সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি সাদা নীল প্যানেলের পাল্টা-পাল্টি সংবাদ সম্মেলন

  বিশেষ প্রতিনিধি    22-03-2023    171
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি সাদা নীল প্যানেলের পাল্টা-পাল্টি সংবাদ সম্মেলন

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী নির্বাচন কে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ পন্থী আইনজীবীদের সংগঠন সাদা প্যানেল এবং বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের সংগঠন নীল প্যানেলের আইনজীবীরা পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন করেছে। আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীরা নির্বাচন বর্জন না করে নির্বাচনকে বিতর্কিত করার অভিযোগ তুলেন বিএনপি’র আইনজীবীদের বিরুদ্ধে। অপরদিকে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা নতুন করে তফসিল ঘোষণা করে পুনরায় নির্বাচনের দাবি জানান।

আজ ১৯ মার্চ (২০২৩) ইং রবিবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির পৃথক পৃথক স্থানে আলাদা সংবাদ সম্মেলন করে তারা এসব দাবি জানান।

আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীদের সংবাদ সম্মেলন:

আওয়ামী লীগ পন্থী আইনজীবীদের সংগঠন সাদা প্যানেলের আইনজীবীরা গতকাল সকাল এগারোটায় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির অডিটরিয়ামে গত ১৫ ও ১৬ই মার্চ অনুষ্ঠিত নির্বাচনের প্রতিক্রিয়া জানাতে এক সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করেন।

সমিতির সম্পাদক এডভোকেট মোঃ আব্দুন নুর দুলাল বলেন, শুরুতেই সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য আমি একটি নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রস্তুত করে তা সকলের জন্য উন্মুক্ত করে দিই এবং আপত্তি আহ্বান করি। কিছু কিছু আপত্তি নিষ্পত্তি করে একটু সম্পূর্ণ নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রস্তুত করি।

তিনি স্মরণ করিয়ে দেন , গতবারের ভোটার তালিকায় রুহুল কুদ্দুস কাজল একটি বিতর্কিত ভোটার তালিকা প্রস্তুত করেন এবং পরে তালিকা থেকে ২৮৯ টি ভোটার বাতিল করা হয়।

নির্বাচন সাব- কমিটি সম্পর্কে তিনি বলেন, সমিতির ইতিহাসে অতীতে কখনো সর্বসম্মতিক্রমে নির্বাচন সংক্রান্ত সাব -কমিটি গঠিত হয়নি। আমাদের সদিচ্ছা ছিল বলেই আমরা একটি অবাধ শান্তিপূর্ণ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য আলাপ- আলোচনার ভিত্তিতে সাব – কমিটি গঠন করেছিলাম। বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ মনসুরুল হক চৌধুরীকে আহ্বায়ক করে আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীদের থেকে তিনজন এবং বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের থেকে তিনজন মিলে মোট ৭সদস্যে একটা নির্বাচন সাব কমিটি গঠন করা হয়।

তিনি আহ্বায়কের প্রতি অভিযোগ তুলে বলেন, ১২ মার্চ আলোচনা সভা ডেকে আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ মনসুরুল হক ইসিএম(ইলেকট্রনিক কাউন্টিং মেশিন) পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণের কথা জানান। এ সময় আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ মোমতাজ উদ্দিন ফকির ইসিএম পদ্ধতির বিরোধিতা করেন এবং সমিতির গঠনতন্ত্রে এই পদ্ধতিতে ভোট গণনার বিষয়টি উল্লেখ নেই বলে আপত্তি জানান।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ঢাকা ক্লাব ও উত্তরা ক্লাবে অতীতে এ পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ করা হয়েছে। রুহুল কুদ্দুস কাজল ঢাকা ক্লাবের একজন সদস্য এবং ঢাকা ক্লাবের বিগত নির্বাচন প্রক্রিয়ার সাথে তিনি প্রত্যক্ষভাবে ছিলেন। তাই রুহুল কুদ্দুস কাজলকে বিজয়ী করার জন্য মূলত ইসিএম পদ্ধতি ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন মনসুরুল হক।

১৩ মার্চ আহ্বায়ক একটি প্রজেকশন মিটিং ডাকেন এবং এতে সকল প্রার্থীরা বক্তব্য প্রদান করেন। তিনি ইসিএম পদ্ধতির মাধ্যমে ভোট গণনা করবেন বলে জানান এবং তিনি নিজেই ব্যালট পেপার ছাপানোর নির্দেশ দেন। আমরা তাকে বলি সমিতির সংবিধান অনুযায়ী ব্যালট পেপার ছাপানোর এখতিয়ার সম্পাদকের। আমরা আপত্তি জানালে তিনি নিরুত্তর থাকেন।১৩ ই মার্চ রাত ৮ টায় তিনি পদত্যাগ করেন। পরদিন ১৪ মার্চ বিকাল পাঁচটায় কার্যকরী পরিষদ একটি জরুরি সময় মিলিত হয় । সভায় বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং আইনজীবী সমিতির সাবেক সহ-সভাপতি মোঃ মনিরুজ্জামানকে নির্বাচন পরিচালনা -সাব কমিটির আহবায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

তাড়াহুড়া করে নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সমিতির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ৩১ মার্চের মধ্যে নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তাছাড়া ১৬ মার্চের পর আদালত বন্ধ হয়ে যাবে। তারপর রমজান মাস শুরু। তাই নির্বাচন পেছানোর কোন সুযোগ ছিল না।

নির্বাচনের পূর্বের দিন ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের জন্য মাহবুব উদ্দিন খোকন এবং রুহুল কুদ্দুস কাজলের দিকে অভিযোগ তুলে বলেন, সমিতির নিয়ম অনুযায়ী ব্যালট পেপার স্বাক্ষর করেন সমিতির সম্পাদক। নির্বাচনের পূর্বের দিন ব্যালট পেপারে স্বাক্ষর করার সময় সম্পাদক দুলাল ও আহ্বায়ক মনজুরুল হকের উপর হামলা করেন খোকন এবং রুহুল কুদ্দুস কাজলের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা। নির্বাচন কে বিতর্কিত করা তাদের ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। তাই তারা নির্বাচন বর্জন না করে আইন শৃঙ্খলার অবনতি ঘটিয়েছে।

ব্যালট ছিনতাই করেছে। বাংলাদেশের কোন নির্বাচনে ব্যালট পেপার ছিনতাই করার এমন নজিরবিহীন নেই।

লিখিত বক্তব্যের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইনজীবী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ মোমতাজ উদ্দিন ফকির জানান, নির্বাচনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ডাকা হয়েছে। আহ্বায়ক মোঃ মনসুরুল হক চৌধুরী আইনশৃঙ্খলার বাহিনীর সহায়তা চেয়ে এলিট ফোর্সের জন্য একটি চিঠি দিয়েছিলেন‌ প্রধান বিচারপতির কাছে। পুলিশের আচরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখানে আইন-শৃঙ্খলা ভঙ্গ হয়েছে।তাই তাই তারা আমাদের উপর হামলা করেছে।তাদের নাশকতার পরিকল্পনা ছিল। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সহ সভাপতি শহিদুল ইসলাম, সহ-সভাপতি এডভোকেট মোঃ হোসেন, সদস্য ফাতেমা বেগম, সদস্য সুব্রত কুন্ডু প্রমুখ।

বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের সংবাদ সম্মেলন: বিএনপি পন্থী আইনজীবীদের সংগঠন নীল প্যানেলের আইনজীবীরা আজ দুপুর বারোটায় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির হলরুম-১ এ গত ১৫ ও ১৬ মার্চ অনুষ্ঠান নির্বাচনে আইনজীবী ও সাংবাদিকদের উপর হামলা ও নির্যাতন, আইনজীবীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।

লিখিত বক্তব্যে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের সংগঠন নীল প্যানেলের সম্পাদক প্রার্থী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, সমিতি নির্বাচনের জন্য বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ সমর্থিত সমিতির কার্যকরী কমিটির সভাপতি ও অবৈধ সম্পাদক ভোট কারচুপির মাধ্যমে বিজয়ী হওয়ার জন্য একতরফাভাবে একটি তল্পীবাহক নির্বাচন সাব- কমিটি গঠন করে ‌। অথচ সংগঠনের গঠনতন্ত্রের রুল -২২ মোতাবেক কার্যকরী কমিটির সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতে নির্বাচন সাব- কমিটি গঠনের বিধান রয়েছে ।বর্তমান কার্যকরী কমিটিতে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সংখ্যাগরিষ্ঠ। সাধারণ আইনজীবীদের তীব্র প্রতিবাদের মুখে দলীয় অনুগত নির্বাচন সাব- কমিটির আহ্বায়ককে পরিবর্তন করে সর্বসম্মতিক্রমে সাবেক বিচারপতি এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ মনসুরুল হক চৌধুরীকে আহ্বায়ক মনোনীত করা হয় । যদিও তিনি একজন আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা এবং আওয়ামী লীগ সমর্থিত সভাপতি প্রার্থী ছিলেন, তথাপি জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেলের সদস্যরা তার প্রতি আস্থা স্থাপন করেছিলেন ।কারণ তিনি একজন সৎ ,সজ্জন ও দৃঢ়চেতা মানুষ হিসেবে পরিচিত। তিনি ইলেকট্রনিক কাউন্টিং মেশিনে ভোট গণনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলেন। সেই মোতাবেক machine readable ব্যালট পেপার ছাপিয়েছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীদের অনৈতিক ভোট ডাকাতির ফলাফল ঘোষণায় তিনি রাজি না হওয়ায় তাকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয় এবং তাদের দলীয় অনুগত আইনজীবীকে দিয়ে নির্বাচনে ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং এর ব্যবস্থা করা হয়। ফলে তারা সাধারণ আইনজীবীদের প্রতিরোধের মুখে পড়ে। ভোটের দিন তারা শত শত পুলিশ দিয়ে আইনজীবীদের উপর আক্রমণ করে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী প্যানেলের প্রার্থী, এজেন্ট ও সমর্থকদের বের করে দেয়। পুলিশি নির্যাতন থেকে সাংবাদিকরাও রেহাই পায়নি।

আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবী ও পুলিশের নারকীয় তাণ্ডব জাতিকে বিস্মিত করেছে।

আমরা অবিলম্বে নির্বাচনের নতুন তফসিল ঘোষণা করে পুনরায় নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছি।

লিখিত বক্তব্যের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপিপন্থী জাতীয়তাবাদী আইনজীবী প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন জানান, “কোন ক্রাইটেরিয়ায় এডভোকেট মনজুরুল হক নির্বাচন পরিচালনা সাব কমিটির আহবায়ক হতে পারে না। ব্যালটে লিখা আছে মনসুরুল হকের নাম।সেখানে অন্য কেউ স্বাক্ষর করতে পারে না। মনসুরুল হকের পদত্যাগের কোন রেকর্ড আমাদের দেখানো হয় নি ‌। আইনমন্ত্রী এখন সমিতির এসোসিয়েট মেম্বার।তার নির্দেশে যদি পুলিশ মোতায়েন করা হয়, তাহলে সব দায়িত্ব আইনমন্ত্রী এবং সরকারকে নিতে হবে।

ভোটের দিন আইনজীবী ও সাংবাদিকদের কে বের করে চোরেরা ভোটকেন্দ্রের ভিতরে ছিল।

সাধারণ আইনজীবীদের আশঙ্কা সমিতির টাকা তাদের আমলে লুট হয়ে যাবে। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, মনসুরুল হক বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের নেতা ছিলেন। কেন তার প্রতি তারা আস্থা রাখতে পারছেন না।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন ব্যারিস্টার কায়সার কামাল , এডভোকেট গাজী কামরুল ইসলাম সজল, এডভোকেট বদরুদ্দোজা বাদল সহ বিএনপিপন্থী সিনিয়র আইনজীবীরা।

জাতীয়-এর আরও খবর