কক্সবাজার: ফিরে দেখা আলোচিত ২০২২

  বিশেষ প্রতিনিধি    01-01-2023    218
কক্সবাজার: ফিরে দেখা আলোচিত ২০২২

হাসি—কান্না, আনন্দ—বেদনায় কেটে গেলো আরও একটি বছর। বিদায় আজ বিদায় নিবে ২০২২। নতুন সূর্য উঁকি দেবে পুরাতনের গ্লানি ভুলে। সবাই সানন্দে স্বাগত জানাবে ২০২৩ নতুন বছরকে। ৩৬৫ দিনের এই হিসেব—নিকেশ চলবে অনন্তকাল। ২০২২ সালে বছরজুড়ে আলোচনায় ছিল কক্সবাজারে প্রধানমন্ত্রীর সফর, জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন, বিএনপি—জামায়াতের আন্দোলন, সীমান্তে উত্তেজনা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি, ১০১ ইয়াবা কারবারির সাজা, বোট ডুবে রোহিঙ্গার মৃত্যু, রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের দাপট, বোট ডুবে রোহিঙ্গাদের মৃত্যু, তুমব্রু সীমান্তে ডিজিএফআই কর্মকর্তা নিহত, মেজর সিনহা হত্যা মামলায় ওসি প্রদীপ, লিয়াকতসহ আসামীদের মৃত্যুদণ্ড, সাগর থেকে মাছ—জেলিফিশ ভেসে আসা, আলোচিত শ্রমিক লীগ সভাপতি জহির, মোর্শেদ বলি, ছাত্রলীগ নেতা ফয়সাল ও ইমন হত্যা এবং আলোচিত ইয়াবা কারবারি ভুট্টো হত্যা। এছাড়া শেষ মুহুর্তে উত্তাপ ছিল বিএনপি—জামায়াতের আন্দোলন কর্মসূচী ঘিরে। জামায়াত—শিবিরের ২০০ শত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাও ছিল আলোচনায়। নতুন বছরে অগ্রগতির পথে সব জটিলতা দূর হবে—এটাই সবার প্রত্যাশা। বিদায়ী বছরের পূর্ব মুহূর্তে চলে সালতামামির আয়োজন। হিসেব—নিকেশ, চুলচেরা বিশ্লেষণ চলে মাসজুড়ে। যা কিছু ঘটেছে, তা আমাদের চোখের সামনেই। চোখ বুজলেই তা দেখতে পাই। তবুও স্মরণ করিয়ে দেওয়া, একটু আলোচিত করা।

প্রধানমন্ত্রীর কক্সবাজার সফর: গত ০৭ ডিসেম্বর কক্সবাজারে সফল করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি ওইদিন সকালে ইনানীতে আন্তর্জাতিক নৌ—মহড়ায় অংশ নেন। এছাড়া বিকালে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিশাল জনসভায় ভাষণ দেন। সফলকালে তিনি ২৯টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও চারটি নতুন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ২৯টি প্রকল্পে ব্যয় হবে ১ হাজার ৩৯৩ কোটি টাকা। ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা চারটি প্রকল্পে ব্যয় হবে ৫৭২ কোটি টাকা। উদ্বোধন করা প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে—কক্সবাজার গণপূর্ত উদ্যান, বাহারছড়া বীর মুক্তিযোদ্ধা মাঠ, কুতুবদিয়া ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ভবন, পেকুয়া উপজেলা ভূমি অফিস ভবন, কক্সবাজার জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয় ভবন, শেখ হাসিনা জোয়ারিয়ানালা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের চারতলা একাডেমিক ভবন, আবদুল মাবুদ চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ের চারতলা একাডেমিক ভবন, মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের চারতলা একাডেমিক ভবন, কক্সবাজার জেলার লিংক রোড—লাবনী মোড় সড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প, রামু—ফতেখাঁরকুল—মরিচ্যা জাতীয় মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ প্রকল্প, টেকনাফ—শাহপরীর দ্বীপ জেলা মহাসড়কের হাড়িয়াখালী থেকে শাহপরীরদ্বীপ অংশ পুনর্নির্মাণ প্রশস্তকরণ এবং শক্তিশালীকরণ প্রকল্প, বাঁকখালী নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ নিষ্কাশন সেচ ও ড্রেজিং প্রকল্প (১ম পর্যায়), শাহপরীর দ্বীপে সি ডাইক অংশে বাঁধ পুনর্নির্মাণ ও প্রতিরক্ষা কাজ, ক্ষতিগ্রস্ত পোল্ডার সমূহের পুর্নবাসন প্রকল্প, রামু কলঘর বাজার—রাজারকুল ইউপি সড়কে বাঁকখালী নদীর ওপর ৩৯৯ মিটার দীর্ঘ সংসদ সদস্য ও রাষ্ট্রদূত ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরী সেতু, কক্সবাজার জেলায় নবনির্মিত ছয়টি ইউনিয়ন ভূমি অফিস ভবন, চারটি উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন (রামু, টেকনাফ, মহেশখালী ও উখিয়া), কক্সবাজার পৌরসভার এয়ারপোর্ট রোড আরসিসিকরণ ও অন্যান্য প্রকল্প, শহীদ সরণি আরসিসিকরণ ও অন্যান্য প্রকল্প, বীর শ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন স্টেডিয়াম সড়ক আরসিসিকরণ ও অন্যান্য প্রকল্প, নাজিরারটেক শুঁটকি মহাল সড়ক আরসিসিকরণ ও অন্যান্য প্রকল্প, টেকপাড়া সড়ক আরসিসিকরণ ও অন্যান্য প্রকল্প, সি বিচ রোড আরসিসিকরণ ও অন্যান্য প্রকল্প, মুক্তিযোদ্ধা সরণি আরসিসিকরণ ও অন্যান্য প্রকল্প, সৈকত—সরণ আবাসিক এলাকা সড়ক আরসিসিকরণ ও অন্যান্য প্রকল্প। ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের জন্য প্রস্তুত চার প্রকল্প হলো—বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট (২য় পর্যায়) শীর্ষক প্রকল্প, কুতুবদিয়া উপজেলার ধুরুং জিসি মিরাখালী সড়কে ধুরুংঘাটে ১৫৩.২৫ মিটার জেটি ও আকবর বলি ঘাটে ১৫৩.২৫ মিটার জেটি নির্মাণ প্রকল্প, মহেশখালী উপজেলার মহেশখালী গোরকঘাটা ঘাটে জেটি নির্মাণ প্রকল্প এবং বাংলাদেশ—মিয়ানমার সীমান্ত নিরাপত্তা উন্নত করার জন্য উখিয়া—টেকনাফ উপজেলায় নাফ নদ বরাবর পোল্ডারসমূহের (৬৭/এ, ৬৭, ৬৭/বি এবং ৬৮) পুনর্বাসন প্রকল্প।

সীমান্তে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি: গত ১৩ আগস্ট থেকে তুমব্রু সীমান্তের বিপরীতে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের একটি পাহাড়ে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে স্বাধীনতাকামী সশস্ত্রগোষ্ঠী আরাকান আর্মির যুদ্ধ চলছে। প্রায় দুই মাস ধরে চলা এই যুদ্ধ থামার লক্ষণ নেই। গত ২৮ আগস্ট এবং ৩ সেপ্টেম্বর দুই দফায় চারটি মর্টারশেল এসে পড়েছিল তুমব্রু উত্তরপাড়া ও বাইশফাঁড়ি এলাকায়। এ ঘটনায় ঢাকায় দেশটির রাষ্ট্রদূত উ অং কিয়াউ মো—কে ডেকে প্রতিবাদ জানায় বাংলাদেশ। একইদিন বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষে উড়ে যায় মিয়ানমারের যুদ্ধ বিমান ও ফাইটিং হেলিকপ্টার। সর্বশেষ গত ২৩ অক্টোবর নাইক্ষ্যংছড়ির চাকঢালা সীমান্তে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে নতুন করে শুরু হয় ব্যাপক গোলাগুলি ও গোলাবর্ষণ। টানা দুই দিন থেমে থেমে অব্যাহত থাকে এই গোলাগুলি। আড়াই মাস ধরে মিয়ানমার অভ্যন্তরে চলমান গোলাগুলিকে কেন্দ্র করে সীমান্তে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করে। এতে বাংলাদেশ সীমান্তের বাসিন্দারা আতঙ্কে ছিল। সীমান্তের এ পরিস্থিতি নিয়ে শুরু থেকে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে নানা পর্যায়ে যোগাযোগ চলছিল। হয়েছে কয়েকদফা পতাকা বৈঠক।

কক্সবাজার জেলা আ.লীগের সম্মেলন: গত ১৩ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় বহুল কাঙ্খিত জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন ও কাউন্সিল। এতে জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী নতুন কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছেন। এ ছাড়া কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মজিবুর রহমানকে আবারও সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। নতুন কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ। জানা গেছে, ২০১৬ সালের ২৮ জানুয়ারি জেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ ত্রিবার্ষিক সম্মেলন হয়। ওই দিন কেন্দ্র থেকে সিরাজুল মোস্তফাকে সভাপতি ও মুজিবুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক করে জেলা আওয়ামী লীগের ৭১ সদস্যের কমিটি দেওয়া হয়।

ওসি প্রদীপ ও এসআই লিয়াকতের ফাঁসির আদেশ: এই বছরের ৩১ জানুয়ারী দেশজুড়ে বহুল আলোচিত সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যার মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। এতে বরখাস্ত ওসি প্রদীপ ও এসআই লিয়াকতকে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়েছে। কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাঈল এ রায় ঘোষণা করেন। এতে এপিবিএন’র তিন সদস্যসহ ৭জনকে খালাস দেওয়া হয়েছে। যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয়েছে ৬জনকে। সাক্ষ্য প্রমাণে কার কী অপরাধ দাঁড়িয়েছে সেসব তুলে ধরার পর হত্যায় সংশ্লিষ্টতার অপরাধ অনুসারে সাজা ঘোষণাকালে প্রধান দুই অভিযুক্তকে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনিত: বছরজুড়ে আলোচনায় ছিল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। খুন—হত্যা ছাড়াও প্রতিদিন শহরের বিভিন্ন স্থানে নানা ধরনের অপরাধ হয়েছে। বিশেষ করে ছিনতাই বেড়েছিল আশঙ্কাজনক হারে। কিশোর গ্যাং, ছিনতাইকারী এবং রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ। গত ০৪ এপ্রিল সোমবার কক্সবাজার সদরের পিএমখালী ইউনিয়নে ফুটবল খেলার প্রাইজমানি ভাগাভাগি নিয়ে ছুরিকাঘাতে খুন হয় মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর (২২) নামে এক যুবক। ৬ এপ্রিল বুধবার চকরিয়া উপজেলার মাতামুহুরী নদী থেকে উদ্ধার করা হয় সুমন কর্মকার (২৬) নামে এক যুবকের মরদেহ। তিনি পেশায় ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক (টমটম) চালক ছিলেন। তার মৃত্যুর কারণ এখনো উদঘাটিত হয়নি। ৭ এপ্রিল বৃহস্পতিবার ইফতারের আগে পিএমখালীর চেরাংঘর বাজারে প্রকাশ্যে কুপিয়ে ও পিটিয়ে খুন করা হয় মোরশেদ আলীকে (৪০)। এ হত্যাকাণ্ডের দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। ৮ এপ্রিল শুক্রবার চকরিয়া উপজেলার হারবাং ইউনিয়নের মইক্কাঘোনায় জুয়া খেলাকে কেন্দ্র করে সন্ত্রাসী—জুয়াড়িরা পিটিয়ে হত্যা করে মোহাম্মদ ইউনুস নামে এক যুবককে। একই দিন টেকনাফ উপজেলার একটি ক্যাম্পে স্ত্রীর হাতে খুন হন বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গা নাগরিক সৈয়দুর রহমান। ১১ এপ্রিল একদিনে খুন হয় দুজন। সেহরি খেয়ে ফজরের নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদে যাওয়ার পথে তারেকুল ইসলাম নামের এক কিশোরকে ছুরিকাঘাতে খুন করে দুর্বৃত্তরা। একই দিন মো. সায়েম নামের একজনের লাশ পাওয়া যায় কক্সবাজার সদর উপজেলার চৌফলদন্ডির ব্রিজের নিচে। ১২ এপ্রিল মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে কক্সবাজার শহরের বিজিবি ক্যাম্প এলাকায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে খুন হয় আবুল কালাম (৪৫) নামে এক চাকরিজীবী। অন্যদিকে একই দিন কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরে টাকার লেনদেন নিয়ে ছুরিকাঘাতে আরিফ নামের এক রোহিঙ্গা নিহত হন। ১৫ এপ্রিল সকালে পর্যটন এলাকার মেরিন ড্রাইভ রোড থেকে মাথা থেঁতলানো অবস্থায় এক যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া ১৩ এপ্রিল বুধবার রাত ৮টার দিকে দায়ের কোপে দুই হাত বিচ্ছিন্ন হয়েছে মো. মোর্শেদ নামে এক ব্যক্তির। স্থানীয়দের অভিযোগ, কক্সবাজার শহর ও পর্যটন এলাকায় ছিনতাইকারীদের দাপট চলছে। পর্যটকদের এই শহরে সারাবছরই ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে প্রতিদিন সড়কে ঝরছে নানা পেশার মানুষের তাজা রক্ত। বিশেষ করে শহরের বিজিবি ক্যাম্প এলাকা, সাবমেরিন ক্যাবলের সামনে, আলীর জাঁহাল, রুমালিয়ারছড়া, কালুর দোকান, বার্মিজ মার্কেট, বাজারঘাটা, গোলদিঘীর পাড়, হাসপাতাল সড়ক, লালদিঘীর পাড়ের বিহারী গলি, সার্কিট হাউজ রোড, লাবনী পয়েন্ট, কলাতলীর পালস স্কুলের সামনে ও বাসটার্মিনালসহ আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট ছিনতাইকারীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়। বর্তমানে নতুন ডিসি ও পুলিশ সুপারের আগমণে কিছুটা স্বস্তিতে রয়েছে জেলাবাসী।

আত্মসমর্পণকৃত ১০১ ইয়াবা কারবারির সাজা: গত ২৩ নভেম্বর কক্সবাজারের টেকনাফে আত্মসমর্পণকৃত ১০১ ইয়াবা কারবারিকে মাদক মামলায় দেড় বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা দিতে হবে। এ ছাড়া দায়েরকৃত অস্ত্র মামলা থেকে তাদের খালাস দেয়া হয়েছে। কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাঈল এই রায় ঘোষণা করেন। নথি পর্যালোচনায় আদালত বলেন, ২০১৯ সালে ৩৭ জন ইয়াবা ব্যবসায়ী বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। ২০১৯ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ৩ লাখ ৫০ হাজার পিস ইয়াবা ও ৩০টি অস্ত্র উদ্ধার হয়। আত্মসমর্পণকারীরা উদ্ধারকৃত আলামত তাদের বলে স্বীকার করেন। অস্ত্র মামলায় ৩৪ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি টেকনাফ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে ১০২ জন ইয়াবাকারবারী আত্মসমর্পণ করেন। মামলা চলাকালে সোহেল নামে এক আসামি কারাগারে মারা যান। আত্মসমর্পণের পর তাদের কাছ থেকে ৩ লাখ ৫০ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেট ও ৩০টি দেশীয় তৈরি অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে উল্লেখ করে তাদের বিরুদ্ধে টেকনাফ মডেল থানায় মাদক ও অস্ত্র আইনে তৎকালীন ওসি (তদন্ত) এবিএমএস দোহা বাদী হয়ে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন।

চকরিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় ৬ ভাইয়ের মৃত্যু: গত ৮ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়ার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের মালুমঘাট এলাকায় পিতার শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান শেষে বাড়ি ফেরার পথে পিকআপ চাপায় একসাথে ৫ ভাই ঘটনাস্থলে মারা যায়। পরে ১৪ দিন পর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইসিইউতে চিকিসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রক্তিম শীলও (৩৫) মারা যান। আহত বোন হীরা শীল এলনও মালমুঘাট মেমোরিয়াল খ্রীস্টান হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

মোর্শেদ বলী, ছাত্রলীগ নেতা ফয়সলা ও ইমন হত্যা: এই বছরে সন্ত্রাসীদের হাতে খুন হন দুই উদীয়মান ছাত্রলীগ নেতা। তাদের মৃত্যু সবাইকে নাড়া দিয়েছিল। তাছাড়া গত রমজামে প্রকাশ্যে পিএমখালীতে খুন করা হয় মোরশেদ বলীকে। জানা যায়, কক্সবাজার সদর উপজেলার পিএমখালীতে চাষাবাদের সেচ প্রকল্পের বিরোধের জেরে এক যুবককে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করেছে একদল সন্ত্রাসী। নিহতের নাম মোর্শেদ আলী (৩৮)। ইফতারের আগে পিএমখালীর চেরাঙ্গর বাজারে এ ঘটনা ঘটে। নিহত মোরশেদ আলী পিএমখালী মাইছপাড়ার মৃত মাওলানা ওমর আলীর ছেলে। নিহতের ছোট ভাই অ্যাডভোকেট জাহেদ আলী জানান, মোর্শেদের পরিবার সরকারি একটি সেচ প্রকল্প দীর্ঘদিন ধরে ইজারা নিয়ে পরিচালনা করে আসছিলেন। কিন্তু এক পর্যায়ে একই এলাকার আব্দুল মালেক সিরাজুল ইসলাম আলাল মাহমুদুল হক, জয়নাল, কলিম উল্লাহসহ তাদের গোষ্ঠীর লোকজন জোর করে তা দখল করে নেয়। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিলো। কিছুদিনের মধ্যে ওই সেচ প্রকল্পের নতুন করে ইজারা হওয়ার কথা রয়েছে। ইজারা পাওয়ার জন্য নিহত মোর্শেদ আলীর পরিবার আবেদন করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে প্রতিপক্ষ। এর অংশ হিসেবে ইফতারের বাজার করার জন্য চেরাঙ্গর বাজারে গেলে সিরাজুল ইসলাম আলাল, আব্দুল মালেক, মাহমুদুল হক, জয়নাল, কলিম উল্লাহসহ তাদের গোষ্ঠীর অন্তত ২০ জন লোক লোহার রড, ছুরি ও লাঠি নিয়ে মোর্শেদ আলীর উপর হামলা চালায়। প্রতিপক্ষের লোকজন কুপিয়ে চলে গেলে স্থানীয়রা মুমূর্ষু অবস্থায় মোর্শেদ আলীকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। অবস্থা আশঙ্কাজনক হলে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। সেখানকার চিকিৎসকরা কিছুক্ষণ পরেই তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এছাড়া সদর উপজেলার খুরুশকুলে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সম্মেলন শেষ করে বাড়িতে ফেরার পথে ফয়সাল উদ্দিন ( ২৬) নামের ছাত্রলীগের এক নেতা খুন হয়।স্থানীয় ছাত্রলীগের নেতা—কর্মীদের অভিযোগ, পুলিশের উপস্থিতিতেই সন্ত্রাসীরা কুপিয়ে ফয়সালকে হত্যা করেছে। হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে এবং সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে শহরের প্রধান সড়কে বিক্ষোভ মিছিল করেছে জেলা ছাত্রলীগ। অপরদিকে পূর্বশত্রুতার জেরে আবদুল্লাহর নেতৃত্বে আরেক ছাত্রলীগ নেতা ইমনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেন আসামিরা। কয়েক মাস আগে আবদুল্লাহর সঙ্গে ইমনের ঝগড়া হয় এবং তা সামাজিকভাবে মীমাংসাও করা হয়। কিন্তু আক্রোশ নিয়ে ইমনের পেছনে লেগেছিলেন আবদুল্লাহ। বিভিন্ন সময় প্রাণনাশের হুমকি ও ভয়ভীতি দেখিয়ে আসছিলেন। সর্বশেষ গত ২১ জুলাই রাতে মোটরসাইকেলে বাড়ি ফেরার পথে পেশকারপাড়া স্লুইসগেট এলাকায় আবদুল্লাহর বাড়ির সামনে ছিকু বরফকলসংলগ্ন সড়কে পৌঁছালে তাঁর ওপর হামলা করা হয়। এ ঘটনায় নিহত ইমনের বাবা মো. হাসান বাদী হয়ে আবদুল্লাহ খানকে প্রধান আসামি করে মোট ১৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলার আসামিরা হলেন—পেশকারপাড়া এলাকার আবদুল্লাহ খান (২৭), রমজান আলী (৩০), আবদুল্লাহ আহাদ ওরফে ছোটন (২৪), ছৈয়দ

সারাদেশ-এর আরও খবর