রাজনীতির কবি বঙ্গবন্ধু ছিলেন জনসম্পৃক্ত নেতা

  বিশেষ প্রতিনিধি    11-08-2023    98
রাজনীতির কবি বঙ্গবন্ধু ছিলেন জনসম্পৃক্ত নেতা

মানব ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকান্ড হিসেবে পরিগনিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে হত্যা। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। বেদনাবিধুঁর সেই আগষ্ট মাসের আজ ১১তম দিন।

বঙ্গবন্ধুর সামগ্রিক জীবন দেখা গেলে জানা যায়, তিনি ছিলেন উঁচু মানের একজন রাজনীতিবিদ। তিনি ছিলেন একজন উঁচু মনের জনসম্পৃক্ত নেতা। এ জন্যই ১৯৭১ সালের ৫ এপ্রিল বঙ্গবন্ধুকে ‘রাজনীতির কবি’ উপাধিকে ভ‚ষিত করেন বিদেশী ম্যাগাজিন নিউজইউক। ম্যাগাজিনটি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক।

রাজনৈতিক জীবনের প্রথম থেকেই বঙ্গবন্ধু ছিলেন স্বকীয় রাজনীতির পরিচয়বাহক। তিনি পাকিস্তান আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন এটা ভেবে যে, এই নতুন রাষ্ট্রে দরিদ্র মুসলমান কৃষক জমিদার শ্রেণির নির্যাতন থেকে মুক্তি পাবে। বঙ্গবন্ধু ছিলেন জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত নেতা। তিনি সব সময় বাংলাদেশের জনসাধারণের সঙ্গে নিজেকে এক করে দেখতেন এবং তাই তিনি বারবার একদিকে তার জনগণের জন্য ভালোবাসা এবং অন্যদিকে জনগণের তার জন্য ভালোবাসার কথা উল্লেখ করতেন। তবে সাধারণ মানুষের দুঃখ-কষ্টে তাদের পাশে দাঁড়ানো, জনসাধারণ কোন কোন ইস্যুকে প্রাধান্য দিচ্ছে, তার দিকেও তার দৃষ্টি ছিল। জনসাধারণের ইস্যু নিয়েই তিনি কথা বলতেন, রাজনীতি করতেন। পাকিস্তান আমলে তিনি দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষের জন্য লঙ্গরখানা খুলে কাজ করেছেন।

বঙ্গবন্ধুর তাঁর কারাগারের রোজনামচা বইটিতে তিনি বিভিন্ন কয়েদির জীবনবৃত্তান্ত, দুঃখ-কষ্ট বর্ণনা করেছেন। বিশেষ করে পাগল কয়েদিদের প্রতি তার মমতাবোধ আমরা লক্ষ করি। জেলের কর্মচারীদের সঙ্গেও তার স¤প্রীতি গড়ে ওঠে। তিনি জেলে নিজ হাতে রান্না করেছেন, বাগান করেছেন এবং তার সঙ্গে ডায়েরিও লিখেছেন। শুধু আওয়ামী লীগের কর্মী নয় জনসাধারণেরও ব্যক্তিগত সুখ-দুঃখেরও তিনি খবর রাখতেন।

৭২ সালে এক জনসভায় তিনি বলেন, আমি কী চাই? আমি চাই বাংলার মানুষ পেট ভরে ভাত খাক। আমি কী চাই? আমার বাংলার মানুষ সুখী হোক। আমি কী চাই? আমার বাংলার মানুষ হেসেখেলে বেড়াক। আমি কী চাই? আমার সোনার বাংলার মানুষ আবার প্রাণভরে হাসুক। তার এই বক্তব্যে এ দেশের মানুষের জন্য তার ভালবাসা ফুটে ওঠে।

১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর গণপরিষদের অধিবেশনে বাংলাদেশের সংবিধান গৃহীত হওয়ার প্রাক্কালে বঙ্গবন্ধু ভাষণে বলেছিলেন, আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। সেই গণতন্ত্র যা সাধারণ মানুষের কল্যাণ সাধন করে থাকে। মানুষের একটা ধারণা আছে এবং আগেও আমরা দেখেছি যে, গণতন্ত্র যে সব দেশে চলেছে, দেখা যায় সে সব দেশে গণতন্ত্র পুঁজিপতিদের প্রটেকশন দেওয়ার জন্য কাজ করে এবং সেখানে প্রয়োজন হয় শোষকদের রক্ষা করার জন্যই গণতন্ত্রের ব্যবহার। সে গণতন্ত্রে আমরা বিশ্বাস করি না।

আমরা চাই, শোষিতের গণতন্ত্র এবং সেই শোষিতের গণতন্ত্রের অর্থ হলো আমার দেশের যে গণতন্ত্রের বিধিলিপি আছে তাতে সেসব বন্দোবস্ত করা হয়েছে যাতে এদেশের দুঃখী মানুষ রক্ষা পায়, শোষকরা যাতে রক্ষা পায় তার ব্যবস্থা নাই। সে জন্য আমাদের গণতন্ত্রের সাথে অন্যের পার্থক্য আছে। এ বক্তব্য থেকে মানুষের জন্য সারা জীবন রাজনীতি করে যাওয়া বঙ্গবন্ধুর রাজনীতির দর্শনের পরিচয় পাওয়া যায়।

জাতীয়-এর আরও খবর