কক্সবাজারের মাতারবাড়ীর মেঘা প্রকল্পেই ঘটবে অর্থনৈতিক বিপ্লব

  বিশেষ প্রতিনিধি    02-03-2023    216
কক্সবাজারের মাতারবাড়ীর মেঘা প্রকল্পেই ঘটবে অর্থনৈতিক বিপ্লব

কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ী ঘিরে অর্থনৈতিক বিপ্লবের স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশের মানুষ। আর উপকূলীয় এ এলাকায় নির্মাণ হচ্ছে দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর। এ প্রকল্প ঘিরে তৈরি হচ্ছে দেশের অন্যতম বৃহৎ বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ অসংখ্য মেগা প্রকল্প।

সংশ্লিষ্টদের দাবি, মাতারবাড়ী কেন্দ্রিক মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে বদলে যাবে কক্সবাজার তথা দেশের অর্থনীতির চিত্র।

নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘মাতারবাড়ীকে কেন্দ্র করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন। এখানে তৈরি হচ্ছে গভীর সমুদ্রবন্দর ও কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। অত্র এলাকার যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নত করতে তৈরি করা হচ্ছে রেললাইন।

কক্সবাজার বিমানবন্দরকে উন্নীত করা হচ্ছে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। সম্প্রসারণ করা হচ্ছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক। সরকারের নেওয়া উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে মাতারবাড়ী হবে অত্র অঞ্চলের বাণিজ্যিক হাব। ঘটবে অর্থনৈতিক বিপ্লব।’

চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুব আলম বলেন, মাতারবাড়ীর গভীর সমুদ্রবন্দর দেশের অর্থনীতির জন্য হবে গেম চেঞ্জার। মাতারবাড়ী ঘিরে অনেক মেগা পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার। এ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে দেশের ভবিষ্যৎ অর্থনীতির চিত্র পাল্টে যাবে।

জানা যায়, মাতারবাড়ীকে এ অঞ্চলের বাণিজ্যিক হাব হিসেবে তৈরি করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। তাই মাতারবাড়ী ঘিরে বিশাল বিনিয়োগ পরিকল্পনা করা হয়েছে, যা বাস্তবায়িত হলে আমূল পরিবর্তন আসবে দেশের অর্থনীতির চেহারায়।

পরিকল্পনার অংশ হিসেবে উন্নত যোগাযোগ, বিদ্যুৎ সরবরাহ, বন্দর, পর্যটনসহ বিভিন্ন খাতে নতুন নতুন বিনিয়োগ আনা হচ্ছে। মাতারবাড়ীকে ‘এনার্জি হাব’ হিসেবে গড়ে তুলতে এলএনজি টার্মিনাল, এলপিজি টার্মিনাল, অয়েল টার্মিনাল, গ্যাস ট্রান্সমিশন ও সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে।

‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল হাব’ হিসেবে গড়ে তুলতে অয়েল রিফাইনারি, এনার্জি ও ফুড স্টোরেজ, ট্যুরিজম, এমব্যাঙ্কমেন্ট ও ওয়াটারফ্রন্ট ইকোনমিক জোন প্রতিষ্ঠার কাজও চলছে। মাতারবাড়ীর হাজার হাজার একর লবণ চাষের ভূমিতে তৈরি হচ্ছে গভীর সমুদ্রবন্দর। ২০২৬ সালের শেষের দিকে গভীর সমুদ্রবন্দরটি চালু হওয়ার কথা রয়েছে।

বন্দরটি চালু হলে প্রতি বছর শুধু আমদানি-রপ্তানিতে সাশ্রয় হবে ৬ বিলিয়ন ডলার। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এ বন্দর ব্যবহার করার কারণে আয় হবে আরও কোটি কোটি ডলার। গভীর সমুদ্রবন্দরের পাশে নির্মাণ হচ্ছে দেশের অন্যতম বৃহৎ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র পুরোদমে চালু হলে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। আগামী জুনে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পরীক্ষামূলক চালু হওয়ার কথা রয়েছে।

মাতারবাড়ীর সঙ্গে দেশ-বিদেশের যোগাযোগব্যবস্থা উন্নত করতে কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রূপ দেওয়ার কাজ চলমান রয়েছে। সম্প্রসারণ প্রকল্পটি চলতি বছরই শেষ হওয়ার কথা। পর্যটন নগরী ও মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের সঙ্গে যোগাযোগব্যবস্থা আরও উন্নত করতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন তৈরির কাজ চলমান রয়েছে। এ বছরই এই রুটে চলাচল করবে ট্রেন।

মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর থেকে সড়কপথে যান চলাচল নির্বিঘ্ন করতে তৈরি করা হচ্ছে প্রায় ২৮ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক। এ সড়কটি চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের সঙ্গে যুক্ত হবে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কও চার লেনে উন্নীত করার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

সারাদেশ-এর আরও খবর