শেখ হাসিনার অপেক্ষায় দলের তিন সিদ্ধান্ত

  বিশেষ প্রতিনিধি    09-05-2023    92
শেখ হাসিনার অপেক্ষায় দলের তিন সিদ্ধান্ত

দুই সপ্তাহের বিদেশ সফর শেষে আজ মঙ্গলবার ঢাকায় ফিরবেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। দলের বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত তার ফেরার অপেক্ষায় রয়েছে। এর মধ্যে সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে সৃষ্ট দলীয় কোন্দল, তৃণমূলে নেতাকর্মীদের মধ্যে হানাহানি এবং ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটির মতো অন্তত তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু রয়েছে।

এসব ইস্যুতে দলীয় প্রধান নেতাকর্মীদের উদ্দেশে কী বার্তা দেবেন, তা নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার ভাষ্য, শৃঙ্খলা ভঙ্গকারী নেতাকর্মীদের উদ্দেশে নেত্রী কঠোর হুশিয়ারি দেবেন। দায়ী নেতাকর্মীকে দল থেকে বহিষ্কারের বার্তাও আসতে পারে। এ ছাড়া সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে যেসব প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে, সেসব বিষয়ে সমাধান আসবে বলেও মনে করছেন দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা।

তফসিল অনুযায়ী গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট আগামী ২৫ মে। খুলনা ও বরিশালে ১২ জুন এবং রাজশাহী ও সিলেট সিটি করপোরেশনে ভোট হবে ২১ জুন।

নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খুলনা ও রাজশাহী ছাড়া বাকি তিন সিটিতে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর পাশে সব নেতাকর্মীকে দেখা যাচ্ছে না। সিলেটে নৌকার মনোনয়ন পাওয়া যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের নেতা আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে নিয়ে স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ কেউ নির্বাচনী মাঠে নামলেও ভেতরে ভেতরে

দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে কাজ করছেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। এ ছাড়া সেখানকার বর্তমান মেয়র ও বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরীর বক্তব্য কৌতূহল বাড়াচ্ছে। আওয়ামী লীগের সঙ্গে আরিফুল হকের কোনো যোগাযোগ চলছে কিনা, স্থানীয়দের মধ্যে আছে সে জিজ্ঞাসাও।

গাজীপুরে দলীয় প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে সমর্থন না দিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার চেষ্টায় আছেন জাহাঙ্গীর আলম। ইসি ও হাইকোর্টে প্রার্থিতা বাতিল হলেও হাল ছাড়েননি তিনি। ঘোষণা দিয়েছেন আপিল বিভাগে যাওয়ার। অন্যদিকে তার মা জায়েদা খাতুনের প্রার্থিতা টিকে গেছে। তিনি গাজীপুরের বিভিন্ন জায়গায় প্রতিদিনই জনসংযোগ করছেন। ফলে গাজীপুরের নির্বাচনী মাঠে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছেন। শেষমেশ জাহাঙ্গীরের পরিণতি কী হবে, তা নিয়েও প্রশ্ন আছে স্থানীয় অনেক নেতার।

বরিশালে ভাতিজা সাদিক আবদুল্লাহর জায়গায় চাচা আবুল খায়ের আবদুল্লাহ (খোকন সেরনিয়াবাত) নৌকার মনোনয়ন পাওয়ার পর দলীয় কোন্দলের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সাদিক আবদুল্লাহর অনুসারীরা এখনো নৌকার প্রার্থীর পক্ষে স্বতঃস্ফূর্তভাবে মাঠে নামেননি। ফলে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পরিণতি কী হয়, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। রাজশাহীতে কোন্দল থাকলেও তা এখনো দৃশ্যমান নয়। খুলনায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেকের বিপক্ষে কাউকে কথা বলতে দেখা যায়নি। ফলে রাজশাহীতে এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ও খুলনায় তালুকদার আবদুল খালেক অনেকটাই নির্ভার।

এদিকে জেলা, উপজেলার কমিটি গঠন ও জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে তৃণমূলে বাড়ছে অস্থিরতা। কমিটিতে ব্যক্তিবলয় বৃদ্ধি, নতুন মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে পুরনোদের দ্বন্দ্ব, এমপি বনাম স্থানীয় নেতার দূরত্ব, সহযোগী সংগঠনের সঙ্গে মূল দলের নেতাদের বোঝাপড়ার অভাবে তৃণমূলে বাড়ছে হতাহতের ঘটনা। এ ছাড়া চাঁদাবাজি, মাদক কারবারসহ বিতর্কিত কর্মকা-ে জড়াচ্ছেন ক্ষমতাসীনরা। সব মিলিয়ে তৃণমূলে বিরাজ করছে বিশৃঙ্খলা।

নিয়মিত জরিপ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সম্প্রতি এপ্রিল মাসের রাজনৈতিক সহিংসতার চিত্র তুলে ধরে আইন ও সালিশ কেন্দ্র। জরিপে দেখা গেছে, গত মাসে বিভিন্ন দলের মধ্যে ১২৭টি সহিংসতা ঘটেছে। এতে আহত হয়েছেন ১ হাজার ৭২৩ জন। নিহত হয়েছেন সাতজন। আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ সহিংসতার ঘটনা ছিল ৪৬টি। এসব ঘটনায় নিহত হন চারজন। আহতের সংখ্যা ৫২৩।

এসব ঘটনার সঙ্গে স্থানীয় নেতা, এমপি ও মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী জড়িত বলে দলের কেন্দ্রে অভিযোগ এসেছে। প্রতিটি ঘটনার প্রকৃত সত্য নিশ্চিত করে দায়ীদের বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত আসতে পারে দলীয় প্রধানের কাছ থেকে।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের এক সদস্য বলেন, ‘এলাকায় এখন শৃঙ্খলা নেই। তৃণমূলের অনেক ঘটনার সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। এটা দলের জন্য খারাপ বার্তা। সুতরাং নেত্রী এ বিষয়ে ছাড় দেবেন বলে মনে হয় না।’

ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্ট নেতারা থানা ও ওয়ার্ডে কমিটি দিতে পারছেন না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সভাপতির সঙ্গে সাধারণ সম্পাদকের দ্বন্দ্ব, দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের মধ্যে বোঝাপড়ার ঘাটতি এবং অর্থের বিনিময়ে পদ দেওয়াসহ নানা অভিযোগে কমিটি আটকে আছে। মহানগরের হ-য-ব-র-ল অবস্থা নেত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কেউ সামাল দিতে পারবেন না বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এসব বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর এক সদস্য আমাদের সময়কে বলেন, ‘অনেক বিষয় থাকে দলীয় প্রধানের সিদ্ধান্ত ছাড়া হয় না। দল থেকে কাউকে অব্যাহতি কিংবা বহিষ্কার বা বিশেষ নির্দেশনা দেওয়ার ক্ষেত্রে দলীয় প্রধানের ওপর নির্ভর করেন আওয়ামী লীগ নেতারা। ৫ সিটিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগ নেতারা বিভিন্ন নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে ধরেছেন। প্রত্যেক সিটিতে দলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সমন্বয়ক এসব অভিযোগ নোট করে রেখেছেন নেত্রীকে দেখানোর জন্য। দেশে ফিরলেই এসব অভিযোগ জমা দেওয়া হবে এবং সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত আসবে। এ ছাড়া রাজধানীসহ সারাদেশ থেকে অভিযোগ এসেছে। সেসব বিষয়েও সিদ্ধান্ত আসবে।’

দলীয় প্রধান দেশে ফিরে কী বার্তা দিতে পারেন- এমন প্রশ্নের জবাবে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম আমাদের সময়কে বলেন, ‘বিশেষ কোনো বার্তা নেই। তিনি নিয়মিতভাবে দেশ ও দল পরিচালনা করেন; সেটাই করবেন। পাঁচ সিটিতে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকে দল মনোনয়ন দিয়েছে। এ নিয়ে কারও কোনো আপত্তি নেই। এই মুহূর্তে দলে তেমন কোন্দল নেই। নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা আছে।’

জাতীয়-এর আরও খবর