১২ ঘণ্টায়ও নিয়ন্ত্রণে আসেনি সীতাকুণ্ডের আগুন

  বিশেষ প্রতিনিধি    12-03-2023    167
১২ ঘণ্টায়ও নিয়ন্ত্রণে আসেনি সীতাকুণ্ডের আগুন

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের ইউনিটেক্সের তুলার গুদামে লাগা আগুন এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি। আগুন নেভানোর জন্য ঘটনাস্থলের পাশে থাকা প্রায় সাতটি পুকুরের পানি শেষ হয়ে যাওয়ায় আধা কিলোমিটার দূরের দুটি পুকুর থেকে পানি এনে আগুন নেভানোর কাজ করেছে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।

ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আজ শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কুমিরা এলাকায় ‘নেমসন কনটেইনার ডিপো’র বাইরে ওই তুলার গুদামে আগুন লাগে। শুরুতেই গুদামের পাশে থাকা খালের পানি দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিট। এরপর ঘটনাস্থলের পাশে থাকা নেমসন কনটেইনার ডিপোর ভেতরে জলাধার থেকে পানি ব্যবহার করা হয়। এই দুটি জলাধারের পানি শেষ হয়ে যাওয়ায় পার্শ্ববর্তী হিঙ্গুরীপাড়ার প্রায় ছোটবড় সাতটি পুকুরের পানি এনে আগুন নিভানোর কাজে ব্যবহার করা হয়। বর্তমানে ফায়ার সার্ভিসের আটটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ করছে।

স্থানীয় মেম্বার মো. রফিক আমাদের সময়কে বলেন, ‘এসএল গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা লোকমানের মালিকানাধীন গুদামটি ইউনিটেক্স লিমিটেড ভাড়া নেয়। তাদের নিজস্ব সুতা তৈরির কারখানার জন্য সেখানে অনেক তুলা মজুত করা ছিল।’

কুমিরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোরশেদ হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘কারখানাটি এসএল স্টিলের মালিক গুদাম হিসেবে ব্যবহার করেন। তিনি এটি গুদাম হিসেবে ব্যবহার করলেও এর জন্য পরিষদ থেকে ট্রেড লাইসেন্স কিংবা কোনো ধরনের অনুমতি নেননি। ইতোমধ্যে তিনি ইউনিটেক্স স্প্রিং টেক্সটাইল মিলের কাছে ভাড়া দেন।’

এসএল স্টিলের হিসাব কর্মকর্তা মো. মামুন বলেন, ‘গুদামটি বর্তমানে ইউনিট্যাক্সের কাছে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। এটি তারাই তুলার গুদাম হিসেবে ব্যবহার করছেন। তাই আমাদের ট্রেড লাইসেন্স কিংবা অনুমতি নেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই।’

ফায়ার সার্ভিস চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক আবদুল হালিম বলেন, ‘এমনিতে তুলা দাহ্য পদার্থ। তুলায় আগুন লাগলে মুহূর্তে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। তার ওপর পানির সংকট, পানির সংকুলান করতে তারা দুর্ঘটনাস্থলের আশপাশের অন্তত আধা কিলোমিটার দূরে থাকা দুটি পুকুর থেকে পানি আনছেন। পর্যাপ্ত পানি না থাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে দীর্ঘ সময় লাগছে। এখন আগুনের তীব্রতা আগের থেকে অনেক কমেছে, তুলাগুলো গাইড বাধা তাই আগুন নিভতে সময় লাগছে।’

কুমিরা ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ বলেন, ‘খালে অল্প পরিমাণ পানি ছিল। পানির পাম্প লাগানোর কিছুক্ষণের মধ্যে পানি কমে যায়। পরে তারা একাধিক স্থানে পাম্প নিয়ে গিয়ে পানি ছিটানো হয়। একইসঙ্গে গ্রামের অনেক পুকুরেও পাইপ লাগানো হয়। বর্তমানে দুটি উৎস থেকে আগুন নেভাতে পানির জোগান দেওয়া হচ্ছে। যা দিয়ে আরও কিছুক্ষণ কাজ করা যাবে। তবে কতক্ষণে আগুন নিয়ন্ত্রণ আনা সম্ভব হবে তা বলা যাচ্ছে না। তবে এ ঘটনায় এখনো পর্যন্ত কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।’

সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘এমনিতেই অতিরিক্ত তাপে তুলায় আগুন ধরার আশঙ্কা থাকে। তার ওপর গুদামটি সাধারণ টিন দিয়ে করা। এখন শোনা যাচ্ছে সেখানে ওয়েল্ডিংয়ের কাজ করার কারণে এতো বড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এখানে সংশ্লিষ্টদের গাফিলতি রয়েছে।’

সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘গুদামটির মালিক এসএল স্টিল করপোরেশনের মালিক লোকমান হোসেন। তিনি গুদামটি ভাড়া দিয়েছেন ইউনিটেক্স স্পিনিং লিমিটেড নামে একটি সুতা তৈরির কারখানা কর্তৃপক্ষের কাছে। তুলাগুলো বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়েছে। তুলা যেখানে গুদামজাত করা ছিল তার পাশেই ওয়েল্ডিংয়ের কাজ করছিল। সেখানে ওয়েল্ডিংয়ের আগুনের উড়ে এসে তুলার মধ্যে পড়ে। এতে আগুন ধরে যায়। বিষয়টি আরও বিস্তারিত জানার চেষ্টা চলছে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউনিটেক্স গ্রুপের পরিচালক (স্টেইট) ফারহান আহমেদ বলেন, ‘এখনি কিছু বলতে পারছি না। আমরা সংবাদ সম্মেলন করব। আপনারা আমাদের সহযোগিতা করবেন।’

সারাদেশ-এর আরও খবর