কক্সবাজারে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে দুই পর্যটক আহত

  বিশেষ প্রতিনিধি    30-09-2022    176
কক্সবাজারে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে দুই পর্যটক আহত

কক্সবাজারে ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে দুই পর্যটক আহত হয়েছেন। এর মধ্যে একজনের অবস্থা গুরুতর। শুক্রবার (৩০ সেপ্টেম্বর) ভোরে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সিগাল পয়েন্টে এ ঘটনা ঘটে। আহত পর্যটকরা হলেন- কুমিল্লার তিতাস থানার গোপালপুরের সামশুল হকের ছেলে মেহেদী হাসান (২৭) ও মোশাররফের ছেলে মো. শাকিল (২৯)। তারা সম্পর্কে আপন চাচাতো ভাই। ট্যুরিস্ট পুলিশ ও আহত পর্যটকদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার ভোরে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পৌঁছান তারা। গাড়ি থেকে নেমে সিগাল পয়েন্ট থেকে সমুদ্র সৈকতে নামেন ৷ এ সময় ৫/৬ জন ছিনতাইকারী এসে তাদের গতিরোধ করে। পরে টাকা ও মোবাইল ছিনিয়ে নেওয়ার পর ধারালো ছুরি দিয়ে মেহেদী হাসানকে আঘাত করতে থাকে তারা। এতে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে শাকিলকেও ছুরিকাঘাত করা হয়। পরে তাদের উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে যায় ট্যুরিস্ট পুলিশ ও স্থানীয়রা। আহত শাকিল জানান, টাকা ও মোবাইল ছিনিয়ে নিয়েও তারা ক্ষান্ত হয়নি। মেহেদীকে ছুরি দিয়ে বুকের ডান পাশের পিঠে এবং হাতে ছুরিকাঘাত করা হয়। এতে হাত ছিদ্র হয়ে যায়। বুকের ডান পাশের পিঠের অংশ থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হতে থাকে। এদিকে তাদের উদ্ধারের পর কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে পড়তে হয় চিকিৎসা বিড়ম্বনায়। জরুরি বিভাগ দেখার পর তাদের পাঠানো হয় ৫ম তলার সার্জারির ওয়ার্ডে। কিন্তু সেখানে কর্তব্যরত ডাক্তার ও নার্স ট্যুরিস্ট পুলিশ এবং আহত পর্যটকদের জানান শুক্রবার সার্জারি হয় না। খবর পেয়ে বেলা পৌনে ১১টার দিকে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, ৫ম তলার পুরুষ সার্জারি ওয়ার্ডে অন্য একজন রোগীর বেডের ওপর বসিয়ে রাখা হয়েছে ছুরিকাহত মেহেদী হাসানকে। পাশে দাঁড়িয়ে আছেন ট্যুরিস্ট পুলিশের কর্মকর্তা আব্দুস সবুর ও অপর ছুরিকাহত পর্যটক শাকিল। ট্যুরিস্ট পুলিশের কর্মকর্তা আব্দুস সবুর জানান, শুক্রবার নাকি ওটি (অপারেশন থিয়েটার) বন্ধ থাকে, তাই মুমূর্ষু পর্যটককে অপারেশন করানো সম্ভব হচ্ছে না। সেলাই না করার কারণে অনবরত রক্তক্ষরণ হচ্ছে। পরে ওই পুলিশ কর্মকর্তাসহ পুরুষ সার্জারি ওয়ার্ডের চিকিৎসক রুমে বসে থাকা একজন নারী চিকিৎসকের সঙ্গে পুনারায় কথা বললে তিনি স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন, শুক্রবার ছুটির দিন। তাই ওটি বন্ধ। মেডিসিন সেবা ছাড়া আজ অন্য কোন সেবা পাবেন না। এরপর যোগাযোগ করা হয় সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের প্রধান ও আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. আশিকুর রহমানের সঙ্গে। ওই নারী চিকিৎসকের উদ্বৃতি দিয়ে শুক্রবারে ওটি বন্ধ থাকে কিনা জানতে চাইলে ডা. আশিক বলেন, ‘শুক্রবার বা কোনো সময় ওটি বন্ধ থাকার কোনো নিয়ম নেই। আপনি আরেকটু অপেক্ষা করুন, আমি দেখছি।’ এরপর সার্জারি ওয়ার্ডের (মহিলা সার্জারি ওয়ার্ড) মেডিকেল অফিসারের কক্ষে গেলে সেখানে দেখা যায় কয়েকজন চিকিৎসক বসে আছেন। এর মধ্যে একজন ব্যক্তি (পরে জানা যায়, তিনি ডা. সাকিব রেজা, তবে তিনি কোন দায়িত্বে আছেন জানা যায়নি) ট্যুরিস্ট পুলিশের ওই কর্মকর্তা এবং এই প্রতিবেদককে জানান, শুক্রবার স্বাভাবিকভাবে ওটি খোলা থাকে না। যদি খুব বেশি ইমারজেন্সি হয়, সেক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। তবে সেক্ষেত্রেও একসঙ্গে ৩-৪ জন রোগী জমা হতে হবে। কারণ একজন রোগীর জন্য ওটি খোলা হয় না। বার বার অনুরোধ করার ফলে ডা. সাকিব রেজা বলেন, সেলাই করার আগে একটা এক্স-রে করতে হয়। এখানে এক্সরে বন্ধ। আপনারা বাইরের হাসপাতাল থেকে একটা এক্স-রে করে আনেন। তারপর কী ধরনের সেলাই করতে হবে সেই অনুযায়ী করা হবে। ততক্ষণে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু সুফিয়ান, হাসপাতালের আরএমও ডা. আশিকসহ কয়েকজনকে চিকিৎসা অবহেলার বিষয়টি অবগত করা হলে ধীরে ধীরে নড়েচড়ে বসতে শুরু করেন চিকিৎসকরা। ডাক্তারদের পরামর্শ অনুযায়ী এক্স-রে করার জন্য প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় ডা. সাকিব রেজা তার কক্ষ থেকে বেরিয়ে এসে আবারও খোঁজখবর নেন ছুরিকাহত পর্যটক মেহেদী হাসানের। ট্যুরিস্ট পুলিশের কর্মকর্তা আব্দুস সবুর জানান, এক্স-রে করার পর দুপুরে ওটিতে নিয়ে গিয়ে সেলাই করা হয়। কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু সুফিয়ান জানান, বিষয়টি জানার পর তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আরএমওকে ফোনে জানানো হয়েছিল। কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আশিকুর রহমান জানান, যারা এই ধরণের কথাবার্তা বলেছে তারা ভালো করেনি। এটা গ্রহণযোগ্য নয়। যাচাই-বাছাই করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সারাদেশ-এর আরও খবর