আর্জেন্টিনা ব্রাজিলের পতাকার রঙে রাঙালো রাঙামাটির তিন সেতু

  বিশেষ প্রতিনিধি    13-11-2022    157
আর্জেন্টিনা ব্রাজিলের পতাকার রঙে রাঙালো রাঙামাটির তিন সেতু

আগামী ২০ নভেম্বর থেকে কাতারে শুরু হচ্ছে বিশ্ব ফুটবল মহারণ। ৩২ দলের বিশ্বকাপে বাংলাদেশ না থাকলেও সমর্থনের দিক থেকে বাংলাদেশ অংশগ্রহণকারীর দলগুলোর চেয়েও কম যায় না। ফুটবলপ্রিয় এই জাতির বেশিরভাগ মানুষ আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল দুই শিবিরে বিভক্ত হয়ে মুহূর্তেই বাক্যবাণে জড়িয়ে পড়ে। অনেকেই প্রিয় দলকে সমর্থন জানিয়ে ছাদে পতাকা কিংবা পুরো ভবনটিই প্রিয় দলের পতাকার রঙে আঁকিয়ে তুললে রাঙামাটিতে ঘটেছে এরচেয়ে ব্যক্তিক্রম। শহরের দুইটি সেতুর রাঙানো হয়েছে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের পতাকার রঙে। যার কারণে সেতু দুইটি পরিচিতি পেয়েছে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল সেতু নামে। আর এখানেও সেতু নিয়ে যথারীতি বিভক্ত সমর্থকরা।

শহরের কাছেই দুইটি সেতু। একটি সেতু ব্রাহ্মণটিলা এলাকার ওপর দিয়ে নির্মিত হয়েছে। কিন্তু সেতুটির তৈরি করার পর এর রং আকাশি সাদার কারণে এটি আর্জেন্টিনা সেতু হিসেবে পরিচিতি পায়। শহরের মানুষ সেতুটিকে আর্জেন্টিনা সেতু হিসেবে এক নামেই চিনে। বিকেল হলেই নানান বয়সী ছেলেমেয়েদের আড্ডায় প্রাণবন্ত হয়ে সেতুর পুরো অংশ। পরবর্তীতে শহরের ওয়াই আকৃতির পুরান পাড়া ও ঝুলিক্যা পাহাড় সংযোগ সেতুটিও করা হয়েছে আকাশি আর সাদা রঙের। যার কারণে সেটিও আর্জেন্টিনা সেতু নামে পরিচিতি পেয়েছে।

এদিকে কম যায় না ব্রাজিল সমর্থকরাও। আর্জেন্টিনা সেতুর নামকরণের পর থেকে শহরের আসাম সেতুটি ব্রাজিলের পতাকার রঙকরণে অনেক ব্রাজিল সমর্থকই দাবি তুলতে থাকেন। এক পর্যায়ে পৌরসভা থেকে সেতুটি হলুদ-সবুজ রঙে রাঙিয়ে দেয়। এরপর থেকে আসামবস্তির এই সেতুটিও ব্রাজিল সেতুর তকমা পেয়ে যায়।

এদিকে দুই সেতুর রং ও নামকরণ নিয়ে সমর্থকদের মধ্যে যেমন রয়েছে আনন্দ-উচ্ছ্বাস, তেমনি একে-অন্যের সেতু নিয়ে টিপ্পনি কাটতেও ভুল করেন না। ব্রাজিলের সমর্থরা বলছেন, সেতুর রং আকাশি-নীল করতে হবে এমন তো কোনও বাধ্যবাধকতা নেই, তারপরও আকাশি-নীল করার মাধ্যমে আর্জেন্টিনা সমর্থকদের বাড়তি সুবিধা দেয়া হচ্ছে। বিপরীত দিকে আসামবস্তি সেতু হলুদ-সবুজে রংয়ের আস্তর পড়ায় একে ষড়যন্ত্র হিসেবেও দেখছে আর্জেন্টিনা সমর্থকরা।

আর্জেন্টিনা সমর্থক সৈকত রঞ্জন চৌধুরী বলেন, আর্জেন্টিনার পতাকার রঙেই তো রাঙামাটির ব্রিজগুলোর রঙ করা হচ্ছে। আর রাঙামাটিতে আর্জেন্টিনার সমর্থক বেশি। তার মাঝে যে ব্রাজিলের পতাকার রঙে আসামবস্তি ব্রিজটি করা হলো সেটা কোন ভাবেই মেনে নেয়া যায় না।

আর্জেন্টিনার আর এক সমর্থক জিয়াউল হক বলেন, রাঙামাটির সেতুগুলো আকাশি আর সাদা রঙ করা হচ্ছে সেটা ভালো দিক। এখানে আর্জেন্টিনার সমর্থক বেশি আর আর্জেন্টিনা এবার বিশ্বকাপে ভালো খেলবে এবং বিশ্বকাপ জয়ী হবে আশা করছি।

আর এক আর্জেন্টিনা সমর্থক রাজিব দাশ মুন্না বলেন, রাঙামাটির নতুন সেতুগুলো আর্জেন্টিনার পতাকার রঙে যে হচ্ছে এতে আমরা খুশি এবং রাঙামাটির জনপ্রিয় আসামবস্তি সেতুটি ব্রাজিলের পতাকার রঙের সাথে মিল রেখে রং করায় আমরা হতাস হয়েছি।

ব্রাজিল সমর্থক শংকর হোড় বলেন, রাঙামাটির সবচেয়ে জনপ্রিয় সেতুটি আসন্ন ফুটবল বিশ^কাপকে কেন্দ্র করে ব্রাজিলের পতাকার রঙে রং করায় আমরা খুবই খুশি। ব্রাজিল বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় একটা দল তার জনপ্রিয়তা ধরে রেখে প্রিয় দলটি এবার বিশ্বকাপ জয় করবে বলে আশারাখি।

ব্রাজিল সমর্থক সুমন দাশ বলেন, রাঙামাটি শহরের কয়েকটা সেতু আর্জেন্টির পতাকার রঙের সাথে মিল রেখে রঙ করা হয়েছে এটা তাদের ভুল ধারণা। কারণ দেশের এখন অনেক সেতুই রঙের স্থায়ীত্ব বাড়ানোর জন্য এই রঙে করা হচ্ছে। আর আর্জেন্টিনা সমর্থকরা আর্জেন্টিনা ব্রিজ বলে লাফাচ্ছে এটা দুঃখ জনক।

পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তুষিত চাকমা জানান, আমরা আসলে আকাশি আর সাদা রঙ দিয়েছি সেতুর সৌন্দর্য্য বাড়ানোর জন্য। অনেকে মনে করছে আর্জেন্টিনার পতাকার রঙে করা হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড আর্জেন্টিনার সমর্থক। আসলে তা নয়। আমরা ভবিষ্যৎতে সেতু করলে সাধারণ ফুটবল প্রেমিদের চাহিদা মাথায় রেখে ব্রিজের রং করবো যাতে সকলে খুশি থাকে।

রাঙামাটির পৌর মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী বলেন, সাধারণ ফুটবল প্রেমিদের চাহিদার কারণে আমরা আসামবস্তি সেতুটি ব্রাজিলের পতাকার রঙের সাথে মিল রেখে রঙ করে দিয়েছি। শহরের কয়েকটা সেতুর রঙ আর্জেন্টিনার পতাকার রঙের সাথে মিলে যাওয়ায় সেগুলো আর্জেন্টিনা ব্রিজ নামে পরিচিতি পেয়েছে। এতে ব্রাজিল সমর্থকদের দাবির প্রেক্ষিতে আসামবস্তি সেতুটি হলুদ সবুজ রং করা হয়। এতে আবার আমি আর্জেন্টিনা ছেড়ে ব্রাজিল সমর্থক কোন ভাবেই হইনি।

সারাদেশ-এর আরও খবর