তারেক রহমানের নির্দেশে গাড়িতে আগুন, পুলিশের ওপর হামলা: তথ্যমন্ত্রী

  বিশেষ প্রতিনিধি    31-07-2023    90
তারেক রহমানের নির্দেশে গাড়িতে আগুন, পুলিশের ওপর হামলা: তথ্যমন্ত্রী

তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘বিএনপি সন্ত্রাসীদের দল, তা আবারও প্রমাণিত হয়েছে। গত শুক্রবারের সমাবেশে কেন গণ্ডগোল হলো না, সেজন্য বিএনপি নেতাদের ওপর চটেছে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। গণ্ডগোল করার উদ্দেশ্যে পরদিন শনিবার ঢাকা শহরের প্রবেশ পথগুলোতে অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপির নেতারা। তারেক রহমান ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে নেতাদের ফোন করে নির্দেশ দিচ্ছে, গাড়ি ভাঙচুর করে আগুন দেওয়ার জন্য এবং পুলিশের ওপর আক্রমণ করার জন্য। সেই প্রমাণ আমাদের হাতে আছে। বিএনপি ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালের মতো আবারও পেট্রল বোমা বাহিনীকে মাঠে নামিয়েছে। তাদের দিয়ে অগ্নিসন্ত্রাস ও নৈরাজ্য করছে তারা।’

রবিবার (৩০ জুলাই) বিকালে চট্টগ্রাম নগরীর দোস্ত বিল্ডিং চত্বরে ‘বিএনপির অগ্নিসন্ত্রাস ও নৈরাজ্য সৃষ্টির’ প্রতিবাদে উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিক্ষোভ পূর্ববর্তী সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন বিএনপি নেত্রী নিপুণ রায়ের অডিও বক্তব্য ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। তিনি আগুন দেওয়ার নির্দেশ দিচ্ছেন। আবার বলছেন, এটা একটু ভিডিও করে রাখেন, জায়গা মতো পাঠাতে হবে। অর্থাৎ তাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে পাঠাতে হবে।’

ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আপনারা জানেন গত শুক্রবার ঢাকায় বিএনপি সমাবেশ করেছে, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগও সমাবেশ করেছে। সোয়া এক কিলোমিটার দূরত্বে দুটি বিশাল সমাবেশ হয়েছে। কিন্তু বিন্দুমাত্র গণ্ডগোল হয়নি। কারণ আমাদের নেতাকর্মী এবং প্রশাসন তাদের ওপর সতর্ক দৃষ্টি রেখেছিল।’

সেদিন সমাবেশ ঘিরে গণ্ডগোল কেন হলো না সেজন্য বিএনপি নেতাদের ওপর চটেছে তারেক রহমান উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘গন্ডগোল করার উদ্দেশ্যে পরদিন শনিবার ঢাকা শহরের প্রবেশ মুখগুলোতে অবস্থান ধর্মঘট কর্মসূচি ঘোষণা করেন তারা। এই রাজপথ মানুষের, ঢাকা শহরের প্রবেশ পথ বন্ধ করে দেওয়ার অধিকার কোনও রাজনৈতিক দলের নেই। সবাই সরকারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে পারে, সরকারের বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখতে পারে। তারাও তাই করছে। তাদের বাধা দেওয়া হচ্ছে না, বরং সহযোগিতা করা হয়েছে।’

শুক্রবার তাদের সমাবেশের জন্য সব ধরনের সহযোগিতা করা হয়েছে জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘তারা যেখানে চেয়েছে, সেখানে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ঢাকার প্রবেশ মুখ বন্ধ করে নগরবাসীকে জিম্মি করার অধিকার কাউকে দিতে পারে না সরকার। সে কারণে অনুমতি দেওয়া হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘যারা এ ধরনের ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি দিয়ে জনগণকে কষ্ট দেওয়ার অপপ্রয়াস চালায়, সেটি যাতে করতে না পারে, সে জন্য সরকারি দল হিসেবে জনগণের পাশে থাকা আমাদের দায়িত্ব। কেউ যাতে শান্তি-শৃঙ্খলা বিনষ্ট করতে না পারে, সে জন্য আমাদের দলের নেতাকর্মীরা ঢাকার প্রবেশ মুখে সতর্ক পাহারায় ছিলেন। আমাদের দলের নেতাকর্মীদের শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচিতে হামলা চালিয়েছে তারা। পুলিশের ওপর আক্রমণ করেছে। ২০১৩-১৪ ও ১৫ সালে যেভাবে আক্রমণ চালিয়েছিল, ঠিক একইভাবে তারা ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ, জনগণ ও বাসের ওপর আক্রমণ চালিয়েছে।’

বিএনপি শনিবার দিনের বেলায় সাতটি বাসে আগুন দিয়েছে, রাতে আরও কয়েকটি গাড়িতে আগুন দিয়েছে উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘প্রত্যেকটি গাড়ি ব্যক্তি মালিকানাধীন। অনেক কষ্টে গাড়িগুলো কিনেছেন তারা। এই গাড়ি জ্বালানোর মধ্য দিয়ে একটি পরিবারকে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে, একটি পরিবারের স্বপ্নকে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। এটি কোনও রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি হতে পারে না।’

তিনি বলেন, ‘মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেব গতকাল সংবাদ সম্মেলন করে তারা যে আগুন দিয়েছেন, সেটি অস্বীকার করলেন। তার মতো জঘন্য মিথ্যাবাদী দেশে কখনও জন্মগ্রহণ করে নাই। মিথ্যা বলায় যদি কেউ চ্যাম্পিয়ন হয়, তাহলে তিনি হবেন। যারা গাড়িতে আগুন দিয়েছেন, তাদের ভিডিও ফুটেজ আছে। ভিডিও ফুটেজ দেখে তাদের গ্রেফতার করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের খোঁচা দিলে জ্বলে ওঠে উল্লেখ করে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের নেতাকর্মীদের আঘাত করলে প্রতিঘাত করার জন্য একসঙ্গে নেমে পড়েন। তারা দেশের বেদিমূলে আঘাত হেনেছে, আবার জনগণের ওপর হামলা করেছে। তাদের কীভাবে শায়েস্তা করতে হয়, আমরা জানি। বিএনপির নেতারা ঘাপটি মেরে বসে আছেন, সেখান থেকে বের হয়ে এখন হামলা চালাচ্ছেন। কাজেই এই হামলাকারীদের পাড়ায়-মহল্লায় গ্রামে-গঞ্জে প্রতিহত করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘বিএনপি বিদেশিদের কাছে গিয়ে হাতে পায়ে ধরে, তারা আমাদের দেশটাকে বিশ্ব বেনিয়াদের হাতে তুলে দিতে চায়। আমাদের দেশের জমি, সাগরের অংশ বেনিয়ারেদর হাতে তুলে দিতে চায়। একাত্তরেও অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছিল। সব ষড়যন্ত্রের বিষ দাঁত ভেঙে বুকের রক্ত ঢেলে আমাদের পূর্বসূরী মুক্তিযোদ্ধারা দেশ স্বাধীন করেছেন। এখন যারা আমাদের দেশকে বিশ্ব বেনিয়াদের হাতে তুলে দিতে চায়, তাদের হাত থেকে দেশটাকে রক্ষা করতে হবে। জীবন দিয়ে হলেও দেশটাকে রক্ষা করতে হবে।’

চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সালামের সভাপতিত্ব ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দেবাশীষ পালিতের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন সহসভাপতি আবুল কাশেম চিশতি, সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান, উত্তর জেলা যুবলীগের সভাপতি এস এম রাশেদুল ইসলাম, ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম ও মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বাসন্তী প্রভা পালিত।

জাতীয়-এর আরও খবর