হিজরতের সময় যে গুহায় আশ্রয় নিয়েছিলেন নবী করিম সা.

  বিশেষ প্রতিনিধি    06-11-2022    294
হিজরতের সময় যে গুহায় আশ্রয় নিয়েছিলেন নবী করিম সা.

জাবালে সাওর বা গারে সাওর। এই সাওর পর্বতের একটি গুহায় হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) মদিনা মোনাওয়ারায় হিজরতের সময় আত্মগোপন করেছিলেন।

এই গুহায় আত্মগোপনের সেই সঙ্কটময় সময়েও নবী করিম (সা.) ছিলেন আল্লাহর সাহায্যের ওপর পূর্ণ আস্থাশীল ও দুশ্চিন্তাহীন। কোরআনে কারিমে এ প্রসঙ্গে উল্লেখ আছে যে, ‘যদি তোমরা তাকে (নবী মুহাম্মদকে) সাহায্য না করো, তবে মনে রেখো, তাকে কাফেররা (মক্কা থেকে) বহিষ্কার করেছিল।

তিনি ছিলেন দু’জনের একজন, যখন তারা উভয়ে গুহার মধ্যে ছিলেন, তখন তিনি আপন সঙ্গীকে বললেন, চিন্তা করো না, আল্লাহ আমাদের সঙ্গে আছেন। ’ -সূরা তাওবা: ৪০

সাওর পাহাড়টি মক্কার দক্ষিণে কুদাই মহল্লার অন্তগত বর্তমানে পরিকল্পিত আল হিজরা এলাকায় অবস্থিত।

এই পাহাড়ের উপর থেকে সমুদ্র দেখা যায়।

স্থানটি মসজিদে হারাম থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। সাওর পর্বতের উচ্চতা ৪৫৮ মিটার। পর্বতটির মোট আয়তন ১০ বর্গমিটার।

এ গুহার মধ্যেই হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ও হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) মদিনা মোনাওয়ারায় হিজরত করার সময় ৩ দিন আত্মগোপন করেছিলেন। এ গুহার সামনে এবং পেছনে একটি করে প্রবেশ দ্বার রয়েছে। গুহাটির প্রশস্ততা ২ বর্গ মিটার।

সাওর পাহাড়ের গুহায় আত্মগোপন প্রসঙ্গে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) আমার কাছে হাদিস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আমি নবী করিম (সা.)-এর সঙ্গে গুহায় ছিলাম, আমি মুশরিকদের পদচারণা প্রত্যক্ষ করছিলাম, আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ (সা.) তাদের কেউ যদি পা ওঠায় তাহলেই আমাদের দেখে ফেলবে, তিনি বললেন, আমাদের দু’জন সম্পর্কে তোমার কী ধারণা? আমাদের তৃতীয় জন হলেন- আল্লাহ। অর্থাৎ তিনি আমাদের সাহায্যকারী। ’ –সহিহ বোখারি ও মুসলিম

তবে এ পর্বতের ফজিলত সম্পর্কে বিশুদ্ধ কোনো হাদিস বা কোনো সাহাবির কোনো মন্তব্য নেই। তার পরও হজপালন করতে আসা মানুষ এ পর্বত দেখার দেখার জন্য উদগ্রীব থাকেন এবং তা দেখতে যান। হাজিদের দর্শনীয় স্থানের তালিকায় এ পর্বতের নাম থাকবেই। দর্শনার্থীদের অনেকেই সাওর পাহাড়ে দলবেধে ওঠেন, কেউ নিচে থেকেই দেখেন।

অনেকে সাওর পর্বতের যে গুহায় নবী করিম (সা.) লুকিয়েছিলেন, সেখানে উঠে নামাজ পড়েন, দোয়া করেন, গুহায় মনের বাসনা লিখে রাখেন, সেখানকার পাথর ও মাটিকে বরকতময় মনে করে তা নিয়ে আসেন। যদিও এসব কাজের কোনো ভিত্তি ইসলামি শরিয়তে নেই।

মসজিদে হারাম সংলগ্ন নবী করিম (সা.)-এর বাড়িটি বর্তমানে লাইব্রেরি। নবী করিম (সা.) হিজরতের সময় নিজ বাড়ি থেকে বের হয়ে হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.)-এর করে রাখা বাড়ি হয়ে মদিনার উদ্দেশে রওনা করেন। তিনি মক্কা থেকে যে পথে মদিনার উদ্দেশে রওয়ানা দিয়েছিলেন সে পথের বর্তমান নাম- হিজরা রোড। সেখানে মিসফালায় হিজরা মসজিদ নামে একটি মসজিদ রয়েছে।

সাওর পাহাড়ে ওঠা খুব কষ্টসাধ্য। সওয়াবের নিয়তে ওঠাকে আলেমরা নিরুৎসাহিত করেন। অনেকে এখানে ওঠাকে বেদআতও বলেছেন। তবে নবী করিম (সা.) দ্বীনের জন্য কত কষ্ট করেছিলেন তা উপলব্ধির জন্য উঠতে পারেন। কিন্তু সুঠাম দেহের অধিকারী না হলে এখানে না ওঠাই ভালো। পাহাড়টি নিচ থেকে দেখাই উত্তম।

পাহাড়ের পাদদেশে সৌদি সরকারের ‘সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ’ বিভাগের একটি অফিস রয়েছে। ওই অফিসে বিভিন্ন ভাষায় সাওর পাহাড়ের পরিচিতিমূলক বর্ণনা দেওয়া হয়। বিতরণ করা হয় বিভিন্ন বই, কোরআনের সিডি। এছাড়া এখানে দর্শনার্থীদের পানি পানেরও সুব্যবস্থা রয়েছে।

ধর্ম ও জীবন-এর আরও খবর