কক্সবাজারে যুবলীগের নতুন কমিটি চলতি মাসে : থাকতে পারে চমক!

  বিশেষ প্রতিনিধি    20-07-2023    92
কক্সবাজারে যুবলীগের নতুন কমিটি চলতি মাসে : থাকতে পারে চমক!

চলতি মাসের শেষের দিকে ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে কক্সবাজার জেলা যুবলীগের কমিটি। কেন্দ্রীয় সিন্ধান্ত মতে আহবায়ক কমিটির জন্য ইতিমধ্যে কক্সবাজার জেলা থেকে আহবায়ক ও যুগ্ন্-আহবায়কের জন্য নেতাকর্মীদের কাছ থেকে বায়োডাট সংগ্রহ করা হয়েছে। বিশেষ করে কেন্দ্রীয় যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ দেশে ফিরলে এই কমিটি ঘোষনা কিংবা সিন্ধান্ত আসতে পারে বলে মনে করছেন জেলা যুবলীগের নেতাকর্মীরা।

সূত্রমতে, কক্সবাজার জেলা যুবলীগকে ঢেলে সাজানোর জন্য সম্প্রতি বাহাদুর-সোহেল কমিটি বিলুপ্ত ঘোষনা করে কেন্দ্রীয় যুবলীগ। পরে নতুনভাবে আহবায়ক কমিটি দেওয়ার জন্য বায়োডাটা সংগ্রহ করে কেন্দ্রীয় যুবলীগ। তারপর থেকে নতুন কমিটি নিয়ে কক্সবাজার জেলার প্রত্যন্ত এলাকায় তৃলমুল ও ত্যাগী নেতাকর্মীদের মাঝে চলছে আলোচনার ঝড়। শুধু যুবলীগের নেতাকর্মীরা নয়, আওয়ামী লীগের আরো সহযোগী ও অঙ্গসংগঠন ছাড়াও মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের মানুষের মুখে মুখে কে হচ্ছেন যুবলীগের আগামী কমিটির কর্ণধার। কে পাচ্ছেন নেতৃত্ব তা নিয়ে আলোচনার ঝড় ওঠেছে। তবে যোগ্য নেতৃত্ব বাছাই করতে কেন্দ্রীয় যুবলীগ চুলছেড়া বিশ্লেষণ করছে বলে জানা গেছে।

এদিকে সাধারণ নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা আহবায়ক এবং যুগ্ন-আহবায়ক নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যেন কর্মীবান্ধব, সৎ, ত্যাগী ও প্রতিশ্রুতিশীল নেতৃত্ব যেন বাছাই করা হয়। খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায়, ইতিমধ্যে কক্সবাজার জেলা যুবলীগের নতুন নেতৃত্বে আসতে অন্তত অর্ধশত যুবলীগ ও সাবেক ছাত্রলীগের নেতাকর্মী কেন্দ্রীয় যুবলীগের দপ্তরে নিজেদের জীবন বৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন। এদের মধ্যে ১০ জন আহবায়ক ও ৩০ জনের অধিক যুগ্ম-আহবায়ক পদে। নতুন কমিটিতে কারা আহবায়ক, যুগ্ম আহবায়ক ও সদস্য হচ্ছেন সেদিকে তাকিয়ে আছেন কক্সবাজার জেলার তৃণমূল পর্যায়ের হাজার হাজার নেতাকর্মী।

জানা গেছে, গত ৮ জুন কক্সবাজার জেলা যুবলীগের কমিটি বাতিল ও সাধারণ সম্পাদক শহিদুল হক সোহেলকে বহিষ্কার করেন কেন্দ্রীয় যুবলীগ। এরপর জেলা যুবলীগের আহবায়ক ও যুগ্ম আহবায়ক পদে আগ্রহী নেতাকর্মীদের কাছ থেকে জীবনবৃত্তান্ত আহবান করা হয় কেন্দ্রীয় যুবলীগের দপ্তর থেকে। এরই ধারাবাহিকতায় আহবায়ক ও যুগ্ম আহবায়ক হতে প্রায় অর্ধশতের মত নেতাকর্মী নিজেদের জীবনবৃত্তান্ত জমা দেন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন-সদ্য বাতিল কমিটির সভাপতি সোহেল আহমদ বাহাদুর, বহিস্কৃত সাধারণ সম্পাদক শহিদুল হক সোহেল, ত্যাগি যুবলীগ নেতা জি.এম জাহিদ ইফতেকার, জেলা যুবলীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক ও দুবারের নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল মাবুদ, শহর যুবলীগের সাবেক আহবায়ক শোয়েব ইফতেখার, শহর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ সভাপতি যুবলীগের পরিক্ষিত নেতা ও জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বেন্টু দাশ, সদর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ইফতেখার উদ্দিন পুতু, কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ইশতিয়াক আহমদ জয়, রামু উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি রিয়াজুল আলম, চকরিয়া উপজেলা যুবলীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম শহিদ, ঈদগাঁও উপজেলার যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ।

তবে সদ্য বাতিল কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পুণরায় দায়িত্ব পেতে জীবনবৃত্তান্ত জমা দেয়ায় তৃণমূলের অনেক নেতাকর্মীদের মাঝে নিরব মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এর কারণ হিসেবে নাম প্রকাশে অনেক যুবলীগের নেতাকর্মীরা জানান-দীর্ঘ সাড়ে ৫ বছরের মধ্যে ওই কমিটির সভাপতি-সাধারন সম্পাদক জেলা যুবলীগের পূণাঙ্গ কমিটি করতে চরমভাবে ব্যার্থ হয়েছেন। যে কারনে গত ৮ জুন ওই কমিটি বাতিল ও সাধারণ সম্পাদককে বহিস্কার করা হয়। কিন্তু তারপরেও ক্ষমতার লোভে তারা পূণরায় দায়িত্ব পেতে হামাগুড়ি খাচ্ছেন।

বিভিন্ন সূত্রে খবর নিয়ে জানা গেছে- আহবায়ক পদে সার্বিক বিবেচনা ও গ্রহণ যোগ্যতায় এগিয়ে রয়েছেন জি.এম জাহিদ ইফতেকার। যুবলীগের একটি সূত্র বলছে, এবারে কমিটিতে আহবায়ক পদে দেখা যেতে পারে জি.এম জাহিদ ইফতেকারকে। দলের জন্য ত্যাগের পাশাপাশি তার আছে দীর্ঘ রাজনৈতিক ক্যারিয়ার। তাছাড়া ছাত্রজীবনে জেলার নামকরা মেধাবী শিক্ষার্থীদের তালিকায় অন্যতম এই জাহিদ। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক পিতা ও বোর্ড স্ট্যান্ডধারী মাতার সহচার্যে গড়ে উঠা সুশিক্ষা, মানবিক, অসম্প্রদায়িক, উদার মানসিক ও প্রগতিশীল চিন্তা চেতনার মূর্ত মানব এই জাহিদ।

তিনি নীতি আদর্শে অটল ও মনে প্রাণে স্বাধীনতার স্বপক্ষে শক্তিকে বুকে নিয়ে ছাত্রলীগে একনিষ্ঠ কর্মী হয়ে নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন বারবার। পদ পদবীর মোহে আবদ্ধ না থেকে রাজনৈতিক কর্মকান্ড ও মানবিক সেবায় জড়িয়ে পড়েন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ কমিটির গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেছেন। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার স্বীকার হয়ে বহু মিথ্যা ও সাজানো মামলার আসামী হয়ে ফেরারি জীবন কাটাতে হয়েছে বহুবার। কিছুতেই নীতি আদর্শিক রাজনীতিতে হাল ছাড়েননি তিনি। এছাড়া চমক হিসেবে আসার সম্ভাবনা রয়েছে আবদুল মাবুদেরও।

কারণ হিসেবে নেতারা বলছেন, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে কক্সবাজার পৌর এলাকার মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় যুবলীগের আহবায়কের দায়িত্ব পালন করেন আবদুল মাবুদ। তাছাড়া জোট সরকার আমলে একাধিক মিথ্যা মামলায় কারাবন্দীও ছিলেন তিনি। তাই জেলার যুবলীগের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের পছন্দের তালিকার অগ্রে রয়েছেন তিনি। অন্যদিকে ক্লিন ইমেজের যুবনেতা শোয়েব ইফতেখারও আহবায়ক হওয়ার দৌঁড়ে পিছিয়ে নেই। সেও মন-প্রান দিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে সাবেক জেলা যুবলীগের নানা অনিয়ম নিয়ে কেন্দ্রের সাথে সুসর্ম্পক গড়ে তুলেছেন।

যেকারনে তারও অবস্থান ভালো বলে দাবী করেছেন নেতাকর্মীরা। তাছাড়া আহবায়ক হওয়ার জন্য কেন্দ্র থেকে শুরু করে নানা জায়গায় লবিং করে যাচ্ছেন বেন্টু দাশ এবং ইফতেখার উদ্দিন পুতু। এদের মধ্যে বেন্টু দাশ সদ্য সমাপ্ত কক্সবাজার পৌর নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ী করতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন এবং দীর্ঘ সময় ধরে আওয়ামী রাজনীতির সাথে জড়িত হয়ে সকল আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথে থেকেছেন।

তবে আহবায়ক নিয়ে উল্লেখিতদের নাম আলোচনায় আসলেও যুগ্ন-আহবায়ক হিসেবে অনেকটা নিশ্চিত হয়েছেন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য ইশতিয়াক আহমদ জয়। এদিকে জেলা যুবলীগের নেতৃত্ব ও আগামী কমিটি নিয়ে কেন্দ্রীয় যুবলীগের মতামত জানার জন্য কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক (চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত) সাইফুর রহমান সোহাগকে একাধিকবার ফোন করা হলেও ফোন রিসিভ না করায় মতামত জানা সম্ভব হয়নি।

কক্সবাজার জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি সোহেল আহমদ বাহাদুর আহবায়ক হওয়ার জন্য জীবনবৃত্তান্ত জমা দেয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, সাড়ে ৫ বছরে যে জেলা কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে পারিনি সেটি হচ্ছে সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। সত্য যেটা সেটা আসলেই সাধারণ নেতাকর্মী কিংবা মানুষ জানেন না। বিষয়টি হলো আমাদের সম্মেলনের পরেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি করে কেন্দ্রে জমা দিয়েছিলাম।

কমিটি অনুমোদন দেয়ার দায়িত্ব কেন্দ্রের। কি কারণে ওনারা কমিটি অনুমোদন দেন নাই সেটা ওনারাই বলতে পারবেন। এখানে জেলা কমিটির কোন ব্যর্থতা ছিল না, ব্যর্থতা ছিল কেন্দ্রের। কক্সবাজার জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল হক সোহেল ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্যে নেয়া সম্ভব হয়নি। উল্লেখ্য-২০১৮ সালের ৩০ মার্চ কক্সবাজার জেলা যুবলীগের সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

সারাদেশ-এর আরও খবর