দেশে দুর্ভিক্ষ হবে না

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসমুদ্রে প্রধানমন্ত্রী

  বিশেষ প্রতিনিধি    12-11-2022    383
দেশে দুর্ভিক্ষ হবে না

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ বিশ্বকে এক কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে স্মরণ করিয়ে পরনির্ভরশীলতা কমানোর জন্য তরুণ সমাজসহ দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশে কোনোদিন যাতে দুর্ভিক্ষ না হয়, সেজন্য সবাইকে প্রস্তুতি নিতে বলেছেন তিনি। বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষ হবে না- দৃঢ়প্রত্যয় ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বব্যাপী দুর্ভিক্ষের পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি এখনো যথেষ্ট শক্তিশালী।

যারা বলেছিল বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা হবে, শ্রীলঙ্কা হয়নি, হবেও না। তাদের মুখে ছাই পড়েছে। বাংলাদেশে কোনো দুর্ভিক্ষ হবে না। এজন্য আমাদের এখন থেকে প্রস্তুতি নিতে হবে। উৎপাদন বাড়াতে হবে। এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি রাখা যাবে না। সেই সঙ্গে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতি থেকে বিরত থাকতে হবে। অন্যদেরও বিরত রাখতে কাজ করতে হবে। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যুবলীগের মহাসমাবেশে এ কথা বলেন তিনি।

আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, এগিয়ে যাব, জাতির পিতার স্বপ্নের উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তুলব- এমন মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, বিদেশে বসে ষড়যন্ত্র করলেও বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না। বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। যে যত কথাই বলুক বিভ্রান্ত হওয়ার কিছু নেই। বিএনপি ক্ষমতায় থাকার সময় উন্নয়ন নয়, শুধু লুটপাট করেছে। যাদের নেতা খুন ও অর্থ পাচার মামলার সাজাপ্রাপ্ত, তাদের মুখে আওয়ামী লীগের সমালোচনা মানায় না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, রিজার্ভ জমিয়ে রাখলে হবে না। টাকা কাজে লাগাতে হবে। এত ঘাত-প্রতিঘাতের পরও বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বিএনপি আজকে রিজার্ভ নিয়ে কথা বলে। ৯৬ সালে আমি যখন নির্বাচন করলাম, ঠিক তার আগে বিএনপি ক্ষমতায় ছিল। রিজার্ভ ছিল ২ দশমিক ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। সেখানে আমরা ৪৮ বিলিয়ন পর্যন্ত নিয়েছিলাম। সরকারপ্রধান বলেন, আজ রিজার্ভ আমাদের কাজে লাগছে, কারণ আমরা করোনার টিকা দিয়েছি। আমাদের খাবার তেল সবকিছু বাইরে থেকে আনতে হচ্ছে। তারপর দুই বছর পর যখন বিশ্ব উন্মুক্ত হয়েছে, তখন ক্যাপিটাল ম্যাশিনারিজ এসেছে। আমাদের রিজার্ভ তো ব্যবহার করতেই হবে।

আট বিলিয়ন আমরা আলাদাভাবে বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করেছি। রিজার্ভ জমিয়ে রাখলে তো হবে না। তিনি বলেন, আজ আমরা আমাদের নিজেদের টাকায় বিমান কিনেছি। আমরা পায়রা নদীর ড্রেজিং নিজেদের অর্থায়নে করছি। নইলে এই টাকা বিদেশি ব্যাংক থেকে নিতে হবে। সেই টাকা সুদসহ ফেরত দিতে হবে। আজকে আমরা নিজের ব্যাংক থেকে এই টাকা নিয়েছি। রিজার্ভ জনগণের কল্যাণে ব্যয় করা হচ্ছে। এতে ঘরের টাকা ঘরে থাকছে।

যাদের নেতৃত্বে আজ বিএনপি চলে তারা কারা? : প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নয়ন নাকি তারা চোখেই দেখে না। এখন চোখ থাকতে যদি কেউ অন্ধ হয় তাহলে তো কিছু করার নেই। তারা উন্নয়ন চোখে দেখে না। অথচ ব্যবহার ঠিকই করছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের সব সুফল তারা ভোগ করছে। বিএনপির আমলে তারা কী করেছে? তারা ক্ষমতায় থাকতে লুটপাট করেছে, দেশের কোনো উন্নয়ন তারা করেনি। খালেদা জিয়া ২০০১ সালে এসে হাজার হাজার নেতাকে অপারেশন ক্লিন হার্টের নামে হত্যা করেছেন। বিএনপির নেতারা কখনো ভেবেছিল বাংলাদেশের স্যাটেলাইট আকাশে উড়বে? আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে তা করে দিয়েছে।

তিনি বলেন, যাদের নেতৃত্বে আজ বিএনপি চলে তারা কারা? খালেদা জিয়া এতিমের টাকা মেরে খেয়েছেন। একটি টাকাও এতিমরা পায়নি। এক পয়সা না দিয়ে সমস্ত টাকা তারা মেরে খেয়েছে। সে কারণে খালেদা জিয়ার ১০ বছরের সাজা হয়েছে। তারপর যাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে সে তো আরো একধাপ এগিয়ে। মানিলন্ডারিং মামলায় তারেক জিয়ার ৭ বছরের সাজা হয়েছে। এছাড়া গ্রেনেড হামলা মামলায় তিনি যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত। যাদের নেতাই খুনি-আসামি তাদের মুখে আওয়ামী লীগের সমালোচনা মানায় না।

এইট পাস, মেট্রিক ফেল দিয়ে দেশ চললে উন্নয়ন হয় না : বিএনপি নেতাদের প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এইট পাস দিয়ে, মেট্রিক ফেল দিয়ে দেশ চললে উন্নয়ন হয় না। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু যখন দেশ গড়ার কাজে হাত দেন, তখন এক টাকাও রিজার্ভ ছিল না। কিন্তু তিনি দেশকে এগিয়ে নিয়ে যান। ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশকে আবার উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাই। বাংলাদেশকে এখন কেউ অবহেলার চোখে দেখে না।

এটি আমরা প্রমাণ করেছি। দেশের আর্থসামাজিক খাতে নানামুখী অর্জনের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিয়েছি। রাস্তাঘাট পুল ব্রিজের উন্নতি করে সারাদেশে যোগাযোগ ব্যবস্থার অভূতপূর্ব সাফল্য এসেছে। ১০০টি ব্রিজ একসঙ্গে উদ্বোধন করা হয়েছে। বাংলাদেশকে আমরা জাতির পিতার স্বপ্নের উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলা হিসেবেই গড়ে তুলব। শিক্ষাক্ষেত্রে বিভিন্ন পদক্ষেপ বাস্তবায়নসহ আধুনিক প্রযুক্তিশিক্ষা প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে দেয়া, সমগ্র বাংলাদেশে হাইটেক পার্ক তৈরি করা, সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক, আইটি ট্রেনিং সেন্টার প্রতিষ্ঠা তৈরিসহ তার সরকারের উদ্যোগের প্রসঙ্গও তুলে শেখ হাসিনা।

দেশের কোথাও যেন এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি না থাকে, সেজন্য নিজ গ্রামে গিয়ে যুবদের অনাবাদি জমি কাজে লাগানোর আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। যুব সমাজকে জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ গড়ার কাজে নিযুক্ত হওয়ারও পরামর্শ দেন তিনি। করোনাকালে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য যুবলীগকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।

এর আগে মহাসমাবেশস্থলে পৌঁছালে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান যুবলীগের নেতাকর্মীরা। বেলা পৌনে ৩টায় বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে যুবলীগের সুবর্ণজয়ন্তীর মহাসমাবেশ উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা। উদ্বোধনীতে জাতীয় সংগীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল। মহাসমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন- আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম ও জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

জাতীয়-এর আরও খবর