তহবিলসংকট: রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তা কমাচ্ছে জাতিসংঘ

  বিশেষ প্রতিনিধি    09-05-2023    94
তহবিলসংকট: রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তা কমাচ্ছে জাতিসংঘ

তহবিলসংকটের কারণে আগামী মাস (জুন) থেকেই বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তা কমাতে যাচ্ছে জাতিসংঘ। এর ফলে রোহিঙ্গাদের মাথাপিছু মাসিক খাদ্য সহায়তা দাঁড়াবে ৮৪০ টাকায়। বর্তমানে রোহিঙ্গারা মাসে এক হাজার ৫০ টাকা করে খাদ্য সহায়তা পেয়ে থাকে। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডাব্লিউএফপি) এরই মধ্যে রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে খাদ্য সহায়তা কমানোর বার্তা দিয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, বিশ্ববাজারে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি তহবিল ঘাটতির কারণে ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর কাছে খাদ্য সরবরাহ করতে হিমশিম খাচ্ছে জাতিসংঘ। তহবিল ঘাটতির কারণে ফিলিস্তিন, ইরাক, সিরিয়া, আফগানিস্তানসহ বিভিন্ন দেশে ডাব্লিউএফপি খাদ্য সহায়তা কাটছাঁট করছে।

ডাব্লিউএফপির তথ্য অনুযায়ী, সংঘাত, অর্থনৈতিক ধাক্কা, বিরূপ জলবায়ু এবং সারের দাম বৃদ্ধির ফলে খাদ্যসংকট নজিরবিহীন আকার ধারণ করেছে। বর্তমান বিশ্বে ৮২ কোটি ৮০ লাখ মানুষ তাদের পরের বেলার খাবার কোথা থেকে আসবে সে বিষয় নিশ্চিত নয়।

ডাব্লিউএফপির তথ্য অনুযায়ী, সংঘাত ক্ষুধা বাড়াচ্ছে। বর্তমান বিশ্বে ক্ষুধার্ত জনগোষ্ঠীর ৭০ শতাংশের বসবাস যুদ্ধ ও সংঘাতময় এলাকায়। অন্যদিকে খাবারের খরচ সর্বকালের সর্বোচ্চ। বর্তমানে ডাব্লিউএফপির মাসিক পরিচালনা ব্যয় সাত কোটি ৩৬ লাখ ডলার। এটি ২০১৯ সালের চেয়ে ৪৪ শতাংশ বেশি। আগে থেকে ক্ষুধার্তের তালিকায় থাকা ৪০ লাখ মানুষের খাবার জোগান দিতে ওই বাড়তি অর্থ ব্যয় হচ্ছে। ক্ষুধার্তের তালিকায় নতুন করে যোগ হওয়া আরো মানুষের খাবার জোগান দিতে মাথাপিছু সহায়তার পরিমাণ কমাতে হচ্ছে ডাব্লিউএফপিকে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত মাসে জাপান সফরকালে এনএইচকে টেলিভিশনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, জ্বালানি ও খাদ্যের খরচ বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শিবির চালানো কঠিন হয়ে পড়ছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের জাতিসংঘ খাদ্য সহায়তা দিচ্ছে। সেই সহায়তা কাটছাঁট হলে এর প্রভাব বাংলাদেশের ওপর পড়তে পারে।

তহবিলসংকটের কারণে জাতিসংঘ গত মার্চে রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তা ১৭ শতাংশ কমিয়েছে। মিয়ানমারে মানবাধিকার পরিস্থিতি বিষয়ক জাতিসংঘের স্পেশাল র‌্যাপোর্টিয়ার টম অ্যান্ড্রুজ গত ২৮ এপ্রিল সতর্ক করেছিলেন, তহবিল না পেলে আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে নতুন করে আরো ২০ শতাংশ খাদ্য সহায়তা কমাতে হবে। এটিই আগামী জুন থেকে বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে।

কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির থেকে রোহিঙ্গা অধিকার কর্মী সাদেক হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, তাঁরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ডাব্লিউএফপির খাদ্য সহায়তা কমানোর বার্তা পেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এই খাদ্য সহায়তা কমার প্রভাব হবে খুবই ভয়াবহ। ৮৪০ টাকার খাবারে একজন মানুষ কিভাবে এক মাস চলতে পারে?

’ তিনি আরো বলেন, এ দেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গার জীবিকার সুযোগ নেই। তারা পুরোপুরি জাতিসংঘের খাদ্য সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। তিনি খাদ্য সহায়তা কাটছাঁটের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও জাতিসংঘের প্রতি আহবান জানান।

সারাদেশ-এর আরও খবর