দেশের জাতীয় নির্বাচনে ভাগ্যবান আসনের মধ্যে কক্সবাজার-৪ উখিয়া-টেকনাফ আসনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই আসন থেকে যে দলের প্রার্থী নির্বাচিত হবেন সেই দলই সরকার গঠন করে থাকে।
স্বাধীনতার পর থেকে বরাবরই এমনটি দেখে আসছেন এখানকার মানুষ। বিশ্বময় পরিচিত মানবতার শহর হিসেবে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ায় উখিয়া-টেকনাফের আলাদা কদর রয়েছে। সেই সাথে বদনাম আছে ইয়াবার কারণে। বাংলাদেশে ইয়াবা আসে মিয়ানমার সীমান্ত পথে টেকনাফ হয়ে। ইয়াবার গডফাদাররা সব সময়ই থাকে প্রশাসনের ধরাছোঁয়ার বাইরে। উখিয়া-টেকনাফ মাদকের স্বর্গরাক্যে পরিণত হয়েছে। অনেক জনপ্রতিনিধি ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত।
সম্প্রতি উখিয়া-টেকনাফের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াতের সাংগঠনিক তৎপরতা বেড়েছে। আশির দশকের উখিয়া-টেকনাফের রাজনীতির নিয়ন্ত্রক ছিলেন এজাহার মিয়া কোম্পানি। এজাহার মিয়ার রাজনীতির শুরু জিয়াউর রহমানের জাগদলে। পরবর্তী সময়ে এরশাদের জাতীয় পার্টিতে। জাতীয় পার্টির টিকেটে নির্বাচিত হন টেকনাফ সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হিসেবে
এক সময় একটি কথা প্রচলিত ছিল, এজাহার কোম্পনি যেদিকে যান, সেদিকেই ঘোরে উখিয়া-টেকনাফের রাজনীতির চাকা। এই এজাহার মিয়ার দেখানো পথেই হাঁটা শুরু করলেন তার বড় ছেলে সাবেক সাংসদ আব্দুর রহমান বদি। যিনি বিতর্কিত কর্মকান্ড দিয়ে বিভিন্ন সময় হয়েছেন গণমাধ্যমের শীর্ষ সংবাদ।
১৯৯৬ সালের নির্বাচনে উখিয়া-টেকনাফ আসন পান বিএনপির মনোনয়ন। নির্বাচনের কিছুদিন আগে সেই মনোনয়ন কেড়ে নেওয়া হয়। এতে বেঁকে বসেন বদি। যোগ দেন আওয়ামী লীগে। এসেই নৌকা প্রতীকের জন্য শুরু করেন জোর লবিং। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর টেকনাফ সদরকে পৌরসভা ঘোষণা করা হয়। ১৯৯৮ সালের দিকে আওয়ামী লীগ নেতাদের সহায়তায় হন সেই পৌরসসভার প্রশাসক। এমপি পদে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে বদি ২০০২ সালে টেকনাফ পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হন।
২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েই নির্বাচিত হন সংসদ সদস্য। এর পর থেকেই এমপি আব্দুর রহমান বদি হয়ে ওঠেন উখিয়া-টেকনাফের রাজনীতিতে অপ্রতিরোধ্য একজন রাজনীতিবিদ ও একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারি। তার কথায় চলে সব। অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদ এবং উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে এমন কি গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তার ইচ্ছাতেই প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়েছেন। অবৈধ সম্পদ অর্জনের দুদকের মামলায় সাবেক সাংসদ আব্দুর রহমান বদিকে তিন বছরের কারাদন্ড দিয়েছিলেন আদালত।
গেল জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি মনোনয়ন না পেলেও তার স্ত্রী শাহিন আক্তার নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন পেয়ে বিপুল ভোটের ব্যবধানে নির্বাচিত হন। শাহীন আক্তার নির্বাচিত হলেও এখনো বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রোগ্রামে আব্দুর রহমান বদি অংশ গ্রহণ করে থাকেন। তার জনপ্রিয়তা ও জনসম্পৃক্ততা থাকলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাবে কিনা তা নিয়ে এখনো জল্পনা কল্পনার শেষ নেই।
এদিকে তারই শ্যালক উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও রাজা পাললং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গির কবির চৌধুরী আগামী সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
আগামীতে আব্দুর রহমান বদির শ্যালক জাহাঙ্গির কবির চৌধুরী, নাকি তার স্ত্রী বর্তমান সাংসদ শাহিন আক্তার অখবা তিনি নিজেই আবার মনোনয়ন পাবেন কিনা তা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাড়িঁয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আওয়ামীলীগ নেতা জানিয়েছেন, এরইমধ্যে আওয়ামীলীগে ত্রিমুখী প্রতিযোগতা শুরু হয়ে গেছে বলে এক পক্ষ বদি গ্রুপ অন্য পক্ষ রাজা শাহ আলমের ৬ জনের এক গ্রুপ ও কক্সবাজার জেলা যুবলীগের সভাপতি সোহেল আহমদ বাহাদুর গ্রপ।
তাছাড়া আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন বদির চাচা শাশুড় উখিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সাবেক উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী, তার স্ত্রী মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রী নিগার সোলতানা, ও বদির আরেক চাচা শাশুড় বীর মুক্তিযোদ্ধা জাফর আলম চৌধুরী, কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি রাজা শাহ আলম, জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য ও উখিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি কবি আদিল উদ্দিন চৌধুরী, ককসবাজার জেলা যুবলীগের সভাপতি সোহেল আহমদ বাহাদুর, টেকনাফের নুরুল বশর, মাহাবুব মোর্শেদ, সাইফুদ্দিন খালেদসহ এক ডজন নেতা আওয়ামীলীগের মনোনয়ন পেতে জোর লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন।
এদিকে বিএনপিতে ক্লীন ইমেজের বরেণ্য রাজনীতিবিদ কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক সাংসদ শাহজাহান চৌধুরীর এলাকায় ব্যাপক জনসমর্থন রয়েছে।
তিনি সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যাক্তি। বিএনপি আন্দোলন ও নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বিএনপির একক প্রার্থী হিসেবে বরাবরই শাহজাহান চৌধুরীই রয়েছেন সবার শীর্ষে।
অপরদিকে উখিয়া-টেকনাফে জামায়াতে ইসলামীর বিশাল ভোট ব্যাংক রয়েছে। তারা তাদের দলীয় কার্যক্রমে কোন অংশে পিছিয়ে নেই। আগের যে কোন সময়ের তুলনায় জামায়াত ইসলাম মানুষের কাছে একটি গ্রহণযোগ্য দল। এই আসন থেকে কক্সবাজার জেলা জামায়াতের আমীর ও হোয়াইক্যং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুর আহমদ আনোয়ারি চুড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে ইতিমধ্যেই জানান দিয়েছেন। এখানে জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক কার্যক্রম তেমন একটা চোখে পড়ে না। বিএনপি-জামায়াত ও আওয়ামী লীগের শক্ত অবস্থান রয়েছে।
সাধারণ ভোটাররা বলেন, সুষ্ঠু ভোট হলে বিএনপির প্রার্থী সাবেক সাংসদ শাহজাহান চৌধুরী বিপুল ভোটে জয় লাভ করবেন। এটি বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত।
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র কয়েক মাস বাকি। ইতোমধ্যে কক্সবাজারের চার আসনকে ঘিরেই নির্বাচনী হাওয়া বইছে। সম্ভাব্য প্রার্থীসহ নির্বাচন নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়ে গেছে।
সাধারণ মানুষ ও দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে আলোচনায় বেরিয়ে আসছে কোন দল থেকে কে প্রার্থী হচ্ছেন। কাকে মনোনয়ন দিলে বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি, সেই হিসাব মেলাচ্ছেন বড় রাজনৈতিক দলগুলো ছাড়াও স্থানীয় ভোটাররা। এছাড়া আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যারা প্রার্থী হবেন তাদের মধ্যে দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়ে গেছে। এলক্ষ্যে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াত ও জাতীয় পার্টি থেকে ডজন খানেক নেতা নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন।
আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কক্সবাজারের ৪- উখিয়া-টেকনাফে স্ব-স্ব এলাকার ভোটারদের ঘিরে ব্যাপক গণসংযোগসহ নানা কৌশলে নির্বাচনী প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে দলীয় প্রতীকের পক্ষে সমর্থন চাইছেন, জানাচ্ছেন নির্বাচিত হলে এলাকার উন্নয়নে স্ব-স্ব দলের পরিকল্পনার কথাও।
কক্সবাজার আসন-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) মিয়ানমার সীমান্ত সংলগ্ন উপজেলা টেকনাফ ও উখিয়ার একটি পৌরসভাসহ ১২টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত কক্সবাজার-৪ অর্থাৎ সংসদীয় আসনে এটি ২৯৭ নম্বর আসন। দেশের সর্বদক্ষিণের দুটি উপজেলা শহর নিয়ে গঠিত কক্সবাজার-৪ আসনের মোট ভোটার সংখ্যা প্রায় তিন লাখের বেশি।
১৯৯১ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচন ও সরকার গঠন ব্যবস্থা দেখে জেলার এ আসনটিকে ভাগ্যবান আসন হিসেবে চিহ্নিত করেছেন ভোটাররা। কেননা প্রতিবারই যে দল সরকার গঠন করে থাকে- উখিয়া-টেকনাফ আসন থেকে ওই দলের টিকিট প্রাপ্ত নেতাই এমপি নির্বাচিত হয়ে আসছেন।
এ কারণে এই আসনের ভোটারদের মধ্যে একটি বিশ্বাস কাজ করে যে, এটি হচ্ছে সরকার গঠনের জন্য লক্ষ্মী আসন। ১৯৯১ ও ২০০১ সালে বিএনপি দলীয় প্রার্থী শাহজাহান চৌধুরী নির্বাচিত হন। আর সে দুইবারই বিএনপি ক্ষমতায় আসীন হয়।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী ও ২০০৯ সালে ও ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুর রহমান বদি এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। ২০১৮ সালে এমপি নির্বাচিত হন এমপি বদির সহধর্মিণী শাহিন আক্তার বদি। তখন উল্লেখিত সময়ে চারবারই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসীন হয়ে দেশ পরিচালনা করে চলেছে। সে হিসেবে কক্সবাজারের এ আসনকে (উখিয়া-টেকনাফ) ভাগ্যবান আসন বলা হয়ে থাকে।
উখিয়া – টেকনাফ আসনটি ফিরে পেতে চায় বিএনপি, আওয়ামীলীগে ত্রিমুখী প্রতিযোগিতা
বিএনপি-জামায়াতের একক প্রার্থী, আওয়ামীলীগের এক ডজন
দেশের জাতীয় নির্বাচনে ভাগ্যবান আসনের মধ্যে কক্সবাজার-৪ উখিয়া-টেকনাফ আসনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই আসন থেকে যে দলের প্রার্থী নির্বাচিত হবেন সেই দলই সরকার গঠন করে থাকে।
স্বাধীনতার পর থেকে বরাবরই এমনটি দেখে আসছেন এখানকার মানুষ। বিশ্বময় পরিচিত মানবতার শহর হিসেবে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ায় উখিয়া-টেকনাফের আলাদা কদর রয়েছে। সেই সাথে বদনাম আছে ইয়াবার কারণে। বাংলাদেশে ইয়াবা আসে মিয়ানমার সীমান্ত পথে টেকনাফ হয়ে। ইয়াবার গডফাদাররা সব সময়ই থাকে প্রশাসনের ধরাছোঁয়ার বাইরে। উখিয়া-টেকনাফ মাদকের স্বর্গরাক্যে পরিণত হয়েছে। অনেক জনপ্রতিনিধি ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত।
সম্প্রতি উখিয়া-টেকনাফের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াতের সাংগঠনিক তৎপরতা বেড়েছে। আশির দশকের উখিয়া-টেকনাফের রাজনীতির নিয়ন্ত্রক ছিলেন এজাহার মিয়া কোম্পানি। এজাহার মিয়ার রাজনীতির শুরু জিয়াউর রহমানের জাগদলে। পরবর্তী সময়ে এরশাদের জাতীয় পার্টিতে। জাতীয় পার্টির টিকেটে নির্বাচিত হন টেকনাফ সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হিসেবে
এক সময় একটি কথা প্রচলিত ছিল, এজাহার কোম্পনি যেদিকে যান, সেদিকেই ঘোরে উখিয়া-টেকনাফের রাজনীতির চাকা। এই এজাহার মিয়ার দেখানো পথেই হাঁটা শুরু করলেন তার বড় ছেলে সাবেক সাংসদ আব্দুর রহমান বদি। যিনি বিতর্কিত কর্মকান্ড দিয়ে বিভিন্ন সময় হয়েছেন গণমাধ্যমের শীর্ষ সংবাদ।
১৯৯৬ সালের নির্বাচনে উখিয়া-টেকনাফ আসন পান বিএনপির মনোনয়ন। নির্বাচনের কিছুদিন আগে সেই মনোনয়ন কেড়ে নেওয়া হয়। এতে বেঁকে বসেন বদি। যোগ দেন আওয়ামী লীগে। এসেই নৌকা প্রতীকের জন্য শুরু করেন জোর লবিং। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর টেকনাফ সদরকে পৌরসভা ঘোষণা করা হয়। ১৯৯৮ সালের দিকে আওয়ামী লীগ নেতাদের সহায়তায় হন সেই পৌরসসভার প্রশাসক। এমপি পদে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে বদি ২০০২ সালে টেকনাফ পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হন।
২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েই নির্বাচিত হন সংসদ সদস্য। এর পর থেকেই এমপি আব্দুর রহমান বদি হয়ে ওঠেন উখিয়া-টেকনাফের রাজনীতিতে অপ্রতিরোধ্য একজন রাজনীতিবিদ ও একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারি। তার কথায় চলে সব। অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদ এবং উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে এমন কি গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তার ইচ্ছাতেই প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়েছেন। অবৈধ সম্পদ অর্জনের দুদকের মামলায় সাবেক সাংসদ আব্দুর রহমান বদিকে তিন বছরের কারাদন্ড দিয়েছিলেন আদালত।
গেল জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি মনোনয়ন না পেলেও তার স্ত্রী শাহিন আক্তার নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন পেয়ে বিপুল ভোটের ব্যবধানে নির্বাচিত হন। শাহীন আক্তার নির্বাচিত হলেও এখনো বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রোগ্রামে আব্দুর রহমান বদি অংশ গ্রহণ করে থাকেন। তার জনপ্রিয়তা ও জনসম্পৃক্ততা থাকলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাবে কিনা তা নিয়ে এখনো জল্পনা কল্পনার শেষ নেই।
এদিকে তারই শ্যালক উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও রাজা পাললং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গির কবির চৌধুরী আগামী সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
আগামীতে আব্দুর রহমান বদির শ্যালক জাহাঙ্গির কবির চৌধুরী, নাকি তার স্ত্রী বর্তমান সাংসদ শাহিন আক্তার অখবা তিনি নিজেই আবার মনোনয়ন পাবেন কিনা তা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাড়িঁয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আওয়ামীলীগ নেতা জানিয়েছেন, এরইমধ্যে আওয়ামীলীগে ত্রিমুখী প্রতিযোগতা শুরু হয়ে গেছে বলে এক পক্ষ বদি গ্রুপ অন্য পক্ষ রাজা শাহ আলমের ৬ জনের এক গ্রুপ ও কক্সবাজার জেলা যুবলীগের সভাপতি সোহেল আহমদ বাহাদুর গ্রপ।
তাছাড়া আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন বদির চাচা শাশুড় উখিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সাবেক উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী, তার স্ত্রী মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রী নিগার সোলতানা, ও বদির আরেক চাচা শাশুড় বীর মুক্তিযোদ্ধা জাফর আলম চৌধুরী, কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি রাজা শাহ আলম, জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য ও উখিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি কবি আদিল উদ্দিন চৌধুরী, ককসবাজার জেলা যুবলীগের সভাপতি সোহেল আহমদ বাহাদুর, টেকনাফের নুরুল বশর, মাহাবুব মোর্শেদ, সাইফুদ্দিন খালেদসহ এক ডজন নেতা আওয়ামীলীগের মনোনয়ন পেতে জোর লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন।
এদিকে বিএনপিতে ক্লীন ইমেজের বরেণ্য রাজনীতিবিদ কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক সাংসদ শাহজাহান চৌধুরীর এলাকায় ব্যাপক জনসমর্থন রয়েছে।
তিনি সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যাক্তি। বিএনপি আন্দোলন ও নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বিএনপির একক প্রার্থী হিসেবে বরাবরই শাহজাহান চৌধুরীই রয়েছেন সবার শীর্ষে।
অপরদিকে উখিয়া-টেকনাফে জামায়াতে ইসলামীর বিশাল ভোট ব্যাংক রয়েছে। তারা তাদের দলীয় কার্যক্রমে কোন অংশে পিছিয়ে নেই। আগের যে কোন সময়ের তুলনায় জামায়াত ইসলাম মানুষের কাছে একটি গ্রহণযোগ্য দল। এই আসন থেকে কক্সবাজার জেলা জামায়াতের আমীর ও হোয়াইক্যং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুর আহমদ আনোয়ারি চুড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে ইতিমধ্যেই জানান দিয়েছেন। এখানে জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক কার্যক্রম তেমন একটা চোখে পড়ে না। বিএনপি-জামায়াত ও আওয়ামী লীগের শক্ত অবস্থান রয়েছে।
সাধারণ ভোটাররা বলেন, সুষ্ঠু ভোট হলে বিএনপির প্রার্থী সাবেক সাংসদ শাহজাহান চৌধুরী বিপুল ভোটে জয় লাভ করবেন। এটি বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত।
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র কয়েক মাস বাকি। ইতোমধ্যে কক্সবাজারের চার আসনকে ঘিরেই নির্বাচনী হাওয়া বইছে। সম্ভাব্য প্রার্থীসহ নির্বাচন নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়ে গেছে।
সাধারণ মানুষ ও দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে আলোচনায় বেরিয়ে আসছে কোন দল থেকে কে প্রার্থী হচ্ছেন। কাকে মনোনয়ন দিলে বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি, সেই হিসাব মেলাচ্ছেন বড় রাজনৈতিক দলগুলো ছাড়াও স্থানীয় ভোটাররা। এছাড়া আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যারা প্রার্থী হবেন তাদের মধ্যে দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়ে গেছে। এলক্ষ্যে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াত ও জাতীয় পার্টি থেকে ডজন খানেক নেতা নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন।
আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কক্সবাজারের ৪- উখিয়া-টেকনাফে স্ব-স্ব এলাকার ভোটারদের ঘিরে ব্যাপক গণসংযোগসহ নানা কৌশলে নির্বাচনী প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে দলীয় প্রতীকের পক্ষে সমর্থন চাইছেন, জানাচ্ছেন নির্বাচিত হলে এলাকার উন্নয়নে স্ব-স্ব দলের পরিকল্পনার কথাও।
কক্সবাজার আসন-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) মিয়ানমার সীমান্ত সংলগ্ন উপজেলা টেকনাফ ও উখিয়ার একটি পৌরসভাসহ ১২টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত কক্সবাজার-৪ অর্থাৎ সংসদীয় আসনে এটি ২৯৭ নম্বর আসন। দেশের সর্বদক্ষিণের দুটি উপজেলা শহর নিয়ে গঠিত কক্সবাজার-৪ আসনের মোট ভোটার সংখ্যা প্রায় তিন লাখের বেশি।
১৯৯১ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচন ও সরকার গঠন ব্যবস্থা দেখে জেলার এ আসনটিকে ভাগ্যবান আসন হিসেবে চিহ্নিত করেছেন ভোটাররা। কেননা প্রতিবারই যে দল সরকার গঠন করে থাকে- উখিয়া-টেকনাফ আসন থেকে ওই দলের টিকিট প্রাপ্ত নেতাই এমপি নির্বাচিত হয়ে আসছেন।
এ কারণে এই আসনের ভোটারদের মধ্যে একটি বিশ্বাস কাজ করে যে, এটি হচ্ছে সরকার গঠনের জন্য লক্ষ্মী আসন। ১৯৯১ ও ২০০১ সালে বিএনপি দলীয় প্রার্থী শাহজাহান চৌধুরী নির্বাচিত হন। আর সে দুইবারই বিএনপি ক্ষমতায় আসীন হয়।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী ও ২০০৯ সালে ও ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুর রহমান বদি এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। ২০১৮ সালে এমপি নির্বাচিত হন এমপি বদির সহধর্মিণী শাহিন আক্তার বদি। তখন উল্লেখিত সময়ে চারবারই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসীন হয়ে দেশ পরিচালনা করে চলেছে। সে হিসেবে কক্সবাজারের এ আসনকে (উখিয়া-টেকনাফ) ভাগ্যবান আসন বলা হয়ে থাকে।
সম্পাদক ও প্রকাশক
এ এম জি ফেরদৌস
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক
নাহিদুল ফাহিম
প্রযুক্তি ব্যবস্থাপনা
ইঞ্জি. মেহেদী হাসান |
প্রধান কার্যালয়
পূর্ব লিংক রোড, ঝিরংঝা, কক্সবাজার
মোবাইল
০১৮১৯-৫০২-৩২২
ই-মেইল beachnews24@gmail.com |
প্রিন্টের তারিখ ও সময়: October 8, 2024, 12:29 am