ডেঙ্গুতে নতুন উপসর্গ, দেরি করে হাসপাতালে আসায় বাড়ছে মৃত্যুঝুঁকি

  বিশেষ প্রতিনিধি    26-10-2022    172
ডেঙ্গুতে নতুন উপসর্গ, দেরি করে হাসপাতালে আসায় বাড়ছে মৃত্যুঝুঁকি

দেশে প্রতিদিন ডেঙ্গুরোগী যেভাবে বাড়ছে, তাতে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্কও বাড়ছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ডেঙ্গুর নতুন উপসর্গ। এ বছর ডেঙ্গুরোগীদের মধ্যে নতুন যেসব উপসর্গ দেখা যাচ্ছে তার সঙ্গে প্রথাগত ডেঙ্গুর উপসর্গের তেমন মিল নেই। এসব উপসর্গের মধ্যে রয়েছে- ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া ও মাথাব্যথা। নতুন এসব উপসর্গের কারণে অনেক রোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন, তা বুঝতে না পেরে হাসপাতালে আসতে দেরি করছেন। যে কারণে চিকিৎসা বিলম্বিত হওয়ায় তাদের অবস্থা জটিল হচ্ছে। ফলে আক্রান্ত রোগীদের অনেকেই হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর মারা যাচ্ছেন।

মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ৭৫০ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ নিয়ে সারাদেশে হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গুরোগীর সংখ্যা দাঁড়ালো ৩ হাজার ৪১৬ জনে। তবে এদিন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে কারও মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। ১ জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মারা গেছেন মোট ১১৮ জন।

চলতি বছর ডেঙ্গুরোগীদের মধ্যে নতুন যেসব উপসর্গ দেখা যাচ্ছে তার সঙ্গে প্রথাগত ডেঙ্গুর উপসর্গের তেমন মিল নেই। এসব উপসর্গের মধ্যে রয়েছে- ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া ও মাথাব্যথা। নতুন এসব উপসর্গের কারণে অনেক রোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন, তা বুঝতে না পেরে হাসপাতালে আসতে দেরি করছেন।

এদিকে, গত কয়েক সপ্তাহে ডেঙ্গু পরিস্থিতি হঠাৎ করে এতটাই খারাপ হয়েছে যে, হাসপাতালে ডেঙ্গুরোগী প্রতিদিনই বাড়ছে। এ অবস্থায় চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। এমনকি ডেঙ্গুরোগীদের জন্য আলাদা ওয়ার্ড তৈরি করেও চাপ সামলানো যাচ্ছে না।

রাজধানীর মুগদা জেনারেল হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, হাসপাতাল ভবনের দশম ফ্লোরটি শুধু ডেঙ্গুরোগীদের জন্যই রাখা হয়েছে। ওয়ার্ডের বাইরের খোলা জায়গাকেও ডেঙ্গু ডেডিকেটেড ওয়ার্ড ঘোষণা করা হয়েছে। মূল ওয়ার্ডের বাইরের খোলা জায়গা, যেটি মূলত প্রথাগত কোনো ওয়ার্ড নয়- সেখানেও এখন ডেঙ্গুরোগী রাখা হচ্ছে। ওয়ার্ডের বাইরের ওই খোলা জায়গাকেও ডেঙ্গু ডেডিকেটেড ওয়ার্ড হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এরপরও হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের মধ্যে অনেকেই বেড না পেয়ে মেঝেতে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

গত কয়েক সপ্তাহে ডেঙ্গু পরিস্থিতি হঠাৎ করে এতটাই খারাপ হয়েছে যে, হাসপাতালে প্রতিদিনই রোগী বাড়ছে। এ অবস্থায় চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। এমনকি ডেঙ্গুরোগীদের জন্য আলাদা ওয়ার্ড তৈরি করেও চাপ সামলানো যাচ্ছে না।

শাহজাহানপুর থেকে আসা এক রোগীর মা জানান, আমার ছেলের (রাফি) কয়েকদিন ধরে মাথাব্যথা-জ্বর ছিল। আমরা প্যারাসিটামল খাওয়াচ্ছিলাম, কিন্তু জ্বর কমছিল না। ক্রমেই দুর্বল হলে ছেলেকে হাসপাতালে নিয়ে আসি। পরীক্ষা করার পর ডেঙ্গু ধরা পড়ে।

তিনি বলেন, আমরা বাসায় মশার কয়েল জ্বালাই, রাতে মশারি টাঙিয়ে ঘুমাই। রাফি বাইরে কোথাও থেকে আক্রান্ত হতে পারে। কারণ, সে (রাফি) ছাড়া বাসার অন্য সবাই সুস্থ আছে।

ডেঙ্গু ডেডিকেটেড ওয়ার্ডে রোগীদের সেবা দেওয়া এক চিকিৎসক জানান, এবার ডেঙ্গুতে আক্রান্তদের মধ্যে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া ও মাথাব্যথার উপসর্গ দেখা দিচ্ছে। নতুন উপসর্গের কারণে অনেকে ঠিকঠাক বুঝতে পারছেন না। এ কারণে তারা হাসপাতালে আসতে দেরি করছেন। এতে চিকিৎসা বিলম্বিত হচ্ছে, রোগীর শারীরিক অবস্থাও জটিল হচ্ছে। তবে হাসপাতালে আসার পর তারা সঠিক চিকিৎসা পাচ্ছেন।

ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে অধিকাংশের বয়স ২০ বছরের বেশি। তবে ৪০-৫০ বছর বয়সীরা বেশি মারা যাচ্ছেন। এরপরও মারা যাওয়া রোগীদের ৩৫ শতাংশের বয়স ১৮ বছরের কম। আক্রান্ত রোগীদের অনেককেই দেরি করে হাসপাতালে আসায় ভর্তির তিনদিনের মধ্যে কেউ কেউ মারা যাচ্ছেন।

মুগদা জেনারেল হাসপাতালে শিশুদের জন্য আলাদা ওয়ার্ড রয়েছে। এ ওয়ার্ডের দুটি কক্ষকে ডেঙ্গু ওয়ার্ড ঘোষণা করা হয়েছে। আবার ওয়ার্ডের বাইরে বারান্দায় রোগী রয়েছেন। ওয়ার্ডের ধারণক্ষমতার তুলনায় রোগীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

আশরাফুল ইসলাম নামে এক গণমাধ্যমকর্মী তার মেয়েকে নিয়ে এসেছেন মুগদা হাসপাতালে। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, আমরা প্রথমে ডেঙ্গু জ্বরের বিষয় বুঝতে পারিনি। পরে হাসপাতালে আনার পর পরীক্ষায় ডেঙ্গু ধরা পড়ে। তবে এখানে রোগীর চাপ বেশি হওয়ায় ফ্লোরে থেকেই চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। আমার মেয়ে এখন বেশ ভালো আছে।

এদিকে, রোগীর চাপ বেশি হওয়ায় চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। মুগদা হাসপাতালের এক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে জানান, ঢাকার খুবই ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় অবস্থিত মুগদা জেনারেল হাসপাতাল। ৫০০ শয্যার এই হাসপাতাল মূলত নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষের চিকিৎসার ভরসাস্থল। তবে এখানে রোগী বেশি হওয়ায় সবাইকে বেডে রাখতে পারছি না, ফ্লোরে রেখে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। এরপরও আমরা কাউকে ফিরিয়ে দিচ্ছি না, সবাই চিকিৎসা পাচ্ছেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালে ডেঙ্গু ভয়াবহ আকার ধারণ করেছিল। ওই বছর দেশে এক লাখেরও বেশি মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ২০১৯ সালে মারা যান ১৭৯ জন। এরপর করোনা মহামারির বছর ২০২০ সালে ডেঙ্গুতে মারা যান সাতজন। পরের বছর ২০২১ সালে মৃত্যু হয় ১০৫ জনের।

এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এবছর ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে অধিকাংশের বয়স ২০ বছরের বেশি। তবে ৪০-৫০ বছর বয়সীরা বেশি মারা যাচ্ছেন। এরপরও মারা যাওয়া রোগীদের ৩৫ শতাংশ শিশু, অর্থাৎ যাদের বয়স ১৮ বছরের কম। আক্রান্ত রোগীদের অনেককেই দেরি করে হাসপাতালে নেওয়ায় ভর্তির তিনদিনের মধ্যেই মারা যাচ্ছেন অনেকে। চলতি বছর ঢাকার বাইরে বেশি মৃত্যু হচ্ছে। এছাড়া নারীদের মৃত্যুহার পুরুষদের তুলনায় বেশি।

শিক্ষা ও স্বাস্থ্য-এর আরও খবর