নতুন আলোচনায় নির্বাচনী সংলাপ

  বিশেষ প্রতিনিধি    09-04-2023    113
নতুন আলোচনায় নির্বাচনী সংলাপ

নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ব্যাপারে অনড় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও সংবিধানের বাইরে না যাওয়ার কথা বলে আসছে।

এদিকে সব দলকে নির্বাচনে আনতে বারবার সংলাপের আহ্বান করে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ ছাড়া রাজনৈতিক দলগুলোর সমঝোতা না হলে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন চ্যালেঞ্জ হবে বলেও জানিয়েছে ইসি। কূটনৈতিক মহল থেকেও গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কথা বলা হচ্ছে। যদিও বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে তথ্যমন্ত্রী বলেছেন, কাউকে ভোটে আনার দায়িত্ব সরকার বা সরকারি দলের নয়। এটি নির্বাচন কমিশনের কাজ। এসবের মধ্যেই আলোচনায় এসেছে রাজনৈতিক সংলাপ প্রসঙ্গ। ইসির সংলাপ বর্জন করলেও বিএনপির পক্ষ থেকে সরকারের সঙ্গে সংলাপে বসার জন্য শর্তজুড়ে দেওয়া হয়েছে।

গতকাল বিকালে বিএনপির গুলশান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন, সরকার পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে সংলাপের আহ্বান জানালে তাতে সাড়া দেবে বিএনপি। বিএনপি আগেও ইসি গঠন নিয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে বসেছিল। তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের প্রস্তাবনা পেশ করলেও কোনো কাজে আসেনি। কারণ তার সাংবিধানিক কোনো ক্ষমতা নেই।’

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, যার সঙ্গেই সংলাপ হোক না কেন, মূলত সরকারপ্রধানের ইশারার বাইরে কেউ কথা বলেন না। সরকার পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে রাজনৈতিক সংলাপের আহ্বান জানালে তাতে সাড়া দেবে বিএনপি।

জবাবে মির্জা ফখরুলের উদ্দেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সরকার যদি পদত্যাগ করে তা হলে সংলাপ করবে কে? রাজধানীর মিরপুরের দারুসসালামস্থ সিদ্ধান্ত হাইস্কুল মাঠে ঢাকা

মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ আয়োজিত ইফতারসামগ্রী ও ঈদ উপহার বিতরণ অনুষ্ঠানে ওবায়দুল কাদের বলেন, সরকার যদি পদত্যাগ করে তা হলে সংলাপ করবে কে? এ প্রশ্নের উত্তর মির্জা ফখরুল সাহেবের কাছে জানতে চাই। উদ্ভট, আবোল-তাবোল কথা বলছে বিএনপি। আন্দোলনে ব্যর্থ বিএনপির মরা গাঙে আর জোয়ার আসে না। ভাটার টান এসে গেছে।

এ প্রসঙ্গে লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ আমাদের সময়কে বলেন, সংলাপের কথা হলেও আপাতত বরফ গলছে না। কারণ বিএনপি সংলাপের কথা বললেও সরকারের পদত্যাগ চাইছে, যা এই সরকার আপাতত করবে না। বিএনপি নির্বাচনকালীন সরকারের কথা বলে আসছে, ক্ষমতাসীনরা তাতে একমত নয়। সুতরাং অবস্থা যা ছিল তাই আছে। তাদের মধ্যে সচেতনতা আসেনি।

এদিকে সংসদের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে গতকাল শনিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে আনা সাধারণ প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, আগামী সংসদ নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য নানা ষড়যন্ত্র হচ্ছে। সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। গণতন্ত্রের পথচলা নিরবচ্ছিন্ন রাখার জন্য, সংসদীয় যাত্রা নিরবচ্ছিন্ন রাখার জন্য কেউ নির্বাচনে আসুক কিংবা না আসুক ?নির্বাচন যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হতে হবে, নির্বাচন যথাসময়ে হবে।

সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনের বিষয়ে নানা মহল থেকে যে কথাবার্তা হচ্ছে, সে বিষয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, সবাইকে দাওয়াত করে নির্বাচনে আনা- এটি সরকারি দলের দায়িত্ব নয়। একটি পক্ষ নির্বাচন কমিশন, সরকারি দলও একটি পক্ষ, সব বিরোধী দলও আরেকটি পক্ষ। সেখানে নির্বাচনে আনা না আনার, নির্বাচনে কেউ আসবে কী আসবে না, সে দায়িত্ব পালন করতে পারে নির্বাচন কমিশন।

কমিশনের দায়িত্ব কীভাবে, সেটি ব্যাখ্যা করে মন্ত্রী বলেন, যখন তফসিল ঘোষণা করা হয়, তখন সরকারের হাতে ক্ষমতা থাকে না। তখন নির্বাচন কমিশন নির্বাচন আয়োজন করবে এবং সব দল অংশ নেবে। কাউকে হাতে পায়ে ধরে, দাওয়াত করে নির্বাচনে আনার দায়িত্ব সরকারের নয়, সরকারি দলের নয়।

আগামী ডিসেম্বর কিংবা জানুয়ারিতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা আছে। নির্বাচন কমিশনও সেই লক্ষ্যে প্রস্তুতি নিচ্ছে। যদিও বিএনপি বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। সংসদ নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ইসির ডাকা সংলাপেও অংশ নেয়নি সংসদ থেকে পদত্যাগ করা দলটি।

জাতীয়-এর আরও খবর