অবশেষে ফালুর বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদের মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু

  বিশেষ প্রতিনিধি    01-02-2023    157
অবশেষে ফালুর বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদের মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু

১৬ বছরের পর বিএনপি চেয়ারপারসনের সাবেক উপদেষ্টা মোহাম্মাদ মোসাদ্দেক আলী ফালুর অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় বাদীর সাক্ষ্যগ্রহণ করেছে আদালত। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ের ২০০৭ সালে দায়ের করা এ মামলায় আজ বুধবার ঢাকার ১০ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে মামলার বাদী দুদকের উপ-পরিচালক (অবসরপ্রাপ্ত) রহিমা খাতুন সাক্ষ্য দেন। বিচারক মোহাম্মাদ নজরুল ইসলাম এ সাক্ষ্যগ্রহণ করে আগামী ৫ মার্চ পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ঠিক করেন।
২০১৭ সালের ৮ জুলাই রাজধানীর মতিঝিল থানায় এ মামলা দায়ের করা হয়। মামলায় ফালুর স্ত্রী মাহবুবা সুলতানাও আসামি ছিলেন। মামলাটিতে পর বছর ১৪ ফেব্রুয়ারি আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন দুদকের সহকারী পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম।
চার্জশিট দাখিল হওয়ার পর ফালু ও তার স্ত্রী হাইকোর্টে মামলা বাতিলের আবেদন করেন। যার কারণে দীর্ঘদিন মামলার বিচারকাজ বন্ধ থাকে।
পরবর্তী সময়ে হাইকোর্ট ফালুর মামলা খাজির করে দেন এবং তার স্ত্রীর মামলা গ্রহণ করে অব্যাহতির আদেশ দেন। ফলে ২০১৮ সালের ২৭ আগস্ট মামলাটিতে ফালু পলাতক থাকা অবস্থায় চার্জগঠন করেন আদালত। এরপর থেকে মামলাটি সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য থাকলেও বুধবারই প্রথম সাক্ষ্য গ্রহণ হলো।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, দুদক সম্পদ বিবরণী দাখিলের নোটিশ ২০০৭ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি ইস্যু করে। উক্ত নোটিশের প্রেক্ষিতে ফালু ওই বছর ১ মার্চ আইনজীবীর মাধ্যমে সম্পদের হিসাব দাখিল করেন। দুদকের তদন্তের ৪৫ কোটি ৬৬ লাখ ৮ হাজার ৮৬৬ টাকার সম্পদ জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ এবং ১০ কোটি ৬০ লাখ ৪২ হাজার ৫১৪ টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের তথ্য পায়।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ২৯ অক্টোবর প্রায় ৩৫ কোটি টাকার স্থাবর সম্পত্তি ক্রোক এবং ১৬ কোটি টাকার অস্থাবর সম্পত্তি অবরুদ্ধের (ফ্লিজ) আদেশ দিয়েছেন আদালত। বিচারক আদেশে উল্লেখ করেন, আসামি ফালুর স্থাবর সম্পত্তি ক্রোক এবং অস্থাবর সম্পত্তি ফ্রিজ এবং মোসলেহ উদ্দীন আহমেদের অস্থাবর সম্পত্তি ফ্রিজ করা না হলে তা হস্তান্তর হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। যা পরবর্তীতে রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা সম্ভব হবে না।
দুদকের উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান এবং সহকারী পরিচালক মামুনুর রশিদ চৌধুরী পারমিশন মামলার মাধ্যমে আদালতে এ আবেদন করেন। আবেদনে মোসাদ্দেক আলী ফালুর বিষয়ে বলা হয়, আসামি অসৎ উদ্দেশ্যে অপরাধজনক বিশ্বাস ভঙ্গ করে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে অসৎ উদ্দেশ্যে দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে শত শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ গড়ে তোলেন।
এ সমস্ত অবৈধ সম্পদ বিভিন্ন পন্থায় দুবাইয়ে পাচার করেন এবং এ পাচার করা ১৮৩ কোটি ৯২ লাখ টাকা স্থানান্তর, রূপান্তরের মাধ্যমে নিজেদের দখলে রেখে এর অবৈধ প্রকৃতি, উৎস অবস্থান গোপন বা এর ছদ্মাবরণে পাচার বা পাচারের প্রচেষ্টায়/ষড়যন্ত্রে সংঘবদ্ধভাবে সম্পৃক্ত থেকে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২), (৩) ধারার শাস্তিযোগ্য অপরাধ করায় উত্তরা পশ্চিম থানায় ২০১৯ সালের ১৩ মে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মামলার প্রাথমিক তদন্তে এবং রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, রোজা প্রোপার্টিজের পরিচালক ফালু। রোজা প্রোপার্টিজের সম্পত্তি মূলত তারই ভাতিজা নাঈম উদ্দিন আহমদের নামে কেনা। যা অবৈধ সম্পদ হিসেবে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত। তাই রাজধানীর কাকরাইলে ২০১৫ সালে ২৩ আগস্ট ক্রয়কৃত ১৬ কোটি টাকায় ওই স্থাবর সম্পত্তি অন্যত্র হস্তান্তর করতে না পরে এ জন্য ক্রোক করা প্রয়োজন। এ ছাড়া রোজা প্রোপার্টিজের কাওরান বাজারস্থ সাড়ে ৯ কোটি টাকার, রাজীন ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি বিডির ২৬ কোটি ৯৮ লাখ টাকার এবং দুবাই এ রোজা এন্টারটেইনমেন্ট এফজেডই ও রোজা ইনভেস্টমেন্ট এলএলসির ৪৯ লাখ ৪০ হাজার টাকা মূল্যের অস্থবর সম্পদ অবরুদ্ধ করা প্রয়োজন। মামলা নিষ্পত্তির পূর্বে এ স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ হস্তান্তর বা স্থানান্তর হয়ে গেলে মামলার উদ্দেশ্যে ব্যাহত হবে।

জাতীয়-এর আরও খবর