লাল ঢেঁড়স চাষে সফল আজাদুল

  বিশেষ প্রতিনিধি    12-09-2022    131
লাল ঢেঁড়স চাষে সফল আজাদুল

সৌখিন কৃষক আজাদুল হক। মৌসুম অনুযায়ী সারা বছরই তিনি বাণিজ্যিকভাবে নিজের জমিতে লাউ, বেগুন, তরমুজ, শাম্মাম, বরবটি, করলাসহ নানা ধরনরে ফল ও সবজি আবাদ করছেন। তবে তিনি এক এক সময় নতুন নতুন জাতের সবজি ও ফল চাষে এলাকায় নতুন দিগন্ত সৃষ্টি করছেন। এবারও প্রথমবারের মতো লাল রঙের ঢেঁড়স চাষ করে এলাকায় এক প্রকার বাজিমাত করেছেন তিনি। কোনো প্রকার রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার না করে শুধু জৈব সার প্রয়োগের মাধ্যমে তিনি লাল রঙের ঢেঁড়স চাষ করছেন। অন্য সবুজ জাতের সবজির চেয়ে তিনি এ চাষে সময় ও তুলনামূলক খরচ কম হওয়ায় দ্বিগুন লাভের আশা করছেন। স্থানীয় বাজারে এর ভালো চাহিদা থাকা ও বিক্রিতে ভালো দাম পাওয়ায় তিনি বেজায় খুশি। কৃষক আজাদুল হক ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার মোগড়া ইউনিয়নের বাউতলা গ্রামরে মৃত আব্দুল আলিম মিয়ার ছেলে। এদিকে কৃষক আজাদুল হকের এই ব্যতিক্রমি লাল রঙের ঢেঁড়সের সৌন্দর্য দেখতে ইতিমধ্যে প্রতিদিন স্থানীয়দের পাশাপাশি বিভিন্ন জায়গা থেকে অনেক লোকজন এসে ভিড় করছেন। তাছাড়া বেকার যুবকরা এ চাষে আগ্রহী হয়ে তার কাছ থেকে পরামর্শ নিচ্ছেন। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চারদিকে সবুজ সমারোহ। মাঝখানে লাল রঙের ঢেঁড়স। সবুজ জমিতে লাল রঙরে এ সব সবজি দেখে আসা লোকদের নজর কাড়ছে। পাশাপাশি রয়েছে সাদা রঙের বরবটি ও করলা। সকাল বিকাল জমিতে পরিচর্যা ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক আজাদুল হক। কৃষক আজাদুল হক বলেন, দীর্ঘ ১৫ বছর তিনি প্রবাসে ছিলেন। গত ৪ প্রায় বছর আগে সেখান থেকে তিনি একেবারে দেশে চলে আসেন। এরপর তিনি অনেকটাই যেন বেকার হয়ে পড়েন। বেকারত্ব গুছাতে চেষ্টা করেন কিছু একটা করতে। এরইমধ্যে ইউটিউব দেখে কৃষির প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়। উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে পরীক্ষামূলক ৪০ শতাংশ জায়গার মধ্যে লাউ-বেগুন দিয়ে সবজি চাষ শুরু করেন। এতে সবজি চাষে শুরুতেই এক অভাবনীয় সাফল্য পান। প্রথম বছর সবজি চাষে খরচ বাদে প্রায় ৪০ হাজার টাকা আয় হয়। এরপর তার আগ্রহ কয়েকগুন বেড়ে যায়। পাশাপাশি জমির পরিমানও বাড়তে থাকে। এখন তিনি সারা বছরই নানা রকম সবজি ও ফল আবাদ করছেন। এ বছর তিনি কৃষিতে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে বাণিজ্যিকভাবে প্রথমবাররে মতো লাল রঙের ঢেঁড়শ চাষ করেন। সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে ৪৫ শতাংশ জমিতে তিনি তাইওয়ানের রেডকুয়িং জাতের ১৫শ ঢেঁড়স চারা লাগিয়েছেন। জমি তৈরি, চারা বীজ কেনা, আবাদসহ এতে তার প্রায় ২২ হাজার টাকা খরচ হয়। তিনি আরো বলেন, চারা লাগানোর ৪০ দিনের মাথায় গাছে ফলন আসতে শুরু করে। গত কয়েক দিন ধরে স্থানীয় বাজারে ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজিতে বিক্রি করছেন লাল ঢেঁড়স। এ পযর্ন্ত ৩ হাজার টাকার ঢেঁড়স বিক্রি করা হয়। স্থানীয় বাজারে এর কদর বেশ ভালো রয়েছে। আগামী ১ সপ্তাহের মধ্যে পুরোদমে বিক্রি শুরু হবে। এক একটি ঢেঁড়স গাছে নিচে ৩-৪ কেজি ফলন পাওয়া যাবে। যেভাবে গাছে ফলন আসছে এতে খরচ বাদ ও নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে দ্বিগুন লাভের আশা করছেন তিনি। দক্ষিণ ইউনিয়নের গাজীরবাজার এলাকার বাবুল মিয়া বলেন, সাধারণত আমরা ছোটবেলা থেকেই সবুজ রঙের ঢেঁড়স দেখে আসছি। কৃষকরা ও সবুজ রঙের ঢেঁড়স চাষ করে থাকেন। আর ওই ঢেঁড়সই সব সময় আমরা খেয়ে আসছি। কিন্তু সহসায় লাল রঙের ঢেঁড়স চোখে পড়ছে না। এই প্রথম দেখে খুবই ভালো লাগছে। কৃষক মিলন মিয়া বলেন, এই এলাকায় আজাদুল হকের আগে অন্য কেউ লাল রঙের ঢেঁড়স চাষ ইতিপূর্বে করেছে কি না জানি না। আমিও দীর্ঘ বছর ধরে নানা জাতের সবজি করছি কিন্তু এ চাষ করেনি। লাল রঙের ঢেঁড়স চাষের খবর শুনে কয়েকবার এখানে দেখতে এসেছি। উপজলো কৃষি র্কমর্কতা শাহানা বেগম বলনে, এ উপজেলার উৎপাদিত সবজিও বিভিন্ন প্রকারের ফল নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় যাচ্ছে। মিশ্র ফলন বৃদ্ধিতে সব সময় কৃষকদের সার্বিকভাবে সহায়তা করা হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, কৃষক আজাদুল হক একজন আদর্শ কৃষক। তিনি বছরজুড়ে নানা প্রকারের সবজি ও ফল চাষ করছেন। প্রথমবাররে মতো লাল রঙের ঢেঁড়স চাষে তিনি এক প্রকার চমক সৃষ্টি করেন। এখন পযর্ন্ত তার সবজির ফলন ভালো আছে। কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে তিনি অন্য সবজির চাইতে লাভবান হবেন বলে আশা করছি।

সারাদেশ-এর আরও খবর