কক্সবাজারে দেশের ৩৫ মেয়রের অংশগ্রহণে তৃতীয় মেয়র সম্মেলন শুরু; তামাকমুক্ত স্বাস্থ্যসম্মত নগরী গড়ার প্রত্যয়

  বিশেষ প্রতিনিধি    22-07-2023    90
কক্সবাজারে দেশের ৩৫ মেয়রের অংশগ্রহণে তৃতীয় মেয়র সম্মেলন শুরু; তামাকমুক্ত স্বাস্থ্যসম্মত নগরী গড়ার প্রত্যয়

অসংক্রামক রোগ এবং তামাকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে সব সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে নিজেদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার উপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা অনুযায়ী ২০৪০ সালের মধ্যে দেশকে তামাকমুক্ত করার লক্ষ্যে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছেন মেয়র এলায়েন্স ফর হেলদি সিটিজ’র নেতৃবৃন্দ।

শুক্রবার সন্ধ্যায় কক্সবাজারের একটি তারকা মানের হোটেলে শুরু হওয়া দুইদিন ব্যাপী তৃতীয় বাংলাদেশ মেয়র সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন তারা।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশসহ এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের ৩৫ জন মেয়রসহ ১০০ জন বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন।

তামাকমুক্ত স্বাস্থ্যসম্মত নগরী গড়ার কর্মপরিকল্পনা তৈরির লক্ষ্যে কক্সবাজারে তৃতীয়বারের মতো আয়োজন করা হয় দুই দিনব্যাপী তৃতীয় এই মেয়র সম্মেলনের।

বাংলাদেশ মেয়র সামিট-এর চেয়ারম্যান ও কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের বিভিন্ন দেশের মেয়রগণের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য “ইউনাইটেড এফোর্স ফর হেলদী সিটিজ”।

সম্মেলনে বক্তারা বলেন, দেশের মোট মৃত্যুর ৬৭% অসংক্রামক রোগে এবং এই মৃত্যুর প্রায় ২২% অকাল মৃত্যু। অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত হলে মানুষ দীর্ঘমেয়াদে ভোগে, যা ব্যক্তি, পরিবারকে শারীরিক ও অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। বাংলাদেশে ৩৫.৩% বা তথা ৩ কোটি ৭৮ লক্ষ মানুষ তামাক ব্যবহার করে। বাংলাদেশে বছরে এক লক্ষ ৬১ হাজারের অধিক মানুষ তামাকজনিত বিভিন্ন রোগে মারা যায়। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তাদের চিকিৎসা ও অকালমৃত্যুর কারণে ৩০ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়।

এসময় তারা আরও বলেন, বাংলাদেশ সরকার আগামী ২০৪০ সালের মধ্যে দেশকে তামাকমুক্ত করার ঘোষণা প্রদান করেছে। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে সরকার ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০০৫ বাস্তবায়ন করছে। স্থানীয় সরকার বিভাগ কর্তৃক স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন নির্দেশিকা প্রণয়ন করেছে। তামাক নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে সরকারের হাতকে শক্তিশালী করা স্থানীয় সরকারের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব। সরকার তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের লক্ষ্যে যে উদ্যোগ গ্রহণ করছে, তারা সুবিধা সম্পর্কেও জনগণকে সচেতন করার আহ্বান জানানো হয়।

নগর পরিকল্পনার মাধ্যমে অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে মেয়রগণকে পরিকল্পনা বাজেট বরাদ্দ, ধূমপানমুক্ত স্থান সৃষ্টি, তামাক বিক্রয়ে লাইসেন্সিং, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও স্বাস্থ্য বিভাগের ১০০ মিটারের মধ্যে তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয় নিষিদ্ধ করা, হাঁটা, সাইকেল চালানো ব্যবস্থা করা, মানসিক ও শারীরিক সুস্থতার জন্য পার্ক ও উন্মুক্ত স্থানের ব্যবস্থা করা জরুরি।

কক্সবাজার পৌরসভা, দ্য ইউনিয়ন, ভাইটাল স্ট্যাট্রেজিস, দ্য এশিয়া প্যাসিফিক সিটিজ অ্যালায়েন্স ফর হেলদি অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট (এপিসিএটি), মেয়র এলায়েন্স ফর হেলদি সিটিজ, এইড ফাউন্ডেশন ও ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি কর্তৃক যৌথভাবে আয়োজিত এ সম্মেলনের প্রথম দিনে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোঃ আনোয়ার হোসেন হাওলাদার।

এছাড়া স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব জসিম উদ্দিন, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহম্মদ শাহীন ইমরান, পুলিশ সুপার মাহফুজুল ইসলাম, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কক্সবাজার সাব অফিসের প্রধান ডা. জর্জ মার্টিনেজ, বাংলাদেশের মেডিকেল অফিসার (এনসিডি) ডা. সাধনা ভাগওয়াত, দ্য ইউনিয়নের এশিয়া প্যাসিফিকের রিজিওনাল ডিরেক্টর তারা সিং বাম, সাভার পৌরসভার মেয়র হাজী আবদুল গণি কো-চেয়ারম্যান এবং ধামরাই পৌরসভার মেয়র গোলাম কবির প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য দেন কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র ও বাংলাদেশ মেয়র অ্যালায়েন্স ফর হেলথ সিটিজ চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান।

এর আগে ২০২১ সালের জানুয়ারিতে স্থানীয় সরকার বিভাগ কর্তৃক ‘স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন নির্দেশিকা’ নামে একটি নির্দেশিকা প্রকাশ করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের বিভিন্ন সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভার মেয়ররা অসংক্রামক রোগ ও তামাক নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন সময়ে কর্মসূচি পালন ও যথাযথ ভূমিকা পালন করছেন।

প্রসঙ্গত: ‘এশিয়ান প্যাসিফিক সিটিজ এলায়েন্স ফর হেলথ্ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট-এপিকেট’ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন শহরে মেয়রদের নিয়ে এ ধরনের সম্মেলনের আয়োজন করে থাকে। এরকম একটি সম্মেলন ২০১৮ সালে সিঙ্গাপুরেও অনুষ্ঠিত হয়।

সারাদেশ-এর আরও খবর