদস্য জাফর আলম, সালাউদ্দিন আহমদ সিআইপি ও রেজাউল করিম।

বিএনপির থেকে দলীয় কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য হাসিনা আহমেদ, জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ ইলিয়াছ দলীয় মনোনয়ন চাইবেন।

কক্সবাজার-২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) : এ আসনে ১৯৯১ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. শফিউল আলমকে পরাজিত করে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মো. ইসহাক বিএ নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ প্রার্থী (বর্তমান কেন্দ্রীয় ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক) সিরাজুল মোস্তফাকে পরাজিত করে বিএনপি থেকে আলমগীর মো. মাহফুজুল্লাহ ফরিদ নির্বাচিত হন। ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ প্রার্থী (বর্তমান জেলা সভাপতি) ফরিদুল ইসলামকে পরাজিত করে পুনরায় বিএনপি থেকে আলমগীর মো. মাহফুজুল্লাহ ফরিদ নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আনসারুল করিমকে পরাজিত করে জামায়াতে ইসলামী নেতা এ এইচ এম হামিদুর রহমান আজাদ নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আশেক উল্লাহ রফিক বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালে বিএনপির প্রার্থী আলমগীর মো. মাহফুজুল্লাহ ফরিদকে পরাজিত করে পুনরায় নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ প্রার্থী আশেক উল্লাহ রফিক। আলমগীর মুহাম্মদ মাহফুজ উল্লাহ ফরিদ ও আশেক উল্লাহ রফিক সম্পর্কে চাচা-ভাতিজা।

আগামী নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা হলেন- বর্তমান সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক, কেন্দ্রীয় ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক সিরাজুল মোস্তফা, জেলা সভাপতি ফরিদুল ইসলাম ও আনসারুল করিম। বিএনপি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা হলেন- কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আলমগীর মুহাম্মদ মাহফুজ উল্লাহ ফরিদ, এ টি এম নুরুল বশর, আবু বক্কর। স্বতন্ত্র থেকে জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক সংসদ সদস্য এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ নির্বাচন করতে পারেন।

কক্সবাজার-৩ (কক্সবাজার সদর-রামু) : এ আসনে ১৯৯১ সালে বিএনপি প্রার্থী মো. খালেকুজ্জামানকে পরাজিত করে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মোস্তাক আহমদ চৌধুরী নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে মোস্তাক আহমদ চৌধুরীকে দুবার পরাজিত করে নির্বাচিত হন বিএনপি প্রার্থী মো. খালেকুজ্জামান। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বর্তমান সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমলকে পরাজিত করে নির্বাচিত হন বিএনপি প্রার্থী ও দলীয় কেন্দ্রীয় মৎস্য বিষয়ক সম্পাদক লুৎফুর রহমান কাজল। ২০১৪ সালের নির্বাচনে বর্তমান সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী লুৎফুর রহমান কাজলকে পরাজিত করে পুনরায় নির্বাচিত হন বর্তমান সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল।

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে এ সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগ থেকে বর্তমান সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, তার বড় ভাই রামু উপজেলা চেয়ারম্যান সোহেল সরওয়ার কাজল, জেলা সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান, কক্সবাজার পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি নজিবুল ইসলাম, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) ফোরকান আহমদ দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী।

বিএনপি থেকে কেন্দ্রীয় কমিটির মৎস্য বিষয়ক সম্পাদক সাবেক সংসদ সদস্য লুৎফুর রহমান কাজল, সাবেক সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মো. শহিদুজ্জামান মনোনয়ন চাইবেন। জাতীয় পার্টি থেকে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও জেলা সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান মনোনয়নপ্রত্যাশী।

কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) : ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী শাহজাহান চৌধুরীকে পরাজিত করে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবদুর রহমান বদি নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালে জাতীয় পার্টির প্রার্থী তাহা ইয়াহিয়াকে পরাজিত করে পুনরায় নির্বাচিত হন আবদুর রহমান বদি। ২০১৮ সালে বিএনপি প্রার্থী শাহজাহান চৌধুরীকে পরাজিত করে নির্বাচিত হন আবদুর রহমান বদির স্ত্রী শাহীন আক্তার।

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা হলেন- বহুল আলোচিত সমালোচিত সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি, তার স্ত্রী বর্তমান সংসদ সদস্য শাহীন আক্তার, উখিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী, টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি নুরুল বশর, উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী, জেলা যুবলীগ সভাপতি সোহেল আহমদ বাহাদুর ও জেলা পরিষদ সদস্য আশরাফ জাহান কাজল। বিএনপি থেকে দলের জেলা সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী দলীয় প্রার্থী হবেন। জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচন করতে চান কেন্দ্রীয় সদস্য নুরুল আমিন ভুট্টু ও আবুল মনজুর।সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন

সারাদেশ-এর আরও খবর