কক্সবাজার বিমানবন্দর: উপকরণ সংকটে রানওয়ে সম্প্রসারণ কাজে ধীরগতি

  বিশেষ প্রতিনিধি    06-04-2023    193
কক্সবাজার বিমানবন্দর: উপকরণ সংকটে রানওয়ে সম্প্রসারণ কাজে ধীরগতি

হঠাৎ করেই কাজের গতি কমে গেছে কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণ প্রকল্পের। কারণ, নির্মাণ উপকরণের সংকট। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদেশ থেকে কাঁচামাল আমদানির জন্য এলসি (লেটার অব ক্রেডিট) খোলার অনুমতি দিচ্ছে না বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে আমদানি করা যাচ্ছে না বিটুমিন, পাথরসহ বিভিন্ন নির্মাণ উপকরণ। এ অবস্থা চলতে থাকলে নির্মাণ উপকরণের অভাবে আগামী জুনেই বন্ধে হতে পারে প্রকল্পের কাজ। পাশাপাশি প্রকল্প দীর্ঘায়িত হওয়ায় বাড়বে ব্যয়ও।

কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণ সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার প্রকল্প। এই বিমানবন্দরের রানওয়ের অর্ধেক অংশ স্থলভাগে, বাকি অর্ধেক হবে সাগরে। এরই মধ্যে রানওয়ের স্থলভাগের নির্মাণকাজ প্রায় শেষ। সাগরের অংশে কাজের অগ্রগতিও সন্তোষজনক। চলতি বছর শেষ নাগাদ রানওয়েটি প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধন করার কথা।

প্রকল্পটির কাজ যৌথভাবে বাস্তবায়ন করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চাংজিয়াং ইচাং ওয়াটার ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যুরো ও চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন করপোরেশন। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় অর্থ বরাদ্দ থাকলেও ডলার সংকটে ঠিকাদারদের বিলও পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না।

সংকট কাটাতে এরই মধ্যে বেসামিরক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দারস্থ হয়েছে বেবিচক। এলসির অনুমতি পেতে বাংলাদেশ ব্যাংকেও অনুরোধ জানিয়েছে সংস্থাটি। তবে এখন পর্যন্ত সমস্যার সমাধান হয়নি। ফলে বন্ধই রয়েছে প্রকল্পের অন্যতম নির্মাণসামগ্রী বিটুমিন, পাথর, বিটুমিন ও ইলেকট্রিক পণ্যের আমদানি এলসি।

সূত্র বলছে, বর্তমানে প্রকল্প এলাকায় যে পরিমাণে নির্মাণ উপকরণ রয়েছে, তাতে সর্বোচ্চ দুই মাস পর্যন্ত কাজ চালানো যাবে। এরপরই বন্ধ হয়ে যাবে রানওয়ের সাগর অংশের নির্মাণকাজ।

এ প্রসঙ্গে বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণ কাজের অগ্রগতি সন্তোষজনক। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রকল্পটি স্থবির হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা গেছে। কারণ আগামী দিনের কাজগুলো এগিয়ে নিতে যেসব উপকরণ প্রয়োজন, সেগুলো বিদেশ থেকে নিয়ে আসতে এলসি খোলা সম্ভব হচ্ছে না। বৈদেশিক মুদ্রার সংকটের কারণে এ অবস্থা তৈরি হয়েছে। বর্তমানে যে পরিমাণ নির্মাণ উপকরণ প্রকল্প এলাকায় আছে তাতে দুই-তিন মাস কাজ চলবে। পরবর্তীকালে কাজ ব্যাহত হবে।

তিনি বলেন, প্রকল্পের জন্য যে বরাদ্দ সেটি লোকাল কারেন্সিতে আমাদের কাছে আছে। কিন্তু ডলার না থাকায় ফান্ডটি এলসির মাধ্যমে বিদেশে পাঠানোতে সমস্যা হচ্ছে। আমরা কিছু কিছু বিল লোকাল কারেন্সিতে দেওয়ার জন্য ঠিকাদারদের রাজি করিয়েছি। কিন্তু সব বিল তাঁরা টাকায় নিতে রাজি হচ্ছেন না। কারণ অর্থনৈতিক সংকট তাঁদেরও হচ্ছে। ফলে চুক্তি অনুযায়ী বিলগুলো তাঁরা বৈদেশিক মুদ্রায় চাচ্ছেন।

প্রসঙ্গত, দেশের পর্যটন খাতকে এগিয়ে নিতে কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়েটি বিশেষভাবে নকশা করা হয়েছে। বিদ্যমান ৯ হাজার ফুটের রানওয়েকে ১০ হাজার ৭০০ ফুটে সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৭০০ ফুট থাকছে সমুদ্রবক্ষে। উড়োজাহাজ ওঠা-নামা করবে সমুদ্রের বুক ছুঁয়ে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্পটির উদ্বোধন করেন ২০২১ সালের ২৯ আগস্ট। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১ হাজার ৫৬৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। এর পুরো অর্থায়ন করছে বেবিচক। এটি বাস্তবায়ন হলে কক্সবাজার থেকে সরাসরি ওয়াইডবডি উড়োজাহাজে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা সম্ভব হবে। সুত্র: আজকের পত্রিকা

সারাদেশ-এর আরও খবর