কক্সবাজারের উন্নয়নে ভুমিকা রাখবে বঙ্গবন্ধু টানেল

  বিশেষ প্রতিনিধি    11-02-2023    221
কক্সবাজারের উন্নয়নে ভুমিকা রাখবে বঙ্গবন্ধু টানেল

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’ নির্মাণের কাজ প্রায় শেষের পথে। ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে টানেলের ৯৬ শতাংশ কাজ। শেষ হয়েছে এপ্রোচ রোড নির্মাণের কাজও। টানেলের যান্ত্রিক, বৈদ্যুতিক, সিভিল ওয়ার্ক, ক্রস প্যাসেজ ও টানেল সম্পর্কিত টোল প্লাজার নির্মাণ কাজ অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজও প্রায় শেষের দিকে।

টানেলের প্রকল্প পরিচালক মো. হারুনুর রশিদ জানান, টানেলের নির্মাণ কাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই শেষ হবে এতে কোন সন্দেহ নেই। টানেলের ৯৬ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আমরা শিডিউল অনুযায়ী কাজ সম্পন্ন করার চেষ্টা করছি বলেন তিনি।

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে এই টানেল হবে দক্ষিণ এশিয়ায় নদীর তলদেশে নির্মিত প্রথম রোড টানেল। আর এই টানেলের মধ্যে দিয়ে পদ্মা সেতুর পর আরেকটি স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এই টানেল চালু হলে দৈনিক ১৭ হাজার যানবাহন পার হতে পারবে এবং ২০২৫ সালের মধ্যে প্রতিদিন গড়ে ২৮ হাজার ৩০৫টি যানবাহন যাতায়াত করতে পারবে। ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই টানেলে প্রতিটি সুড়ঙ্গের দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার। টানেলের পূর্ব ও পশ্চিম ও প্রান্তে থাকছে ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক। এ ছাড়া ৭২৭ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি ওভারব্রিজ রয়েছে আনোয়ারা প্রান্তে।

# দৈনিক পার হবে ১৭ হাজার যানবাহন # থাকছে ৭২৭ মিটার দৈর্ঘ্যে ওভারব্রিজ

নগর পরিকল্পনাবিদ আশিক ইমরান বলেন, কক্সবাজার এবং টেকনাফকে ঘিরে যে ধরনের বিশ্বমানের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে, সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার জন্য এ প্রকল্প বিশাল ভূমিকা রাখবে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস্ বলেন, ‘ টানেল চালু হলে চট্টগ্রাম নগরীতে যানবাহনের চাপ আরও বাড়বে। এ কারণে আমরা ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বেশ কিছু উন্নয়ন কর্মকাণ্ড এগিয়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, যানবাহন উঠা-নামার জন্য বাড়ানো হচ্ছে ইউলুপ এবং আন্ডারপাস। টানেল চালু হওয়ার পর শহরের যানজটের চাপ সামাল দিতে আপাতত এলিভেটেট এক্সপ্রেসওয়ের পতেঙ্গা থেকে নিমতলা পর্যন্ত ৮ কিলোমিটারের কাজ দ্রুত শেষ করে খুলে দেওয়ার চিন্তা চলছে।

যোগাযোগের দিক থেকে দূরত্ব অনেকাংশে কমে আসবে জানিয়ে প্রকৌশলী শামস বলেন, টানেল নির্মাণকাজ শেষ হলে ঢাকার যানবাহনগুলোকে আর নগর হয়ে যেতে হবে না। আউটার রিং রোড দিয়ে টানেলের ভেতর দিয়ে আনোয়ারা ও বাঁশখালী হয়ে কক্সবাজার যেতে পারবে। এতে করে ঢাকার সাথে ৩৫ কিলোমিটার এবং চট্টগ্রামের ১৫ কিলোমিটার দূরত্ব কমবে। ঢাকা থেকে ৭ ঘন্টা এবং চট্টগ্রাম থেকে ৩ ঘন্টায় কক্সবাজার যাওয়া যাবে।

পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সহ-সভাপতি ও নগর পরিকল্পনাবিদ সুভাষ বড়ুয়া বলেন, টানেলের গাড়ি বের হলে এ যানজট আরও বাড়বে। চট্টগ্রাম বন্দরে প্রতিদিন হাজার হাজার ট্রাক-কাভার্ডভ্যান পণ্য নিয়ে আসা-যাওয়া করছে। এ গাড়িগুলো কীভাবে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মধ্যে আনা যায় সেদিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন বলে করেন তিনি।

হারুনুর রশিদ বলেন, নদীর নিচ দিয়ে এই ধরণের টানেল দক্ষিণ এশিয়ায় এটাই প্রথম। প্রকল্পের বাকি ৪ শতাংশ কাজ শেষ করতে ব্যাপক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিন পিং প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল নির্মাণের কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চট্টগ্রাম নগরের পতেঙ্গা নেভাল একাডেমির পাশ ঘেঁষে শুরু হয়ে কর্ণফুলী নদীর মাঝ দিয়ে দক্ষিণ পাড়ের আনোয়ারা প্রান্তে উঠেছে এ টানেল। চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড এবং কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার লিমিটেড কারখানার মাঝামাঝি স্থান দিয়ে নদীর দক্ষিণ প্রান্তে পৌঁছাবে টানেলটি।

কর্ণফুলী নদীর মধ্যভাগে টানেল অবস্থান করবে ১৫০ ফুট গভীরে। টানেলের নির্মাণ কাজ করছে চায়নার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কমিউনিকেশন্স কনস্ট্রাকশন কোম্পানি। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি ৮২ লাখ টাকা। প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়নে ২১০ চীনা নাগরিক এবং ৮০০ জন বাংলাদেশি শ্রমিক দিন রাত কাজ করছেন।

প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি ৮২ লাখ টাকা ব্যয়ে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে এ টানেল নির্মাণের কাজ চলছে। এর মধ্যে চীনের সহায়তা পাঁচ হাজার ৯১৩ কোটি ১৯ লাখ টাকা। বাংলাদেশ সরকার দিচ্ছে চার হাজার ৪৬১ কোটি ২৩ লাখ টাকা। চীনের এক্সিম ব্যাংক ২০ বছর মেয়াদি ২ শতাংশ হারে এ ঋণ দিয়েছে। চীনা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশন অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (সিসিসিসি) এই টানেল নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।

টানেল প্রকল্পে রক্ষণাবেক্ষণ ও টোল আদায় করবে চীনা কোম্পানি। ২০২২ সালের ১৮ মে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় এ কাজের জন্য চায়না কমিউনিকেশন্স কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেডকে (সিসিসিসি) নিয়োগের প্রস্তাব নীতিগতভাবে অনুমোদন দেওয়া হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার বন্দরনগরীকে চীনের সাংহাই নগরীর মতো ‘ওয়ান সিটি, টু টাউন’ মডেলে পরিণত করতে দক্ষিণ চট্টগ্রামের পতেঙ্গা ও আনোয়ারা উপজেলাকে সংযুক্ত করতে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে এই টানেল নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করে। সুত্র: দৈনিক কক্সবাজার

সারাদেশ-এর আরও খবর