কৃষি জমির টপ সয়েল বিক্রির মহোৎসব চলছে কুতুবদিয়ায়

  বিশেষ প্রতিনিধি    30-03-2023    172
কৃষি জমির টপ সয়েল বিক্রির মহোৎসব চলছে কুতুবদিয়ায়

কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায় কৃষি জমির টপ সয়েল বিক্রির মহোৎসব চলছে। দ্বীপের দক্ষিণ ধুরুং, কৈয়ারবিল, বড়ঘোপ,আলী আকবর ডেইল ও লেমশীখালী ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন বিক্রি হচ্ছে উর্বর কৃষি জমির টপ সয়েল। তবে কৈয়ারবিল ইউনিয়নের বিভিন্ন কৃষি জমি থেকে সবচেয়ে বেশি টপসয়েল বিক্রি হয় বলে জানা গেছে। আবাদি জমির ওপরাংশের উর্বর মাটি প্রতিদিন প্রকাশ্যে বিক্রি হলেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন নিরব ভূমিকা পালন করছে। ফলে দ্বীপে ফসলি জমির উর্বরতা দিনদিন হ্রাস পাচ্ছে। জমির শ্রেণির পরিবর্তন হচ্ছে নিয়মিত।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এক শ্রেণির ভূমির মালিক টাকার লোভে সরকারি আইন ভঙ্গ করে প্রতিদিন জমির টপ সয়েল বিক্রি করছে। বিক্রি হওয়া এসব মাটি চলে যাচ্ছে পরিবেশ বিধ্বংসী পাশ্ববর্তী ইট ভাটায়। মানুষের বসত ভিটা ভরাটের জন্যও ব্যবহার হচ্ছে কৃষি জমির টপ সয়েল। প্রশাসনের নাকের ডগায় উর্বর কৃষি জমির টপ সয়েল বিক্রি করে জমির শ্রেণি পরিবর্তন নিত্যনৈমত্তিক ঘটনা। প্রশাসন কোন ধরনের কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় বিক্রেতারা আরও উৎসাহিত হচ্ছে বলে ধারণা সচেতন মহলের।

সরেজমিন দেখা গেছে, দক্ষিণ ধুরুং দরবার রাস্তার মাথার পশ্চিম-দক্ষিণ পাশের যে আবাদি জমি রয়েছে সেখান থেকে টপ সয়েল বিক্রি হয়েছে সবচেয়ে বেশি। মাটি বিক্রির ফলে এসব কৃষি জমি সাধারণ জমি থেকে দুই তিনি ফুট নিচু হয়ে পড়েছে। চাষাবাদে নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন সাধারণ কৃষক। কমছে ফসলের কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন।

পাশ্ববর্তী জমির মালিকরা জানিয়েছেন, জমিতে পানি ধরে রাখতে না পারার কারণে বাধ্য হয়ে তাদেরকেও নাম মাত্র দামে টপ সয়েল বিক্রি করে পাশ্ববর্তী জমির সমান করতে হচ্ছে।

কৃষিজমির টপ সয়েল পরিবহনকারী ট্রলি ও লাল গাড়ির চালকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, স্থানভেদে প্রতি চল্লিশ শতক জমির টপ সয়েল ৪০ থেকে ৬০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। যা গ্রাহক পর্যায়ে প্রতি ট্রলি ৬শ থেকে ৮শ টাকায় খুচরা বিক্রি হয়।

নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক কৈয়ারবিল এলাকার এক টপ সয়েল বিক্রেতা জানিয়েছেন, এক শ্রেণির লোভী জমি মালিকদের কারনে বাধ্য হয়ে প্রতিবছর জমি থেকে টপসয়েল বিক্রি করতে হচ্ছে। প্রতি চল্লিশ শতক জমির টপ সয়েল বিক্রি হয় ৬০ হাজার টাকায়। ক্রেতারা জমির মালিকের কাছ থেকে মাটি কিনে ট্রলি প্রতি ৬শ থেকে ৭শ টাকায় বিক্রি করেন।

কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক স্থানীয় বাসিন্দা খোরশেদ আলম জানান, ফসলি জমির টপ সয়েল থেকে প্রতিবছর ইটভাটার মাটি যোগান দিতে জমির শ্রেণি বদল করে ফেলছেন অনেকে। জমির মালিকেরা মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে টপ সয়েল বিক্রি করছে। এতে জমি উর্বরতা হারাচ্ছে। জমি পতিত জমিতে পরিণত হচ্ছে। ইট ভাটার মাটির জন্য পাশে তৈরি করা হয়েছে বিশাল বিশাল পুকুর। আর এসব পুকুরে পড়ে প্রতিদিন মৃত্যু হচ্ছে শিশুদের। এলাকার স্বার্থে ইটভাটাটি চিরতরে বন্ধ করে দেয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি। কারন এভাবে চলতে থাকলে খাদ্য উৎপাদনে মারাত্মক সংকট দেখা দেয়ার পাশাপাশি কুতুবদিয়া দ্বীপটির উচ্চতা সমুদ্র লেবেলের নিচে চলে যাবে বলে আশঙ্কা।

টপ সয়েল বিক্রিসহ দ্বীপের ইকোসিস্টেম ধ্বংসের বিষয়র সেভ দ্যা নেচার অব বাংলাদেশ এর চেয়ারম্যান আ,ন,ম মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, কুতুবদিয়াতে পূর্বেও ধান ক্ষেত কে লবন মাঠে রুপান্তর এবং উর্বর কৃষি জমির টপ সয়েল বিক্রি, প্রশাসন ও রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় হাজার হাজার একর ম্যানগ্রোভ বনকে চিংড়ী ঘের ও লবন মাঠে রুপান্তর করলেও উপজেলা প্রশাসন কৃষি জমির শ্রেনী পরিবর্তনে যেমন কোন পদক্ষেপ নেয়নি তেমনি, উপকূলীয় বন বিভাগ বা জেলা প্রশাসন এক ইঞ্চি জমিও উদ্ধার করতে পারেনি।

দ্বীপের ইকোসিস্টেম নষ্ট হবার কারনে বেশ কয়েকটি এলাকায় ভাঙ্গন ও সাগর গর্ভে বিলীন হবার কারনে পূর্নিমার জোয়ারে বার বার তলিয়ে যাচ্ছে দ্বীপটি। পুরনো বাতিঘর সহ বিস্তীর্ণ অঞ্চল ইতিমধ্যে সাগরে হারিয়ে গেছে, এভাবে চলতে থাকলে শিঘ্রই বাংলাদেশের বিশাল একটি ভূখন্ড সাগরে হারাবে তা নিশ্চিত।

সারাদেশ-এর আরও খবর