দরজায় কড়া নাড়ছে সম্মেলন

শিগগিরই মেয়াদোত্তীর্ণ সহযোগী সংঠনের সম্মেলনের ঘোষণা

  বিশেষ প্রতিনিধি    04-10-2022    126
দরজায় কড়া নাড়ছে সম্মেলন

আগামী ডিসেম্বরে কেন্দ্রীয় সম্মেলনকে সামনে রেখে সারাদেশে সম্মেলনের ঢেউ চলছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে। এর মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোও ঢেলে সাজানো হবে। আজ প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরলে মেয়াদোত্তীর্ণ মহিলা লীগ, যুব মহিলা লীগ, তাঁতী লীগ এবং ছাত্রলীগের সম্মেলনের নির্দেশনা দেবেন বলে জানা গেছে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এ মাসের দ্বিতীয় সাপ্তাহে কার্যনির্বাহি কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে মেয়াদোত্তীর্ণ সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সম্মেলনের নির্দেশনা দিবেন। এছাড়া কেন্দ্রীয় সম্মেলনের বিষয়েও দিক নির্দেশনা দিবেন প্রধানমন্ত্রী। আওয়ামী লীগের হাই-কামণ্ডের নেতারা বলছেন, প্রতি তিন বছর পর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল ২০১৯ সালের ২০ ও ২১ ডিসেম্বর। সে অনুযায়ী ডিসেম্বরের ২৩ তারিখ বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। যথাসময়েই সম্মেলনের প্রস্তুতি নিতে দলীয় নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা-সহযোগী সংগঠনের সম্মেলন দ্রুত করার তাগিদ দিয়েছেন তিনি। সে অনুযায়ী কাজ শুরু হয়েছে। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরলে দলের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক ডাকবেন। সেই বৈঠকেই কেন্দ্রীয় সম্মেলনের তারিখ ও সার্বিক প্রস্তুতির নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সহযোগী সংগঠনের সম্মেলনের জন্য নেত্রী যখন সময় দেবেন, তখনই সম্মেলন হবে। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন ইনকিলাবকে বলেন, সম্মেলনের পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে এখন জেলা-উপজেলার সম্মেলন চলছে। সহযোগী যেসব সংগঠনের মেয়াদ শেষ সেগুলোরও সম্মেলন নভেম্বরের মধ্যে হয়ে যাবে। এছাড়া দলের আরেকটি সূত্র বলছে, কার্যনির্বাহি কমিটির বৈঠকেও আগেও ছাত্রলীগ, যুব মহিলা লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ ও তাঁতী লীগের সম্মেলনের ঘোষণা আসতে পারে। অক্টোবরের শেষ দিকে তারিখ চূড়ান্ত করা হতে পারে। প্রতি শনিবার হিসেব করে চার সাপ্তাহে চারটি সংগঠনের সম্মেলনের নির্দেশনা দেয়া হবে। উল্লেখ্য, মহিলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল ২০১৭ সালের ৪ মার্চ। তিন বছর মেয়াদি এই কমিটির মেয়াদ শেষ হয় ২০২০ সালের ৪ মার্চ। একই বছর ১১ মার্চ অনুষ্ঠিত হয় যুব মহিলা লীগের সম্মেলন। তাদের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০২০ সালের ১১ মার্চ। তেমনি তাঁতী লীগের মেয়াদ হয়েছে ২০২০ সালের ১৯ মার্চ। ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৮ সালের মে মাসে। ওই বছরের জুলাইয়ে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান রেজওয়ানুল হক চৌধুরী ও গোলাম রাব্বানী। উন্নয়ন প্রকল্প থেকে চাঁদা দাবিসহ নানা অভিযোগে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে পদ হারান দুজন। তাদের স্থলে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয় আল নাহিয়ান খান জয় ও লেখক ভট্টাচার্যকে। ২০২০ সালের ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আল নাহিয়ান খান ও লেখক ভট্টাচার্যকে ভারমুক্ত করা হয়। জয়-লেখক প্রায় তিন বছর ধরে সংগঠনের দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ১০ মে সম্পাদকমণ্ডলীর সঙ্গে সহযোগী সংগঠনগুলোর যৌথ সভা করে ছাত্রলীগ, যুব মহিলা লীগ ও মহিলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন আয়োজন করার নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে ওই সংগঠন তিনটির নেতাদের আওয়ামী লীগ অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্তদের সঙ্গে কথা বলে দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শিডিউল নেওয়ার কথা বলা হয়। যুব মহিলা লীগ ও মহিলা আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর সাক্ষাৎ ও সময় চেয়ে আওয়ামী লীগের দফতরে চিঠি দিয়েছে। তবে ছাত্রলীগের মেয়াদ শেষ হলেও সম্মেলন নিয়ে নানা টালবাহানা করছে বলে পদপ্রত্যাশীদের অভিযোগ। এদিকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলনের প্রস্তুতি চলছে ভিতরে ভিতরে। গঠনতন্ত্র সংশোধন ও ঘোষণাপত্র তৈরির কাজ করছেন সংশ্লিষ্টরা। গত সম্মেলনে গঠনতন্ত্র সংশোধন ও ঘোষণাপত্র উপ-কমিটির দায়িত্বে ছিলেন সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক। তার নেতৃত্বে এবারও কাজ এগিয়ে চলছে। সম্পাদকমন্ডলীর মধ্যে এ কাজ করছেন তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ। জানা যায় এবার কেন্দ্রীয় কমিটির আকার বৃদ্ধি পাবে। সে অনুযায়ী গঠনতন্ত্র সংশোধনের কাজ চলছে। ১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সময় আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটি ছিল ৪০ সদস্যের। সর্বশেষ অনুষ্ঠিত জাতীয় সম্মেলনে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি গঠিত হয়েছিল ৮১ সদস্যের। এর মধ্যে সভাপতি, সভাপতিমণ্ডলীর ১৭ জন সদস্য, সাধারণ সম্পাদক, সম্পাদকমণ্ডলীর ২৪ জন, কোষাধ্যক্ষ ও ২৮ জন নির্বাহী সংসদের সদস্য রয়েছেন। জনসংখ্যার ক্রমবর্ধমান অবস্থায় দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম দৃঢ় করতেই কার্যনির্বাহী কমিটির আকার বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক দায়িত্ব বণ্টনের কাঠামোতে প্রতিটি বিভাগের জন্য একজন করে সাংগঠনিক সম্পাদক এবং প্রতি দুটি বিভাগের জন্য একজন করে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদককে দায়িত্ব দেওয়া হয়। জানা গেছে, বর্তমানে আওয়ামী লীগের আট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আটজন সাংগঠনিক সম্পাদক রয়েছেন। এছাড়া চারজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দুটি করে বিভাগে সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করছেন। প্রস্তাবিত ‘পদ্মা’ ও ‘মেঘনা’ বিভাগ গঠিত হলে দেশে বিভাগ সংখ্যা হবে ১০টি। সেক্ষেত্রে আরও দুজন সাংগঠনিক সম্পাদক এবং একটি যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদ সৃষ্টি করা হতে পারে। এছাড়া দুই বিভাগ মিলিয়ে একজন সভাপতিমন্ডলীর সদস্য দায়িত্বপ্রাপ্ত থাকেন। সে হিসেবে সভাপতিমন্ডলীর সদস্য পদ বাড়বে একটি। আবার সভাপতিমন্ডলীর সদস্য সংখ্যা হয় বিজোড়। হিসেব মত ১৭ থেকে তা বেড়ে ১৮ না করে ১৯ করা হবে বিজোড় রাখার জন্য। তাই এখানে পদ বাড়বে দুটি। এদিকে আওয়ামী লীগের ৭৮টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে এখনো ৩৩টি জেলা সম্মেলন বাকি। আগামী নভেম্বরের মধ্যেই মেয়াদোত্তীর্ণ এসব জেলার সম্মেলন শেষ করতে চায় আওয়ামী লীগ। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি জেলার সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের ইউনিট, ওয়ার্ড-থানা সম্মেলন শেষ হয়েছে। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ কিছুটা পিছিয়ে আছে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে। ঢাকা বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ জেলা ঢাকা। কিন্তু এই জেলা কমিটির কোনো কার্যক্রম দৃশ্যমান নেই।

সারাদেশ-এর আরও খবর