কক্সবাজার উপকূল থেকে আশ্রয়কেন্দ্রে আসছেন মানুষ

  বিশেষ প্রতিনিধি    13-05-2023    68
কক্সবাজার উপকূল থেকে আশ্রয়কেন্দ্রে আসছেন মানুষ

অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র কারণে ৮নং বিপদ সংকেত চলার কারণে কক্সবাজারের উপকূলীয় এলাকার কিছু কিছু মানুষ আশ্রয়কেন্দ্র আসছেন। শনিবার (১৩ মে) সকাল থেকে মহেশখালীর সোনাদিয়া, ঘড়িভাঙ্গা, সদরের নাজিরারটেক, সমিতিপাড়া, টেকনাফের সেন্টমার্টিন এলাকার আশ্রয়কেন্দ্র তাদের নিয়ে আসা হচ্ছে। এজন্য কাজ করছেন অন্তত বিভিন্ন সংস্থার ১০ হাজারেরও বেশি কর্মী।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বিভীষণ কান্তি দাশ জানিয়েছেন, শনিবার সকাল ৮টার দিকে সাগর তীরবর্তী এলাকা থেকে আশ্রয়কেন্দ্রে কিছু কিছু মানুষ আসতে শুরু করেছেন। তবে এ পর্যন্ত কতজন মানুষ আশ্রয়কেন্দ্র এসেছেন তা এখন বলা যাচ্ছে না। খোঁজখবর নিচ্ছেন বলে জানান তিনি।

ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে গতকাল দুপুর থেকে বৃষ্টি শুরু হয়। রাত ১টা পর্যন্ত বন্ধ ছিল। শনিবার সকাল থেকে মোখার প্রভাবে থেমে থেমে বৃষ্টি ও ধমকা হাওয়া চলছে।

কক্সবাজার জেলা প্রলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আশ্রয় নেওয়া শামসুল আলম বলেন, ‘আমাদের ঘরগুলো সাগর তীরে। যেকোনও সময় ডুবে যেতে পারে। তাই প্রাণ বাঁচাতে আগে থেকে চলে আসছি। আল্লাহ জানেন, এই ঘূর্ণিঝড়ের পরিণতি কী হয়! আল্লাহ আমাদের রক্ষা করুন!’

মরিয়ম আকতার নামে সাগর তীরের আরেক বাসিন্দা বলেন, ‘আমার স্বামী পঙ্গু। তাই আগে থেকে চলে আসলাম। ঘূর্ণিঝড় শুরু হলে তাকে নিয়ে কই যাবো? সে তো চলাফেরাও করতে পারে না। টেলিভিশন ও এলাকায় মাইকিং করে বলা হচ্ছিল আজ সন্ধ্যা থেকে শুরু হতে পারে তাই সবকিছু নিয়ে ডিসি স্যারের কার্যালয়ে চলে আসলাম।’

কক্সবাজার প্রশাসকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, জেলায় সিসিপির ৮ হাজার ৬০০ জন এবং রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির ২ হাজার ২০০ জন স্বেচ্ছাসেবক রয়েছেন। সেন্টমার্টিনে নেভি, কোস্ট গার্ড, পুলিশসহ অন্যদের মিলিয়ে ৩৭টি সরকারি স্থাপনা রয়েছে। তাই সেখানে সরকারি স্থাপনাগুলো সাইক্লোন শেল্টার হিসেবে ব্যবহারের জন্য বলা হয়েছে। দুর্যোগকালের জন্য ২৫ লাখ নগদ টাকা রাখা হয়েছে; যার মধ্যে ১০ লাখ টাকা উপজেলা পর্যায়ে পাঠানো হয়েছে।

একই সঙ্গে ৫.৯০ মেট্রিক টন চাল, ৩.৫ মেট্রিক টন টোস্ট বিস্কুট, ৩.৪ মেট্রিক টন শুকনো কেক, ১৯৪ বান্ডিল ঢেউটিন, ২০ হাজার প্যাকেট ওরস্যালাইন এবং ৪০ হাজার পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট মজুত রাখা হয়েছে। প্রস্তুত রয়েছে ৫৭৬টি আশ্রয়কেন্দ্র। জেলায় যে ৫৭৬টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে সেগুলোতে ৫ লাখ ৫৯৯০ জন লোক রাখা যাবে।

শনিবার সকাল থেকে মেডিক্যাল টিম, কোস্ট গার্ড, নৌ বাহিনী, পুলিশ, নৌ পুলিশ, জেলা পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির স্বেচ্ছাসেবক দল, স্কাউট দল, আনসার বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট অন্য সংস্থাগুলোকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি গ্রহণ করার জন্য বলা হয়েছে।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। নিয়ন্ত্রণ কক্ষের মোবাইল ফোন নম্বর: ০১৮৭২৬১৫১৩২।

কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত প্রধান আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান বলেন, ‘রবিবার (১৪ মে) ঘূর্ণিঝড় মোখা আঘাত হানার সম্ভাবনা বেশি রয়েছে। সে সময় বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১৫০ থেকে ১৬০ কিলোমিটার থাকতে পারে। সংকেত আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সেন্টমার্টিনের দুই দিক থেকে যেহেতু খোলা রয়েছে এবং পানি চলাচলের সুবিধা আছে, তাই বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে না। কারণ ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ওই অঞ্চলে পানি জমে থাকবে না। আবহাওয়া অফিস থেকে প্রতি মুহূর্তে ঘূর্ণিঝড় মোখার আপডেট জানিয়ে দেওয়া হবে।’

সেনাবাহিনীর পক্ষে মেজর ফাহাদ বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবিলায় আমাদের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। জরুরি মুহূর্তে আমরা ওষুধ সরবরাহ থেকে শুরু করে যাতায়াত ব্যবস্থা এবং প্রতিটি অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা অব্যাহত রাখার চেষ্টা করবো। এ সংক্রান্ত যোগাযোগ সেল খোলা হয়েছে। আমরা আমাদের টিমের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবো এবং ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় সব ধরনের ইকুইপমেন্ট প্রস্তুত রয়েছে।’

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম বলেন, ‘এ নিয়ে প্রতিটি থানায় আমাদের যোগাযোগ হয়েছে। দুর্যোগকালে লোকজনকে সহায়তা এবং সহযোগিতা করতে হবে। লোকজনকে সহযোগিতার মাধ্যমে মানবিকতার পরিচয় দিতে হবে।’

সারাদেশ-এর আরও খবর